কমলগঞ্জের রুপসশপুর গ্রামে চলছে শোকের মাতম: স্ত্রীকে ঘরে এনে মাকে ডাক্তার দেখানো হলনা : পাশা পাশি ৮টি কবরে দাপন সম্পন্ন
এস এম উমেদ আলী॥ মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জের যে বাড়িতে নব বধুকে বরণ করে আনন্দ থাকার কথা ছিলো কিন্তু সেই বাড়ি সহ পূরো গ্রামে চলছে এখন শোকের মাতম। জরিনা বেগম তার পুত্র ও স্বামীকে হারিয়ে এখন বাকরুদ্ধ। অপর পুত্র সজ্ঞাহীন অবস্থায় পরে রয়েছে হাসপাতালের বিছানায়। হারিয়েছেন বাসুর ও বাসুর পুত্র সহ ৮ স্বজনকে।
স্বজনদের নিয়ে পছন্দের মেয়েকে বিয়ে করতে ঢাকার মহাখালিতে যাচ্ছিলেন মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলার মুন্সীবাজার ইউনিয়নের রুপশপুর গ্রামের মাওলানা আবু সুফিয়ান। মাইক্রোবাস যোগে বাবা ভাই ও স্বজনদের নিয়ে মোট ১১ জন ভোর ৬ টায় যাত্রা করেন।
কথা ছিলো বিয়ে করে স্ত্রীকে ঘরে তুলে মায়ের চিকিৎসার জন্য ডাক্তার দেখাতে সিলেট নিয়ে যাবেন আবু সুফিয়ান। কিন্তু তার সেই কথা আর পূরণ হলোনা। লাশ হয়ে ফিরলেন বর আবু সুফিয়ান, সাথে বাবা আদিউর রহমান ওরফে সরফর মিয়া, চাচা মতিউর রহমান মুর্শেদ, চাচাতো ভাই আলী হোসেন, নিকটআত্মীয় মাওলানা সাইদুর রহমান, হাজী আব্দুল হান্নান, মুক্তার চৌধুরী ও দুরুদ মিয়া সহ মোট ৮জন। ব্রাক্ষনবাড়িয়া পুলিশ ফাঁড়ি থেকে ৮টি মরদেহ নিয়ে শুক্রবার সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় একটি পিক-আপ ভ্যান ও এম্ব্যুলেন্সে করে কমলগঞ্জ উপজেলার মুন্সীবাজার ইউনিয়নের রুপশপুর গ্রামে পৌছালে কান্নায় আকাশ যেন ভারী হয়ে উঠে। দূর্ঘটনার সংবাদ শুনার পর রুপশপুর গ্রামটি নিস্তব্ধ হয়ে যায়, শুরু হয় শোকের মাতম। গোটা কমলগঞ্জে এই মর্মান্তিক সড়ক দুর্ঘটনার সংবাদ ছড়িয়ে পরলে শত শত শোকার্ত মানুষ ছুটে যান শোকাহত রুপসপুর গ্রামে।
শুক্রবার ১৬ সেপ্টেম্বর সকাল দশটায় ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার বিজয়নগর উপজেলার ইসলামপুর ইউনিয়নের শশই গ্রাম এলাকায় মাইক্রোবাস ও এনা পরিবহনের একটি বাসের মুখোমুখি সংর্ঘষে বরের মাইক্রোবাসটি দুমড়ে মুছড়ে যায়। দুর্ঘটনায় ঘটনাস্থলেই বর, চাচাতো ভাই, বাবাসহ ৭ জনের মৃত্যু হয়। পরে হাসপাতালে আরেক বরযাত্রীর মৃত্যু হয়। ফলে আবু সুফিয়ানের আর বিয়ে করে স্ত্রী ঘরে তোলা হয়নি ও মাকে নিয়ে ডাক্তারও দেখানো হল না। মর্মান্তিক এ দুর্ঘটনায় একই পরিবারভুক্ত চারজনসহ আটজনের মৃত্যুতে গ্রামবাসী যেন বাকরুদ্ধ হয়ে গেছেন।
দুর্ঘটনায় আহত বরের আপন ছোট ভাই কামরান মিয়া, স্বজন জাকির হোসেন ও গাড়ী চালক সোহান মিয়াকে হবিগঞ্জ জেলার মাধবপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়। মাধবপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের কর্তব্যরত চিকিৎসক ডা: কিশোলয় সাহা জানান এদের মাঝে জাকির হোসেনের অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়া তাকে সিলেট এম এ জি ওসমানী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়।
শুক্রবার সন্ধ্যায় রুপশপুর গ্রামে গেলে নিহত বর আবু সুফিয়ানের মা জরিনা বেগম এর কান্নায় আকাশ যেন ভারী হয়ে উঠে। কেঁদে কেঁদে বলেন, তিন ছেলের মধ্যে আবু সুফিয়ান বড় ছেলে ছিল। বিয়ে করে ঘরে ফিরে স্বজনদের আপ্যায়ন আর আনন্দ থাকার কথা ছিল। দুর্ঘটনায় এ আনন্দ শোকে পরিনত হল। শোক শুধু শোক নয় পুরো পরিবারটি এখন ধ্বংসের মুখে পড়ে গেল।
গ্রামবাসী একই কবর স্থানে এক সাথে আটটি কবর খুড়ে আগেই প্রস্তুত রেখেছেন। সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় লাশ পৌছার পর ধর্মীয় আনুসাঙ্গিকতা শেষে রাত সাড়ে ১০টায় নামাজে জানাজা শেষে পাশা পাশি ৮টি কবরে দাপন সম্পন্ন। নামাজে জানাজায় উপস্থিত ছিলেন স্থানীয় সংসদ সদস্য উপাধ্যক্ষ আব্দুস শহীদ, কমলগঞ্জ উপজেলা চেয়ারম্যান অধ্যাপক রফিকুর রহমান সহ এলাকার সর্বস্থরের কয়েক হাজার মানুষ।
মুন্সীবাজার ইউনিয়নের স্থানীয় ইউপি সদস্য আবুল মিয়া জানান, নিহত বর আবু সুফিয়ান ঢাকায় একটি মাদ্রাসা থেকে পড়াশুনা করে আলেম পাশ করেছেন। তিনি ছাত্র জমিয়ত বাংলাদেশ এর কেন্দ্রীয় কমিটির তথ্য ও প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক ছিলেন। মাওলানা আবু হানিফের মেয়ে মাহমুদা ইয়াছমিনকে স্ত্রী করে আনার জন্য যাচ্ছিলেন ঢাকায়। হাসি খুশিতে ভরপুর গ্রাম একটি দুর্ঘটনায় হাঁসির বদলে কান্নায় ভরে গেছে। রুপসপুর গ্রামে হাজারো জনতা ভিড় করছে।
মন্তব্য করুন