কমলগঞ্জের রুপসপুর গ্রামে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত জনের জানাজায় হাজার হাজার মানুষের উপস্থিতি সংসদ সদস্য ও জেলা প্রশাসনের পক্ষে নগদ সহায়তা
প্রনীত রঞ্জন দেবনাথ॥ ঢাকায় বিয়ে করতে যাওয়ার পথে ব্রাহ্মনবাড়ীয়ায় মর্মান্তিক সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জের ৮ জনের জানাজায় রাতে হাজার হাজার মানুষের ঢল নামে। পুরো গ্রাম জুড়ে যেন ছিল জানাজার ময়দান। শুক্রবার রাত সাড়ে সাতটায় আট মরদেহ রুপসপুর গ্রামে পৌছলে এক হৃদয় বিদারক অবস্থার সৃষ্টি হয়। রাত সাড়ে ১০টায় গ্রামের বন্দের বাজারে এক সাথে আট লাশ সামনে রেখে কয়েক সহ¯্রাধিক মানুষের উপস্থিতিতে নামাজে জানাজা শেষে দক্ষিণ রুপসপুর দিঘীর পার কবরস্থানে এক সাথে সারিবদ্ধভাবে কবর দেওয়া হয়।
১৬ সেপ্টেম্বর শুক্রবার বিকালেই রুপসপুর বন্দের বাজার সংলগ্ন দিঘীরপার কবরস্থানে গ্রামবাসী সারিবদ্ধভাবে আটটি কবর খুঁড়ে নেন। সন্ধ্যা সাড়ে সাত টায় এক যুগে আটটি মরদেহ আসার পর গোটা রুপসপুর গ্রাম জুড়ে ছিল শোকের মাতম। স্বজনদের কান্নায় আকাশ বাতাস ভারী হয়ে উঠে। গ্রামের চর্তুদিকে রাস্তা দিয়ে জনতার ঢল নামে। রাত সাড়ে দশ টায় জানাজার নামাজে শরীক হন কমলগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান,
কমলগঞ্জ পৌরসভার মেয়র, বিভিন্ন ইউপি চেয়ারম্যানসহ উপজেলার রাজনৈতিক, সামাজিক ও বিভিন্ন সংগঠনের লোকজন। গ্রামের সর্বজন শ্রদ্ধেয় মাওলানা আব্দুল মালিক জানাজার পড়ান। জানাজার নামাজে নিহতদের আত্মীয় স্বজন ছাড়াও বিভিন্ন এলাকা থেকে হাজার হাজার লোক উপস্থিত হন। দিঘীরপার বাজারে স্থান সংকুলান না হওয়ায় পুরো গ্রামের যে যেখানে পেরেছে দাঁড়িয়ে নামাজ আদায় করেছে। কেউ কেউ ঘরের ভিতর থেকেও জানাজার নামাজ আদায় করেছেন।
শনিবার ১৭ সেপ্টেম্বর সকাল ১১টায় রুপসপুর গ্রামে নিহতদের বাড়িতে গিয়ে জানা যায়, সড়ক দুর্ঘটনায় বর মাওলানা আবু সুফিয়ানের পরিবার, তার চাচা মতিউর রহমানের পরিবার, দুরুদ মিয়ার পরিবার ও মাওলানা সাইদুর রহমানের পরিবার একেবারে নিঃস্ব হয়ে গেছে। নিহত বর আবু সুফিয়ানের মা সুনারা বেগম ওরফে সুনরা বিবি জানান, দুর্ঘটনায় বড় ছেলে আবু সুফিয়ান, স্বামী হাদিউর রহমান সরফর, দেবর মতিউর রহমান মুর্শেদ, মুর্শেদের ছেলে আলী হোসেন (১২) ও মুর্শেদের মামা হাজী আব্দুল হান্নান মারা গেছেন। এক ছেলে তারিকুল ইসলাম কামরান আশঙ্কা জনকভাবে ঢাকার পংগু হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছে। বাড়িতে নবম শ্রেণি পড়–য়া ছোট ছেলে শাহনুর আহমদ আছে। স্বামী হাদিউর রহমান ছোট একটি চা দোকান থেকে আয় করে সংসার চালাতেন। এখন উপার্জনের আরও কেউ রইলো না।
মতিউর রহমান মুর্শেদের স্ত্রী অজুফা বেগম জানান, এক ছেলে এক মেয়েকে নিয়ে ছোট সংসার ছিল। স্বামী মুর্শেদ রাজমিস্ত্রিরি কাজ করতেন। দুর্ঘটনায় একমাত্র ছোট ছেলে আলী হোসেনসহ স্বামী মারা গেছেন। বাড়িতে নবম শ্রেণি পড়–য়া একমাত্র মেয়ে রুবিনাকে নিয়ে তিনি এখন পুরোদমে অসহায়। সংসার চালানোর আর কেউ নেই পরিবারে। নিহত দুরুদ মিয়া পেশায় রাজমিস্ত্রী ছিলেন। এক ছেলে ও পাঁচ মেয়ের মাঝে বসত ভিটের এক অংশ বিক্রি করে বড় মেয়েকে বিয়ে দিয়েছিলেন। দুই মেয়ে কলেজে পড়ে। দুর্ঘটনায় দুরুদ মিয়া মারা যাওয়ায় এ সংসার অন্ধকারে নিমজ্জিত হয়ে পড়ে। দুর্ঘটনায় নিহত মাওলানা সাইদুর রহমানের এক ছেলে ও এক মেয়ের ছোট পরিবার ছিল। বয়সে ছেলে মেয়েরা খুবই ছোট। দুর্ঘটনায় মাওলানা সাইদুর মারা যাওয়ায় সংসারটি নিঃস্ব হয়ে গেছে। নিহত হাজী আব্দুল হান্নান ও আব্দুল মুকিত চৌধুরী ওরফে মোক্তাদিরর পরিবারের সদস্যরা প্রবাসে আছেন বলে পরিবারগুলো অনেকটা স্বচ্ছল।
১৭ সেপ্টেম্বর শনিবার বেলা সাড়ে ১১টায় কমলগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ মাহমুদুল হক রুপসপুর গ্রামে যান। তারপর সাবেক চিফ হুইপ ও স্থানীয় সংসদ সদস্য উপাধ্যক্ষ আব্দুস শহীদ রুপসপুর গ্রামে গিয়ে নিহতদের পরিবারের বেঁচে থাকা সদস্যদের সাথে কথা বলে সমবেদনা জানান। সাংসদ উপাধ্যক্ষ আব্দুস শহীদের পক্ষ থেকে তাৎক্ষনিকভাবে নগদ ৫০ হাজার টাকা ও জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নগদ ৫০ হাজার টাকা প্রদান করেন। সংসদ সদস্য উপাধ্যক্ষ মো. আব্দুস শহীদ জানান, তিনি বর আবু সুফিয়ান ও মতিউর রহমান মুর্শেদের পরিবারকে নগদ ১৫ হাজার টাকা করে, দুরুদ মিয়ার পরিবার ও মাওলানা সাইদুর রহমানের পরিবারকে ১০ হাজার টাকা করে প্রদান করেন।
কমলগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মাহমুদুল হক জানান, জেলা প্রশাসনের পক্ষে বর আবু সুফিয়ান ও তার চাচা মতিউর রহমান মুর্শেদের পরিবারকে নগদ ১০ হাজার করে, দুরুদ মিয়া ও সাইদুর রহমানের পরিবারকে ৫ হ্জাার টাকা করে ও হাজী আব্দুল হান্নান ও আব্দুল মুকিত চৌধুরীর পরিবারকে ১০ হাজার টাকা করে প্রদান করা হয়। এসময় কমলগঞ্জ উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান সিদ্দেক আলী, কমলগঞ্জ পৌরসভার মেয়র জুয়েল আহমদ, মুন্সীবাজার ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল মোতালিব তরফদার, রহিমপুর ইউপি চেয়ারম্যান ইফতেখার আহমদ, পতনঊষার ইউপি চেয়ারম্যান ইঞ্জিনিয়ার তওফিক আহমদ বাবু, উপজেলা বিআরডিবির চেয়ারম্যান ইমতিয়াজ আহমদ বুলবুল প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
নিহতদের পরিবারের সদস্যদের সমবেদনা জানানোর পর সাবেক চিফ হুইপ উপাধ্যক্ষ মো. আব্দুস শহীদ এমপি সাংবাদিকদের বলেন, দুর্ঘটনার কারণে যে চারটি পরিবার একেবারে নিঃস্ব হয়ে গেছে সেই পরিবারগুলোকে স্বচ্চল রাখার একটি পরিকল্পনা মাফিক চিন্তা ভাবনা করতে হবে।
মন্তব্য করুন