ওল্ড কেয়ার পৌর মেয়র আলহাজ¦ মোঃ ফজলুর রহমান এর হৃদয় ভিত্তিক নান্দনিক আয়োজনঃ শুভেচ্ছা ও শুভ কামনাঃ গনতন্ত্র ও স্থানীয় সরকার প্রসঙ্গে চিন্তা ভাবনা-প্রস্তাবনা
মুজিবুর রহমান মুজিব॥ সর্ব কালের সেরা দার্শনিক ভলতেয়ার বলেন-“ আমি আপনার মতের সঙ্গে একমত না হতে পারি কিন্তু আপনার মত প্রকাশে আমার জান দিতে পারি”- পরমতের প্রতি সম্মান প্রদর্শন এর চাইতে বড় কথা ও যুক্তি সঙ্গঁত যুক্তি আমার জানা মতে এই মুহুর্তে জানা নেই। আধুনিক গনতন্দ্র ও সহিষ্ণু সমাজ ব্যবস্থার বিধি বিধান মোতাবেক পরমতের প্রতি সম্মান প্রদর্শন গনতান্ত্রিক সমাজ ব্যবস্থার সৌন্দর্য্য ও সংস্কৃতি। গনতন্ত্র-জনতন্ত্র কে সংক্ষেপে সংজ্ঞায়িত করা হয়েছে- অফদি পিপুল, ফরদি পিপুল, বাইদি পিপুল- হিসাবে। গনতন্ত্র মানে শত ফুল-হাজার ফুল। রাজনৈতিক একনায়ক তন্ত্র, স্বৈরতন্ত্র, সমরতন্ত্র, ডান্ডাতন্ত্রের বিপরীতে বিশ্বব্যাপী এখন গনতন্ত্রই গ্রহনযোগ্য শাসন ব্যবস্থা ও শাসন পদ্ধতি। ইউনিয়ন অব সোভিয়েট সসিয়েল রিপাবলিক-ইউ,এস,এস, আর (USSR) নেতা কমরেড মিখাইল গর্ভাচেভ এর পেরেস্ত্রেয়েকা ও গ্লাশনস্ত নীতি সোভিয়েত ইউনিয়নের সমাজতন্ত্রের কফিনে শেষ পেরেক টুকে দিয়েছে। রাশিয়ানদের ভদকার গ্লাস নষ্টই নয় ভেঙ্গে দিয়েছে। গনতন্ত্রের উদার হাওয়ায় সোভিয়েত ইউনিয়ন ক্রেমেলীন-লীন-বিলীন হয়ে গেছে। বিশ^ব্যাপী এখন গনতন্ত্রের উদার হাওয়া। হাওয়া-হাওয়া-এই হাওয়ায় উড়ে গেছে তাসখন্দের তাসের ঘর। মার্কসবাদি (সমাজতন্ত্রবাদের জনক কার্লমার্কস) গবেষক এবং স্বঘোষিত তাত্বিক -রাষ্ট্র চিন্তকগন অবশ্য গনতন্ত্রের এই বিজয় এবং সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্র সোভিয়েট ইউনিয়নের এই পতনকে সাময়ীক, গনতন্ত্রের -বুর্জোয়া গনতন্ত্র- সর্বহারার গনতন্ত্র এই ভিন্ন আলোকে আলোকিত সংজ্ঞায়িত করতঃ ভিন্ন মত পোষন করে থাকেন। তা-ও তারা করতেই পারেন সেটা তাদের ও গনতান্ত্রীক অধিকার, দার্শনিক ভলতেয়ারের ভাষায় আমরা ভিন্ন মতাবলম্বীদের মতবাদ এর সঙ্গে একমত পোষণ না করতে পারি, দার্শনিক ভলতেয়ার তাঁর ভিন্ন মতালম্বীর মত প্রকাশে প্রাণ বলিদানের কথা ঘোষনা করেছিলেন, আমরা আমাদের জান দিতে না পারি ভিন্নমত প্রকাশ ও পোষনকারীদের মত প্রকাশে সহযোগিতা করতে পারি, কমছে কম নিদেন পক্ষে ভিন্ন মত প্রকাশ কারিদের মত প্রকাশে বিরোধীতা কিংবা বাধা-বিপত্তি যেন না করি, এটাই উদার গনতান্ত্রীক সংষ্কৃতি ও সৌন্দর্য্য।
পাকিস্তানী ঔপনিবেষিক শাসন আমলে পাক বাংলায় গনতন্ত্র, পূর্ণ গনতন্ত্র চালু ছিল না। পাকিস্তানের গনধিকৃত প্রাষাদ ষঢ়যন্ত্রী-কুচক্রী শাসক চক্র-ক্ষমতালিপ্সু সামরীক জান্টা ও উচ্চাভিলাসী আমলা তন্ত্র পাকিস্তানে গনতন্ত্র ও আইনের শাসন কে ‘বুটস্থ’ ও পকেটস্থ করে রাখেন। পাক ফৌজি প্রেসিডেন্ট স্ব-ঘোষিত ফিল্ড মার্শাল আয়ুব খান বন্দুকের নলের জোরে ক্ষমতা দখল করে রাষ্ট্রের ক্ষমতা নিরঙ্কুশ করার জন্য ছাপ্পান্ন সালের পাক সংবিধান বাতিল করে বাষট্টি সালে প্রেসিডেন্সিয়াল ফর্ম অব গভর্নমেন্ট পদ্ধতির সরকার ব্যবস্থা চালু করে দেশে তথা কথিত মৌলিক গন্ত্র -বেসিক ডেমোক্রেসি সিস্টেম শুরু করেন। মানুষের ভোটাধিকার হরন করে পাক সরকার আশি হাজার মৌলিক গনতন্ত্রী- বেসিক ডেমোক্রেটস –বি-ডি মেম্বার প্রথা চালু করেন। বিডি মেম্বার হিসাবে পরিচিত এই সব মেম্বারকে সর্ব সাধারন হাস্য রস করে বলতেন বগডুল মেম্বার। সাধারন নাগরিক ভোট দিয়ে বিডি মেম্বার বানাতেন আর এসব বি ডি মেম্বারগন ইউ,পি চেয়ারম্যান এম.পি. এ,এম.এন.এ পদে ভোট দিতেন। সমগ্র দেশ জাতি এক লোক –এক ভোট এর আন্দোলন করে আন্দোলন সংগ্রামের ফল ও ফসল সত্তোর সালের সাধারন নির্বাচন এবং বঙ্গঁবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এর নেতৃত্বাধীন আওয়ামীলীগের নিরংকুশ বিজয়। আরেক পাক ফৌজি প্রেসিডেন্ট লেঃ জেনারেল এ.এম.ইয়াহিয়া খানের সরকার নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর না করে একাত্তোরের পচিশে মার্চ বাংলা ও বাঙ্গালিদের বিরুদ্ধে অঘোষিত যুদ্ধ ঘোষনা করে পাক সামরীক জান্টা। শুরু হয় মুক্তিযুদ্ধ। একাত্তোরের মহান মুক্তিযুদ্ধে বিজয় এবং স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যূদ্যয়ে দেশের নাগরিকদের ভোটাধিকার নিশ্চিত হয়। বাহাত্তোরের সংবিধানে নাগরিকদের মৌলিক অধিকার- মানবাধিকার নিশ্চিত হয়। দেশে চালু হয় পূর্ণ গনতন্ত্র সংসদীয় পদ্ধতির গনতন্ত্র।
শতাব্দীর গৌরবময় অতীত ঐতিহ্যে লালিত মৌলভীবাজার জেলা। ১৮৮২ সালে তৎকালীন বৃটিশ সরকার তাদের প্রশাসনিক প্রয়োজনে সিলেটের দক্ষিনাঞ্চল নিয়ে South Sylhet subdivision নামে একটি মহকুমা গঠন করেন। মহকুমা প্রশাসক এম.এ ছাত্তার (পরে ডক্টর। সচিব। মরহুম) এর কার্য্যকালে এই জনপদ -মৌলভীবাজার- মহকুমা নামধারন করে। অষ্টাদশ শতাব্দীতে মৌলভী সৈয়দ কুদরত উল্লাহ মুন্সেফ সাহেব নিজ জমিদারি গবিন্দশ্রী এলাকায় একটি বাজার প্রতিষ্টা করেছিলেন। সম্ভ্রান্ত ও শিক্ষিত মৌলভী সাহেব প্রতিষ্টিত বাজারটি কালক্রমে -মৌলভীবাজার- নামধারন করে। নব গঠিত মহকুমার প্রশাসনিক কার্য্যক্রম শুরু হয়েছিল মৌলভী সৈয়দ কুদরত উল্লাহ প্রতিষ্টিত বাজার কে কেন্দ্র করে। ১৯৮২ সালে এই মহকুমার শতবর্ষ পূর্তি উৎসব উদযাপন করেন। অধ্যাপক শাহজাহান হাফিজ, মুজিবুর রহমান মুজিব (এই লেখক) এবং সৈয়দ জয়নাল আবেদীন এর সম্পাদনয় বের হয়েছিল শতবর্ষ পূর্তি স্মারক সংকলন-শতাব্দী।
মৌলভীবাজার পৌরসভা দেশের একটি অন্যতম প্রাচীন পৌরসভা। টাউন কমিটি থেকে আজকের মৌলভীবাজার পৌরসভা। ত্রয়োদশ শতাব্দীর খ্যাতিমান পীরে কামেল হযরত শাহ মোস্তফা বোগদাদী (র) এই পৌর এলাকায় চীর শয়ানে শায়িত। এই পীরে কামেলের নামে এই পৌর এলাকায় একটি কলেজ একটি রাস্তা এবং একটি স্কোয়ার আছে। পাকিস্তানী আমলে বি.ডি সিস্টেম পরোক্ষ নির্বাচনের মাধ্যমে সৈয়দ সরফরাজ আলী, আব্দুল মজিদ খাঁন, ইরেশ লাল সোম, আব্দুর রজ্জাক এবং সর্বশেষ আলহাজ¦ এ.এইচ.এম.এ রশিদ চেয়ারম্যান ছিলেন। স্বাধীনতা উত্তর বাংলাদেশে একলোক এক ভোট – প্রত্যক্ষ ভোটের মাধ্যমে সাজ্জাদুর রহমান পুতুল, সৈয়দ মহসীন আলী, আলহাজ¦ মাহমুদুর রহমান (এই তিন জনই পরলোক্ েমহান মালিক তাদের বেহেশত নসীব করুন) ফয়জুল করিম ময়ূন প্রমুখ কৃতিত্ব ও জনপ্রিয়তার সাথে দায়িত্ব পালন করেছেন।
বিপুল উৎসাহ উদ্দীপনা ও টানটান উত্তেজনার মধ্যে অনুষ্টিত হয় বর্ত্তমান পৌর পরিষদ এর বিগত নির্বাচন। দলীয় প্রতীকে অনুষ্টিত সেই নির্বাচনে মুল প্রতিদ্ধন্ধী ছিলেন নৌকা প্রতীকে মোঃ ফজলুর রহমান এবং ধানের শীষে মোঃ অলিউর রহমান। দুজনেই শক্ত প্রার্থী। নৌকা প্রতীকের প্রার্থী আলহাজ¦ মোঃ ফজলুর রহমান তৃনমূল থেকে রাজনীতির সঙ্গেঁ সম্পৃক্ত। ছাত্রলীগ ও আওয়ামী যুবলীগ এর শীর্ষ নেতা ছিলেন সুপরিচিত ও প্রভাবশালী পরিবারের সন্তান। মোঃ অলিউর রহমান ও পৌর বি.এন.পি-র প্রভাব শালী নেতা- কর্ম্মকর্তা, সাবেক পৌর কমিশনার, জেলার বিশিষ্ট ব্যবসায়ী, ব্যক্তি ও পরিবারিক ভাবে ও প্রতিষ্টিত।
তুমূল প্রতিদ্ধন্ধীতা ও উত্তেজনা পূর্ন নির্ব্বাচনে সহিংসার মাঝে নৌকা প্রতীকের প্রার্থী আলহাজ¦ মোঃ ফজলুর রহমান বিজয়ী হন। পরাজিত প্রার্থী মোঃ অলিউর রহমানের পক্ষ থেকে নির্বাচনে সহিংসতা ও কারচুপির অভিযোগ আনয়ন করেন। তাঁর পক্ষ থেকে নির্বাচন বাতিল এবং নূতন নির্বাচন দাবী করে কোন মামলা মোকদ্দম না হওয়াতে আমরা তার ফলাফল মেনে নেই। দায়িত্বভার গ্রহন করেন নব নির্বাচিত পৌর মেয়র আলহাজ¦ মোঃ ফজলুর রহমান। দায়িত্বভার নিয়ে পূর্ণ উদ্যমে কাজ শুরু করেন নূতন মেয়র। শুরু থেকেই চমক দেখাতে থাকেন তাঁর কাজে ও কথায়। চলায় ও বলায়।
নবীন পৌর মেয়র মোঃ ফজলুর রহমান আমার প্রিয় পাত্র এবং তার পরিবার ও স্বজনদের সঙ্গেঁ আমার পরিচয় সম্পর্ক সখ্যতা থাকলেও তিনি আমার কিংবা আমি তাঁর রাজনৈতিক মিত্র নই- বরং বলা চলে প্রায় দুই মেরুতে আমাদের অবস্থান যদিও ব্যাক্তিগত সম্পর্ক খুবই চমৎকার। তিনি আমাকে আমাদের রাজনৈতিক মত পার্থক্যের মাঝেও বয়োঃজৈষ্ট হিসাবে ভক্তি শ্রদ্ধা করেন, সম্মান দেখান আমি ও তাকে বয়োঃ কনিষ্ট বিনয়ী ও সজ্জন হিসাবে ¯েœহের চোখে দেখি- পৌর মেয়র হিসাবে সম্মান করি। আমি একজন প্রবীন -পেশাদার আইনজীবি হিসাবে পৌরসভার প্যেনেল ল’-ইয়ার নই। পৌরসভা কিংবা পৌর মেয়রের পক্ষে ফরমায়েসী কলাম লেখা কিংবা ওকালতি করার কোন কারন নেই। আমার ইচ্ছাও নেই, একজন সাংবাদিক-কলামিষ্ট হিসাবে আমার দায়িত্ব সত্য প্রকাশ করা। সত্যকে সমর্থন করা। বিগত পৌর সভার নির্বাচনে আমি ধানের শীষের প্রার্থী মোঃ অলিউর রহমানের চীফ ইলেকশন এজেন্ট ছিলাম। জেলা বিএনপির সভাপতি সাবেক সাংসদ এম. নাসের রহমান সাহেব এই দায়িত্ব দিয়েছিলেন। দায়িত্ব আমি পালন করেছি। নির্বাচনের সময় ও আমি ধানের শীসের প্রার্থী মোঃ অলিউর রহমানের পক্ষে নির্বাচনী প্রচারাভিযান করেছি- আমার রাজনৈতিক দায়িত্ব পালন করেছি। নব নির্বাচিত পৌর মেয়র আলহাজ¦ মোঃ ফজলুর রহমান দায়িত্ব গ্রহনের পর তার কতেক ব্যাতিক্রমি ঘোষনা ও কাজ আমার ও পৌর বাসির দৃষ্টি আকর্ষন করে। দূর্নীতি, দূবৃত্তায়ন বানিজ্যায়ন ও ভ্রষ্টাচারের জোয়ারের মাঝে মেয়র ফজলুর রহমান উচ্চকন্ঠে ঘোষনা করেন দলগত ভাবে তিনি নিখাদ ও কট্টর আওয়ামীলীগার কিন্তু মেয়র হিসাবে তিনি সকলের, পৌরসভা দলীয়করন হবেনা, সকল নাগরিকের সমানাধিকার সংরক্ষিত থাকবে। পেশাগত ভাবে তিনি একজন ব্যবসায়ী কসম খেয়ে ঘোষনা করেন পৌরসভা নিয়ে বানিজ্য করবেন না, পৌরসভার উন্নয়ন কাজে কমিশন খাবেন না, তিনি বা তার নামে কোন চাঁদাবাজি বা ধান্দাবাজি হবে না, ঘুষ হারাম খাবেন না। পৌর মেয়রের এই দূঃসাহসী ঘোষনা সকল মহল কর্তৃক প্রশংসিত হয়, তিনি পৌর উন্নয়নের সকলের সহয়োগিতা কামনা করেন। একটি সামাজিক অনুষ্টানে আমি তার এমন ঈমানী ঘোষনার প্রশংসা করতঃ পৌর উন্নয়নে সাধ্যানুযায়ী সহযোগিতার আশ^াস দেই। ইতিমধ্যে পৌর মেয়র মোঃ ফজলুর রহমান ঈদগাহ সম্প্রসারন, অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদভিযান, রাস্তাঘাটের সংস্কার, সম্প্রসারন ও উন্নয়ন, সৌন্দর্য্য বর্ধনের জন্য ফলজ, বনজ বৃক্ষ রোপন, শহরকে ফাটাবিলের জলাবদ্ধতার হাত থেকে রক্ষার জন্য দখল, দুষনে প্রায় হারিয়ে যাওয়া- কোদালিছড়া খালকে দখলমুক্ত করন ও খনন করে দলমত নির্বিশেষে সকল পৌরবাসির প্রশংসা কুড়িয়েছেন।
পৌর মেয়র আলহাজ¦ মোঃ ফজলুর রহমান এর মানিবিক-হৃদয়ভিত্তিক-নান্দনিক আয়োজন ওল্ড কেয়ার। পৌর এলাকাধীন পৌর জনমিলন কেন্দ্র এলাকাটি একটি অতীব গুরুত্বপূর্ন এলাকা। জেলা জামে মসজিদ এবং চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত ভবনের সম্মুখস্থ বিশাল এলাকায় পৌরসভার মালিকানাধীন দুটি কমিউনিটি সেন্টার, জেলা বার, সার্কিট হাউস, অনতি দূরেই জেলা জজ আদালত ভবন, পুলিশ সুপার সাহেবের অফিস, মৌলভীবাজার সরকারি মহিলা কলেজ, দি ফ্লাওয়ার্স কেজি এন্ড হাই স্কুল, অতঃপর মৌলভীবাজার সরকারি অনার্স কলেজও। কোর্ট রোড, কোর্ট এলাকাটি খুবই আকর্ষনীয়। টিলাভূমি গাছ গাছালির মাঝে দৃষ্টি নন্দন স্থাপনা। এলাকাটি আমার খুবই প্রিয়। ষাটের দশকে মৌলভীবাজার ডিগ্রী কলেজের ছাত্র ছিলাম। ষাট-সত্তোর-আশি-নব্বইর দশক পর্যন্ত পৌর জনমিলন কেন্দ্রে (পাকিস্তান আমলের জিন্নাহ হল) নাটক, গান বাজনা, সভা-সমাবেশ করেছি। স্বাধীনতা উত্তর কালে পেশা হিসাবে আইন-কে বেছে নিয়ে যোগ দেই জেলা বারে। বার ভবন ও অফিস পৌর জনমিলন কেন্দ্রের সামনেই। অতঃপর দীর্ঘদিন যাবত কোর্ট মসজিদ-বর্তমান নাম জেলা জামে মসজিদ এর সম্পাদকীয় দায়িত্বে আছি। জোহর-আছর-জুম্মার নামাজ ছাড়াও নির্ম্মান কাজের তদারকি-দেখভাল এর জন্য সকাল সন্ধ্যা এই এলাকায়ই আছি। সম্প্রতি পৌর মেয়র আলহাজ¦ ফজলুর রহমান আমাদের জেলা জামে মসজিদে জুম্মার নামাজ আদায় করতঃ আমাকে বিনয়ের সঙ্গেঁ আমন্ত্রণ জানালেন জেলা জামে মসজিদ এর সম্মুখস্থ পৌর জনমিলন কেন্দ্রের বিশাল এলাকা নিয়ে নির্ম্মানাধীন ওল্ড কেয়ার সেন্টার নির্ম্মান কাজ পরিদর্শনের জন্য। ঐদিন বাদ জুম্মা আমার কোন কাজ ছিলনা তাছাড়া তাঁর কথা ফেলতেও পারি না-সৌজন্য মূলকও নয়। যদিও বেশ কদিন যাবত -ওল্ড কেয়ার- এর নির্মান কাজ দেখছি মনে মনে প্রশংসা করছি। বৃদ্ধদের জন্য নওযোয়ান-নবীন মেয়র আলহাজ¦ মোঃ ফজলুর রহমান এর এই মানবিক উদ্যোগটি খুবই প্রশংসনীয়। বয়োঃবৃদ্ধগন শুধু মাত্র বাংলাদেশ নয় বিশে^ব্যাপীই বড় অসহায়। বিলেত-আমেরিকায় ছেলে মেয়ে প্রাপ্ত বয়স্ক হলে পিতা মাতাকে – গুডবাই- বলে চলে যায়। দিবসে উৎসবে ফুল পাঠায়, উইশ করে সে দেশে সাধারনতঃ আমাদের দেশের মত যৌথ পরিবার প্রথা নেই। আশির দশকে চিকিৎসা বিশ্রাম-ভ্রমনের জন্য ছয়মাস লন্ডন ছিলাম। ওল্ড পেরেন্টস- কে কাউন্সিল দেখভাল করে। প্রাপ্ত বয়স্ক পুত্র-কন্যা-স্ব স্ব কর্ম ও আবাসস্থল থেকে পচিশে ডিসেম্বর বড়দিনে চকলেট ও উপহার পাঠায়। পহেলা জানুয়ারী ফুল পাঠিয়ে হ্যেপী নিউ ইয়ার বলে- উইশ করে। বাংলাদেশেও সাম্প্রতিক কালে সামাজিক মূল্যবোধের অবক্ষয় এবং নৈতিকতার ক্রমোবনতির কারনে যৌথ পরিবার প্রথায় ধস নেমেছে। বৃদ্ধ পিতা মাতা অসহায়। বিত্তবান দের প্রচেষ্টায় গড়ে উঠছে ওল্ড হোম- বৃদ্ধাশ্রম। বৃদ্ধ পিতা-মাতাকে নির্যাতন করে বাড়ি থেকে বের করে দেবার সচিত্র সংবাদ ও পত্র পত্রিকায় বের হচ্ছে। পুলিশ ইন্সপেক্টর এর বখে যাওা কন্যা ঐশী কর্তৃক পিতা হত্যা বাংলাদেশের সাম্প্রতিক সামাজিক ইতিহাসে দূঃখ ও কলংক জনক অধ্যায়।
ওল্ড কেয়ার ওয়াক এলাকা আমার পূর্বের-ও দেখা। এলাকাটি শুধুমাত্র ষাটোর্দ্ধ দের জন্য সংরক্ষিত। এখানে দৃষ্টিনন্দন স্থাপনায় টাইলস ইট বিছানো পায়ে হাটা পথ- ফুলের বাগান, পাঠাগার, শৌচাগার, কেন্টিন, প্রার্থনা-নামাজের স্থান-বিশ্রাম স্থল সবই আছে। পৌর মেয়র আমার কাছে পরামর্শ চাইলেন আর কি করা যায়, আমি দেখলাম, শুনলাম- সবই আছে- শুধু একটি পরামর্শ দিলাম- এমন মানবিক নান্দনিক- আয়োজন যেনো ইজারা না দেয়া হয়- পৌর কর্তৃপক্ষ যেনো নিজেরাই এটি পরিচালনা করেন- লোক বল যেনো থাকে, রাতের আধারে যেনো বখাটে-বাউন্ডেলদের আড্ডা খানা না হয়-অসামাজিক কার্য্যকলাপ না হয়- যেমনটি হচ্ছে মৌলভীবাজার সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় মাঠ সংলগ্ন শহীদ মিনার এলাকায়। পৌর মেয়র আলহাজ¦ মোঃ ফজলুর রহমান জানালেন এই ওল্ড কেয়ার বানিজ্যিক উদ্দেশ্যে নয়-এটি ইজারা দেয়া হবে না, পৌর কর্তৃপক্ষই পরিচালনা করবেন।
পৌর সভা একটি শক্তিশালী স্থানীয় সরকার প্রতিষ্টান। মহান জাতীয় সংসদ আইন প্রনয়ন কারী সংস্থা মাননীয় সাংসদ গন আইন প্রনেতা বটে। স্থানীয় সরকার সাধারন নাগরিকদের কাছের প্রতিষ্টান। আপন প্রতিষ্টান। স্থানীয় সরকার এর নির্বাচিত প্রতিনিধি জেলা চেয়ারম্যান, উপজেলা চেয়ারম্যান পৌর মেয়র ইউনিয়ন চেয়ারমান গন নাগরিকদের আপন জন- কাছের মানুষ। নাগরিক সমাজ সুখে দূঃখে তাদেরকেই কাছে পান। ড. তোফায়েল আহমদ, ড. বদিউল আলম মজুমদার প্রমুখ স্থানীয় সরকার বিশেষজ্ঞ গন স্থানীয় সরকার বিশেষতঃ উপজেলা পরিষদ অধিকতর শক্তিশালী ও ক্ষমতা প্রদান, বরাদ্দ ও প্রশিক্ষন প্রদান সহ বিভিন্ন প্রাসঙ্গিক অভিমত মতামত ও পরামর্শ প্রদান করছেন। সত্যিকার অর্থেই স্থানীয় সরকারের ক্ষমতায়নে সরকারকে অধিকতর আন্তরিক ও নির্দয় না হওয়া উচিত।
এই মহতি মানবিক আয়োজনের দেকভাল করা আমাদেরই পবিত্র দায়িত্ব। আশা করি পৌর নাগরিকগন সে দায়িত্ব পালন করবেন। [সিনিয়র এডভোকেট হাই কোর্ট। সাবেক সভাপতি মৌলভীবাজার প্রেসক্লাব। মুক্তিযোদ্ধা। কলমিষ্ট]
মন্তব্য করুন