কনকনে শীতে বিপর্যস্ত জনজীবন, সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ১১ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস
এহসান বিন মুজাহির॥ শীত অঞ্চল বলে খ্যাত মৌলভীবাজারে নেমেছে কনকনে শীত। গত দুই সপ্তাহ থেকে কুয়াশার পাশাপাশি হিমেল হাওয়ার কারণে শীতের তীব্রতা আরও বাড়িয়ে তুলেছে। এতে জনজীবন স্থবির হয়ে পড়েছে। যার ফলে সর্বসাধারণের পাশাপাশি চরম দুর্ভোগ পোহাচ্ছে শ্রমজীবি, বাগানের চা শ্রমিকসহ খেটে খাওয়া মানুষজন। শ্রীমঙ্গল আবহাওয়া অফিস সূত্রে জানা যায় সোমবার ৮ জানুয়ারি সকাল ৯টায় শ্রীমঙ্গলে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ১১ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। কনকনে শীত থাকায় উপজেলার চা বাগান ও প্রত্যন্ত অঞ্চলের জনজীবনে জবুথবু অবস্থা তৈরি হয়েছে। এ কারণে রোগবালাই বেড়েছে। শীতজনিত নানা রোগে হাসপাতালে ভর্তি সংখ্যা বেড়েছে। শীত নিবারণ করতে গিয়ে বিভিন্ন স্থানে আগুন জ্বালিয়ে শীত নিবারণ করতে দেখা গেছে। শীতের প্রকোপ বেড়ে যাওয়ার সাথে সাথে শ্রীমঙ্গলে শীতজনিত রোগব্যাধিও বেড়েছে। ৫০ শয্যাবিশিষ্ট শ্রীমঙ্গল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সূত্রে জানা যায়, তীব্র শীতে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আউটডোরে ঠান্ডাজনিত রোগীর সংখ্যা বেড়েছে। বিশেষ করে শীতজনিত রোগ সর্দি-কাশি, ঠাণ্ডা, নিউমোনিয়া, ডায়রিয়া, হাঁপানিসহ শীতজনিত নানা রোগ নিয়ে শিশু এবং বয়স্করা ভর্তি হয়েছেন। শীতকালীন ডায়রিয়া, ঠাণ্ডা কাশি ও নিউমোনিয়ায় আক্রান্তের সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে বলে জানান উপজেলা স্থাস্থ্য ও পরিবার ও পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. সাজ্জাদ হোসেন চৌধুরী। তিনি বলেন তীব্র শীতে প্রতিদিন স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ঠাণ্ডা-কাশি, নিউমোনিয়া, অ্যাজমা রোগ নিয়ে শিশু ও বৃদ্ধরা হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছেন। কেউ কেউ চিকিৎসা নিয়ে বাড়ি ফিরছেন। রোগীর সংখ্যায় হাসপাতালের শয্যা কম থাকায় মাঝেমধ্য হিমশিম খেতে হচ্ছে আমাদের।
শ্রীমঙ্গল আবহাওয়া অফিসের পর্যবেক্ষক বিভলু চন্দ্র দাস জানান, গত ২০ ডিসেম্বর থেকে আজ ৮ জানুয়ারি পর্যন্ত শ্রীমঙ্গল উপজেলায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ১১ ডিগ্রি থেকে ১৬ ডিগ্রির ভেতরে ওঠানামা করছে। শ্রীমঙ্গলে অবস্থিত আবহাওয়া অফিস সূত্রে জানা যায়, গত ২০ ডিসেম্বর ছিল ১০. ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস, ২১ ডিসেম্বর ছিল ১৩. ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস, ২২ ডিসেম্বর ছিল ১৪. ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস, ২৩ ডিসেম্বর ছিল ১৫. ৩ ডিগ্রি, ২৪ ডিসেম্বর ছিল ১৫. ৬ ডিগ্রি, ২৫ ডিসেম্বর ছিল ১৫. ৫ ডিগ্রি, ২৬ ডিসেম্বর ছিল ১৬ ডিগ্রি, ২৭ ডিসেম্বর ছিল ১৫.৩ ডিগ্রি, ২৮ ডিসেম্বর ছিল ১৪. ৫ ডিগ্রি, ২৯ ডিসেম্বর ছিল ১৩.৪ ডিগ্রি, ৩০ ডিসেম্বর ছিল ১৩.২ ডিগ্রি, ৩১ ডিসেম্বর ছিল ১৩. ৪ ডিগ্রি, ১ জানুয়ারি ১৬.৫ ডিগ্রি, ২ জানুয়ারি ছিল ১৫. ৬ ডিগ্রি, ১ জানুয়ারি ছিল ১৫. ২ ডিগ্রি, ৩ জানুয়ারি ছিল ১৫. ৬ ডিগ্রি, ৪ জানুয়ারি ছিল ১৬. ৫ ডিগ্রি, ৫ জানুয়ারি ছিল ১৫.২ ডিগ্রি সেলসিয়াস, ৬ জানুয়ারি ছিল ১৩. ১ ডিগ্রি সেলসিয়াস এবং ৭ জানুয়ারি ১৩. ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়।
শ্রীমঙ্গল আবহাওয়া পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আনিসুর রহমান আনিস জানান, সোমবার ৮ জানুয়ারি সকাল ৯টায় শ্রীমঙ্গলে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ১১ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। গত ১৯ ডিসেম্বর এবারের শীত মৌসুমের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ১০.৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয় বলে জানান তিনি।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের আর্কাইভ সূত্রে জানা যায়, ১৯৬৮ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি শ্রীমঙ্গলে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছিল ২ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস এবং ১৯৬৬ সালের ২৯ জানুয়ারি দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ৩ দশমিক ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস। ১৯৯৫ সালের ৪ জানুয়ারি, ২০০৭ সালের ১৭ জানুয়ারি এবং ২০১৩ সালের ১০ জানুয়ারি শ্রীমঙ্গল দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছিল ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
মন্তব্য করুন