কমলগঞ্জের লাউয়াছড়া বনের শতবর্ষ পালিত : যে কোন মূল্যে বন পরিবেশ রক্ষায় অঙ্গিকার

January 21, 2017,

প্রণীত রঞ্জন দেবনাথ॥ র‌্যালী, আলোচনা সভা ও বৃক্ষরোপনের মধ্য দিয়ে মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলার লাউয়াছড়া সংরক্ষিত বনের শতবর্ষ উদযাপিত হয়েছে।
১৯১৭ সালে ২০ জানুয়ারি তৎকালীন আসাম সরকার লাউয়াছড়াকে সংরক্ষিত বন হিসেবে ঘোষণা করে। এটি বাংলাদেশের অন্যতম বন্যপ্রাণী অভয়াশ্রম। অসাধারণ জীববৈচিত্র এবং বিচিত্র প্রজাতির গাছ-লতা-গুল্মে ভরপুর প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্যরে আঁধার এই লাউয়াছড়া। একুশে টিভির সাংবাদিক বিকুল চক্রবর্তীসহ নিউজ কর্ণারের কয়েকজন সাংবাদিক শতবর্ষ উদযাপনের অনুষ্ঠানটি আয়োজন করেন। আলোচনা সভায় জেলা ও উপজেলা প্রশাসন, বনবিভাগ, রাজনৈতিক নেতা ও জনপ্রতিনিধি সবাই বন ও পরিবেশ রক্ষায় সামাজিক ও রাজনৈতিক অঙ্গিকার করার কথা ব্যক্ত করেন। আলোচনা সভা শেষে বন্যপ্রাণী অবমুক্ত করা ও শিশু শিক্ষার্থীদের অংশ গ্রহনে র‌্যালি অনুষ্ঠিত হয়। নিউজ কর্ণার ও সুহৃদ শ্রীমঙ্গলের আয়োজনে বাংলাদেশ বন্যপ্রাণী ফাউন্ডেশনের সহায়তায় এ কর্মসূুচগুলি পালন করা হয়। আর বাংলাদেশ বন্যপ্রানী সেবা ফাউন্ডেশন তাদের সংগ্রহে সেবা গ্রহনরত অবস্থায় থাকা কিছু বণ্যপ্রাণী অবমুক্তকরণে সহায়তা প্রদান করেন।
শতবর্ষ উপলক্ষে আয়োজিত শুক্রবার ২০ জানুয়ারি দুপুর ১২টায় লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানের সহ-ব্যবস্থাপনা কমিটির কার্যালয়ের সামনে বন ও পরিবেশ রক্ষায় করণীয় শীর্ষক এক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন মৌলভীবাজার জেলা প্রশাসক মোঃ তোফায়েল ইসলাম। কমলগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মেহাম্মদ মাহমুদুল হকের সভাপতিত্বে ও সাংবাদিক বিকুল চক্রবর্তীর সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন কমলগঞ্জ উপজেলা চেয়ারম্যান ও বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য অধ্যাপক মো. রফিকুর রহমান, বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মিহির কান্তি দে, র‌্যাব শ্রীমঙ্গল এর অধিনায়ক মাঈন উদ্দিন, সহকারী বন সংরক্ষক (বন্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগ) তবিবুর রহমান।
এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন, কাতার প্রবাসী ক্রীড়ামোদী সুব্রত চক্রবর্তী, আশিষ রঞ্জন দে, মো. হারুন আর রশিদ, সাংবাদিক হৃদয় দেবনাথ, ঝলক চক্রবর্তী, সাংবাদিক সৈয়দ সালাউদ্দিন, সঞ্জয় কুমার দে, শিক্ষক আবুল কাসেম, রুপক চক্রবর্তী, কাউছার আহমদ রিয়ন, আকাশ চক্রবর্তী, সাংবাদিক সাজিদুর রহমান, সাংবাদিক পান্না দত্ত, সাংবাদিক নুরুল মোহাইমিন মিল্টন, সাংবাদিক অনুজ কান্তি দাশ, সাংবাদিক আব্দুর রব, অরবিন্দ দেব, ফটো সাংবাদিক স্বপন দেব সজল ও বিক্রমজিৎ বর্ধন।
বিকেলে অনুষ্ঠানের ২য় পর্বে পরিবেশ ও লাউয়াছড়া বন নিয়ে সংবাদ পরিবেশন করে গুরুতপূর্ণ ভুমিকা রাখায় ২০ জন সাংবাদিককে পুরস্কৃত করা হয়। এ সময় বক্তারা বলেন, প্রাকৃতিক জীব বৈচিত্রের আধার লাউয়াছড়া বনকে শতবছর নয় হাজার বছর স্থায়িত্ব করার জন্য সবাইকে এক যোগে কাজ করতে হবে।
অতিথিবৃন্দ লাউয়াছড়ার শতবর্ষে ২টি গন্ধগকুল, ১ টি মেছো বাঘ ও কয়েকটি বিভিন্ন প্রজাতির পাখি অবমুক্তকরার পাশাপাশি বৃক্ষরোপণ করেন। আলোচনা সভায় বক্তারা বলেন, যে কোন মূল্যে পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা এবং নতুন প্রজন্মের জন্য এ জাতীয় উদ্যানটিকে রক্ষায় সকলকে কাজ করতে হবে।


আলোচনা পর্ব শেষে অতিথিরা একটি মেছো বাঘ, দুইটি গন্ধ গকুল, পাঁচটি পরিযায়ী পাখি অবমুক্ত করেন। অবমুক্ত করা বন্যপ্রাণীর মাঝে মেছো বাঘটি গত ৭ জানুয়ারি সিলেটের গোয়ালা বাজারে জনতার হাতে ধরা পড়ে আহত হয়েছিল। দুইট গন্ধ গকুলের মাঝে একটি গত ১ জানুয়ারি মৌলভীবাজারের দোসাই রিসোর্ট ও ৭ জানুয়ারি একটি মৌলভীবাজারের জেলা প্রশাসকের বাস ভবন এলাকা ধরা পড়েছিল। আর পাঁচটি পরিযায়ী পাখি গত ১৫ জানুয়ারি হাইল হাওর এলাকা থেকে পাওয়া। এসব বন্য প্রাণীগুলিতে স্বাস্থ্য সেবা দিয়ে শুক্রবার আনুষ্ঠানিকভাবে লাউয়াছড়া বনে অবমুক্ত করা হয়।
উল্লেখ্য ১৯১৭ খ্রি. ২০ জানুয়ারী তৎকালীন আসাম সরকার এই বনকে সংরক্ষিত বন হিসেবে ঘোষনা করে।

সংবাদটি শেয়ার করতে নিচের “আপনার প্রিয় শেয়ার বাটনটিতে ক্লিক করুন”

মন্তব্য করুন

Social Media Auto Publish Powered By : XYZScripts.com