কমলগঞ্জে কালবৈশাখী ঝড় ও শিলাবৃষ্টিতে কমলগঞ্জে অর্ধ শতাধিক ঘর সম্পূর্ণরুপে ও দুই শতাধিক ঘর আংশিক বিধ্বস্ত: দেয়াল চাপায় আহত-১
কমলগঞ্জ প্রতিনিধি॥ কমলগঞ্জ উপজেলার উপর দিয়ে শুক্রবার ৫ মে রাত সোয়া দশটায় বয়ে যাওয়া কাল বৈশাখী ঘূর্ণিঝড়ে তিনটি ইউনিয়নে অর্ধ শতাধিক আঁধা কাচা ঘর সম্পূর্ণরুপে ও দুই শতাধিক ঘর আংশিক বিধ্বস্ত হয়েছে। ঝড়ের সাথে শিলা বৃষ্টিতে চা গাছের কুঁড়িসহ মৌসুমী ফল আম, লিচু ও কাঁঠালের ব্যাপক ক্ষতি হয়। শমশেরনগর চা বাগানের ফাঁড়ি বাগান বাঘিছড়ায় মাটির দেয়াল চাপায় এক ব্যক্তি আহত হয়েছে। ঝড়ের সময় গাছ ভেঙ্গে পড়ে ও ঝড়ের তান্ডবে ৪টি বৈদ্যুতিক খুঁটি ভাঙ্গাসহ বিদ্যুৎ ব্যবস্থার ব্যাপক ক্ষতি সাধন হয়।
শুক্রবার রাত সোয়া দশটায় আকস্মিকভাবে আকাশ কালো করে মেঘের গর্জনের সাথে সাথেই শুরু হয় কাল বৈশাখী ঝড় আর ভারী বৃষ্টি। বৃষ্টির সাথে অনবরত শিলা পতন হতে থাকে। ঝড়ে কমলগঞ্জ উপজেলার শমশেরনগর, পতনউষার ও মুন্সীবাজার ইউনিয়নে গাছপালা ও ঘর ভেঙ্গে ব্যাপক ক্ষতি সাধন হয়।
শনিবার সকালে পতনঊষার ইউনিয়নের মনসুর গ্রামে গিয়ে দেখা যায় কৃষক আইয়ুব মিয়ার বসতঘরের সবকটি চাল ঘূর্ণিঝড়ে উপড়ে যায়। তিনি বর্তমানে খোলা আকাশের নিচে আছেন। মনসুরপুর গ্রামের হুছন মিয়া, সমেদ মিয়া, সিতার মিয়া, গৌছ আলী, জাহির আলী, সাহিদ মিয়া, খালিক মিয়া, জামেদ আলী, কুতুব আলী, মকছদ আলী, মতিন মিয়া, পতনঊষার গ্রামের ফারুক আহমদ এর বসতঘরের চালের একাধিক স্থানে বড় বড় ছিদ্র হয়েছে শিলাবৃষ্টির কারণে। একই গ্রামের রাজমিস্ত্রী মনির মিয়ার বসতঘর সম্পূর্ণরুপে বিধ্বস্ত হয়েছে।
পতনউষার ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান প্রকৌশলী তওফিক আহমদ বলেন, ঝড়ের তান্ডবে তার ইউনিয়নের মনসুরপুর, ধোপাটিলা, মিনারাই, পতনঊষার, ব্রাক্ষ্মণঊষার, নোয়াগাঁও, শ্রীরামপুর, কবিরাজীসহ বিভিন্ন গ্রামের কমপক্ষে ২৫টি ঘর সম্পূর্ণরুরপে বিধ্বস্ত হয়। শিলা বৃষ্টির আঘাতে দুই শতাধিক ঘরের চাল ঝাঝরা হয়ে গেছে। প্রায় দুই শতাধিক গাছ ভেঙ্গে পড়েছে। তিনি আরো বলেন, দূর্যোগ যেন আমাদের ছড়ছে না। আগাম বন্যায় কেওলার হাওর পুরাপুরি বিনষ্ট হয়েছে। অবশিষ্ট কিছু বোরো ছিলো, কাটার উপযুক্ত হয়েছিলো । কিন্তু শুক্রবার রাতের ঘূর্ণিঝড় ও শিলা বৃষ্টি সব ধান ঝরে গেছে। এত বেশী সময় ও বড় শিলাবৃষ্টি ৫০ বছরেও হয়নি। হাজার হাজার বক শারস সহ বিভিন্ন জাতের পাখির মৃত্যু হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত অসহায় লোকগুলোর প্রতি জরুরী ভিত্তিতে মানবিক সহায়তার জন্য স্থানীয় সংসদ সদস্য, উপজেলা চেয়ারম্যান ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার প্রতি সদয় দৃষ্টি কামনা করেন।
মুন্সীবাজার মুন্সীবাজার ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুল মোতালিব তরফদার জানান তার ইউনিয়নে প্রায় ২০টি ঘর সম্পূর্ণরুপে বিধ্বস্ত হয়েছে। অর্ধ বিধ্বস্ত হয়েছে আরও অর্ধ শতাধিক ঘর। আর শিলা বৃষ্টিতেও অসংখ্য ঘরের টিনের চাল ঝাঝরা হয়ে গেছে। ব্যাপকহারে গাছ ভেঙ্গে পড়েছে।
শমশেরনগর ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, কাল বৈশাখী ঝড়ে এ ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামে কমপক্ষে দশটি ঘর সম্পূর্ণরুপে বিধ্বস্ত হয়েছে। আর ৩০ থেকে ৩৫ টি ঘর অর্ধ বিধ্বস্ত হয়েছে। ভারী বৃষ্টি ও ঝড়ের কারণে শমশেরনগর চা বাগানের ফাঁড়ি বাগান বাঘিছড়ায় ঘরের মাটির দেয়াল চাপায় রাম কুমার মুন্ডা (৪৫) এক ব্যক্তি আহত হয়ে ক্যামেলিয়া ডানকান ফাউন্ডেশন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন।
উপজেলা প্রকল্প কর্মকর্তা মোহাম্মদ আসাদুজ্জামান বলেন, শুক্রবার রাতের ঝড়ে শমশেরনগর, পতনউষার ও মুন্সীবাজার ইউনিয়নে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়। সংশ্লিষ্ট চেয়ারম্যানরা সরেজমিন তথ্য সংগহ করে তালিকা পাঠাবেন। তবে প্রাথমিকভাবে তিনি খোঁজ নিয়ে জেনেছেন কমপক্ষে অর্ধ শতাধিক ঘর সম্পূর্ণরুপে বিধ্বস্ত ও দেড় শতাধিক ঘর আংশিক বিধ্বস্ত হয়েছে। ঝড়ের সাথে শিলা বৃষ্টিতে শমশেরনগর, পতনউষার ও মুন্সীবাজার ইউনিয়নে গাছে আসা মৌসুমী ফল আম কাঁঠাল ও লিচু ঝড়ে পড়েছে। চা বাগানগুলোতে চায়ের নতুন কুঁড়িও ঝড়ে পড়ে।
এ দিকে ঝড়ের কারণে মৌলভীবাজার পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি কমলগঞ্জ জোনালের অধীন লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানের ভিতর, শমশেরনগর ইউনিয়ন, পতনউষার ও মুন্সীবাজার ইউনিয়ন ও কুলাউড়া শরীফপুর ইউনিয়ন এলাকায় বৈদ্যুতিক লাইনের ব্যাপক ক্ষতি সাধন হয়। ফলে শুক্রবার রাত সোয়া দশটা থেকে শনিবার বিকাল ৩টা পর্যন্ত কমলগঞ্জে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ ছিল। পল্লীঁ বিদ্যুৎ সমিতির কমলগঞ্জ জোনাল ব্যবস্থাপক মোবারক হোসেন জানান, ঝড়ে লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানের ভিতর ৩৩ কেভি বৈদ্যুতিক লাইনের ৪টি স্পেন (টানা চার লাইন তার) খুঁটি থেকে ছিটকে পড়েছে। শরীফপুর ইউনিয়ন এলাকার চাতলাপুর চা বাগান ও নছিরগঞ্জ এলাকায় ২টি বৈদ্যুতিক খুটি ভেঙ্গে পড়ে। তাছাড়া আড়াই শতাধিক স্থানে তার ছিড়ে পড়েছে।
মন্তব্য করুন