কমলগঞ্জে আকস্মিক ঘূর্ণিঝড়ে দেড় শতাধিক ঘর সম্পূর্ণ, প্রায় দুইশত ঘর আংশিক বিধ্বস্ত,আতঙ্কে স্ট্রোক করে এক নারী ও দেয়াল চাপায় ১টি গরুর মৃত্যু। সহ¯্রাধিক গাছ ভেঙ্গেছে, ১৫টি বৈদ্যুতিক খুটি ভেঙ্গেছে

April 29, 2017,

কমলগঞ্জ প্রতিনিধি॥ মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলায় শুক্রবার ২৮ এপ্রিল সন্ধ্যায় আকস্মিক সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড়ে তিনটি ইউনিয়নে দেড় শতাধিক কাঁচা ঘর সম্পূর্ণরুপে বিধ্বস্ত হয়েছে। আরও প্রায় দুই শত কাঁচা ঘর আংশিক বিধ্বস্ত হয়েছে। ঝড়েরর সময় চোখের সামনে গাছ ভেঙ্গে পড়ছে দেখে আতঙ্কে স্ট্রোক করে এক নারীর মৃত্যু হয়েছে। একটি চা বাগানে দেয়াল চাপায় এক চা শ্রমিকের একটি গরুও মারা গেছে। ঝড়ের কারণে ইসলামপুর, আদমপুর ও মাধবপুর ইউনিয়নে সহ¯্রাধিক ছোট বড় গাছ ভেঙ্গে পড়েছে। দুটি ইউনিয়নে ১৫টি বৈদ্যুতিক খুঁটি ভেঙ্গে পড়ে। ঘুর্ণিঝড়ে আহত হয়েছেন কমপেক্ষ ১৫ জন। ঘূর্ণিঝড়ে রাস্তার উপর একাধিক গাছ উপড়ে পড়লে শুক্রবার সন্ধ্যা থেকে কমলগঞ্জ উপজেলার ভানুগাছ-পাত্রখোলা সড়কে যানবাহন চলাচল বন্ধ ছিল।
শুক্রবার বিকাল সাড়ে পাঁচটার দিকে আকস্মিকভাবে আকাশ কালো হয়ে কমলগঞ্জ উপজেলার সীমান্তবর্তী ইসলামপুর, আদমপুর ও মাধবপুর ইউনিয়নের উপর দিয়ে ঘূর্ণিঝড় বয়ে যায়। এ ঘূর্নিঝড়ে ইসলামপুর ইউনিয়নের চাম্পারায় চা বাগান, কুরমা চা বাগান, কোণাগাঁও, শ্রীপুর, নয়াবাজার, আদমপুর ইউনিয়নের তেঁতইগাঁও, মধ্যভাগ, নঈনারপার, হেরেঙ্গাবাজার ও মাধবপুর ইউনিয়নের মাধবপুর বাজার এলাকা, পাত্রখোলা চা বাগান ও ধলই চা বাগান এলাকায় দেড় শতাধিক কাঁচা ঘর সম্পূর্ণরুপে ভেঙ্গে গেছে। অনেক ঘরের চাল উড়ে গাছেল উঁচু ডালে গিয়ে আটকেছে। আবার অনেক ঘর মাটির সাথে মিশে গেছে। আবার আরও প্রায় দুই শত ঘর আংশিকভাবে বিধ্বস্ত হয়েছে।


ঝড়ের সময় চোখের সামনে একটি বড় গাছ ভেঙ্গে পড়তে দেখে আতঙ্কে ইসলামপুর ইউনিয়নের শ্রীপুর গ্রামের  আছকন মিয়ার স্ত্রী সাহেরা বিবি (৫০) ঘটনাস্থলেই স্ট্রোক করে মারা গেছেন। মাধবপুর ইউনিয়নের পাত্রখোলা চা বাগানের পশ্চিম লাইন শ্রমিক বস্তির  শুকুয়া রিকিয়াশনের ঘরের দেয়াল চাপায় তার একটি গরু মারা গেছে। ঝড়ে শ্রীপুর কোণাগাঁও-এর ভিক্ষক লিলাই বিবি(৬০)-র ঘর ও একই গ্রামের মৃত মুক্তিযোদ্ধা মন্তাজ মিয়ার কাঁচ ঘরটিও সম্পূর্ণরুপে বিধ্বস্ত হয়েছে। ঘূর্ণিঝড়ে আদমপুরের উত্তরভঅগ গ্রামের আতিকুর রহমান, পাত্রখোলা চা বাগানের শ্রমিক শ্যামাকান্ত ভৌমিকসহ তিনটি ইউনিয়নে কমপক্ষে ১৫ জন আহত হয়েছেন।
সরেজমিন দেখা যায়,আদমপুর ইউনিয়ন সদরে তেঁতইগাঁও গ্রামের প্রায় আড়াই’শ বছরের পুরোনো তেঁতুর গাছসহ, হেরেঙ্গা বাজার এলাকার বেশ কয়েকটি শত বর্র্ষি গাছ, মধ্যভাগ গ্রামের মখদ্দছ শাহের মাজারের বড় বট গাছ, ভান্ডারীগাঁও উচ্চ বিদ্যালয়ের পিছনের পুকুর পাড়ের একটি বড় গাছ শিকড় শুদ্ধ উপড়ে পড়েছে। ইসলাপমপুর ইউনিয়নের কুরমা ও চাম্পারায় চা বাগান. মাধবপুর ইউনিয়নের পাত্রখোলা ও ধলই চা বাগানের প্লান্টেশন এলাকার ব্যাপকহারে গাছ গাছালি ভেঙ্গে পড়েছে। ঘটনার পর শুক্রবার সন্ধ্যা থেকে ইসলামপুর, আদমপুর ও মাধবপুর উনিয়নের বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ রয়েছে।
ঘূর্নিঝড়ে আদমপুর ইউনিয়নের নঈনারপার গ্রামে ১০টি বৈদ্যুতিক খুটি ও মাধবপুর বাজার সংলগ্ন এলাকার ৫টি বৈদ্যুতিক খুটি ভেঙ্গে পড়েছে। মৌলভীবাজার পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি কমলগঞ্জ জোনাল ব্যবস্থাপক মোবারক হোসেন শুক্রবার সন্ধ্যার আগের ঘূর্ণিঝড়ে দুটি ইউনিয়নে ১৫টি বৈদ্যুতিক খুঁটি ভেঙ্গে ও লাউযাছড়া জাতীয় উদ্যান এলাকায় গাছ পড়ে বৈদ্যুতিক তার ছেড়াসহ ব্যাপক ক্ষতির সত্যতা নিশ্চিত বলেন, রাতে ছেড়া তার জোড়া দিয়ে কিছু স্থানে বিদ্যুৎ সরবরাহ স্বাভাবিক করা গেলেও তিনটি ইউনিয়নে সম্পূর্ণরুপে বিদ্যুৎ সরবরাহ করা যায়নি।


শনিবার দুপুরে কমলগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ মাহমুদুল হক, উপজেলা প্রকল্প কর্মকর্তা মোহাম্মদ আসাদুজ্জামান ক্ষতিগ্রস্ত মাধবপুর, ইসলামপুর ও আদমপুর ইউনিয়ন এলাকা পরিদর্শণ করেন। কমলগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ মাহমুদুল হক শুক্রবারের ঘূর্নিঝড়ে ক্ষয় ক্ষতির সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, দুর্বল কাঠামোওয়ালা প্রায় দেড় শতাধিক কাঁচা ঘর সম্পূর্ণরুপে বিধ্বস্ত হয়েছে। আরও প্রায় দুই শত ঘর আংশিক বিধ্বস্ত হয়েছে। ঝড়ের সময় বড় গাছ ভেঙ্গে পড়তে দেখে আতঙ্কে এক নারীর মৃত্যুসহ কয়েকজন আহত হওয়ার সত্যতাও নিশ্চিত করেন নির্বাহী কর্মকর্তা। কমলগঞ্জ উপজেলা প্রকল্প কর্মকর্তা মোহাম্মদ আসাদুজ্জামান বলেন, সরেজমিন পরিদর্শন চলছে। এখন ইউপি চেয়ারম্যানদের কাছ থেকে ক্ষতিগ্রস্তদের সঠিক তালিকা সংগ্রহ করা হচ্ছে। দ্রুত সময়ে ক্ষতিগ্রস্তদের সহায়তা প্রদান করা হবে।
আদমপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আবদাল হোসেন ও মাধবপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান পুষ্প কুমার কানু ঘূর্ণিঝড়ের ব্যাপকতার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, ক্ষয় ক্ষতির পরিমাণ আরও বেড়ে যাবে। এখনও প্রত্যন্ত এলাকা থেকে নতুন করে তথ্য আসছে। তাই শনিবার বিকালের মধ্যে ক্ষয় ক্ষতির সঠিক তথ্য প্রদান করা হবে উপজেলা প্রশাসনে।
পাত্রখোলা চা বাগান ব্যবস্থাপক শামছুল ইসলাম ও ধলই চা বাগানের ব্যবস্থাপক দিলীপ সরকার বলেন, ঘূর্ণিঝড়ে চা বাগানের প্লান্টেশন এলাকায় ছায়াদানকারী অনেক গাছ ও শ্রমিক বস্তির অসংখ্য গাছ ভেঙ্গে পড়েছে।

সংবাদটি শেয়ার করতে নিচের “আপনার প্রিয় শেয়ার বাটনটিতে ক্লিক করুন”

মন্তব্য করুন

Social Media Auto Publish Powered By : XYZScripts.com