কমলগঞ্জে কিশোরীকে ধর্ষনের চেষ্টা : তিন দিনেও থানা মামলা গ্রহন করেনি : বিচার প্রার্থনা করে দরিদ্র বাবা দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন
কমলগঞ্জ প্রতিনিধি॥ কমলগঞ্জ উপজেলার শমশেরনগর রেলওয়ে কলোনিতে এক কিশোরীকে ধর্ষনের চেষ্টা করে বিবাহিত এক ব্যক্তি। এ ঘটনায় কিশোরীর দরিদ্র বাবা অভিযোগ নিয়ে তিন দিন ধরে থানায় গেলে থানা অভিযোগটি গ্রহন করেনি। অন্য দিকে কিশোরীর বাবা সুবিচার প্রার্থনা করে দ্বারে দ্বারে ঘুরলেও বিচার পাচ্ছেন না। ৭ সেপ্টেম্বর বুধবার শমশেরনগর রেলওয়ে কলোনীতে এ ঘটনাটি ঘটে।
নির্যাতিতা কিশোরীর বাবা শফিক মিয়া বলেন, তিনি একজন দরিদ্র দিন মজুর। অভাবের তাড়নায় তিনি স্ত্রী সন্তানদের নিয়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগর থেকে এসে শমশেরনগর রেলওয়ে কলোনীর একটি ঘর ভাড়া নিয়ে বসবাস করছেন। তিনি পুরাতন কাগজ, লোহা লক্কড়সহ সামগ্রী খোঁজে বের করে ভাঙ্গারী দোকানে বিক্রি করে সংসার চালান। ভোর বেলা বের হয়ে রাতে বাড়ি ফিরেন।
বুধবার ৭ সেপ্টেম্বর রাত ১০টায় কিশোরী মেয়ে (১৫) প্রকৃতির ডাকে সাড়া দিয়ে ঘর থেকে বের হলে প্রতিবেশী ডেকোরেটার্স কর্মী বিবাহিত জুয়েল মিয়া মুখে কাপড় দিয়ে তাকে ধরে নিয়ে টানা হেছড়াসহ এক পর্যায়ে ধর্ষনের চেষ্টা করে। এতে সে চিৎকার দিয়ে প্রতিবেশীরা ঘর থেকে বেরিয়ে আসলে জুয়েল পালিয়ে যায়। ঘটনার পর তিনি শমশেরনগর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানের কাছে গেলে তিনি থানায় অভিযোগ দিতে বলেন।
পরবর্তীতে এ ঘটনার বিবরণ দিয়ে একটি লিখিত অভিযোগ নিয়ে তিনি গত তিন দিন ধরে ঘুরলে কমলগঞ্জ থানা কর্তৃপক্ষ এখনও তা গ্রহন করেনি। বিষয়টি স্থানীয়ভাবে ইউপি সদস্যদের মাধ্যমে সামাজিক বৈঠকে সমাধানে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা একজন পুরুষ ইউপি সদস্য ও একজন নারী সদস্যকে দায়িত্ব দেন। তারপরও কোন সামাজিক বৈঠক হয়নি।
শমশেরনগর ইউনিয়নের ৫নং ওয়ার্ড সদস্য আজিজুর রহমান চৌধুরী ও নারী সদস্য (৪, ৫ ও ৬ নং ওয়ার্ড) শারমিন চৌধুরী অভিযোগের সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, যেহেতু ধর্ষণ হয়নি তাই সামাজিক বিচারে সমাধান করতে পারবেন বলে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা পরামর্শ দিয়েছিলেন। তবে নারী নির্যাতনের এই ঘটনা আসলে সামাজিক বিচারে সমাধান সম্ভব কিনা এই ভয়ে তারা আর সামাজিক বৈঠক করেননি। শমশেরনগর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জুয়েল আহমদ ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, আসলে মেয়েটি ধর্ষণের শিকার হতে পারে। তবে ভয়ে ধর্ষণের চেষ্টা বলে অভিযোগ দিতে চাইছে। ঘটনাটি খুবই স্পর্শ কাতর তাই তিনি এটিকে সামাজিক বিচারের চেষ্টা করতে চান না।
নির্যাতিতা কিশোরীর বাবা মো: শফিক মিয়া এ প্রতিনিধিকে বলেন, এ অবস্থায় তিনি কি করবেন তা ভেবে পাচ্ছেন না। তিনি খুবই দরিদ্র লোক। থানায় গেলেও থানা অভিযোগ গ্রহন করছে না। তার নাই কোন টাকা পয়সা তাই বলে কি থানায় অভিযোগ দিতে পারবেন না বা জনপ্রতিনিধিরা সুষ্ঠু বিচার করে দিবেন না।
এ দিকে অভিযুক্ত জুয়েলের সাথে কথা বলার চেষ্টা করলেও ঘটনার পর থেকে সে পলাতক থাকায় কথা বলা যাচ্ছে না। জুয়েলের শ্বশুর রইছ মিয়া বলেন, এ ধরনের কোন ঘটনা তিনি জানেন না। তাই কিছু বলতে পারবেন না।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে কমলগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকের মুঠোফোনে (০১৭১৩৩৭৪৪৪১) দফায় দফায় চেষ্টা করেও কথা বলা যায়নি। তবে কমলগঞ্জ থানার দায়িত্বরত কর্মকর্তা উপ-পরিদর্শক (এসআই) সনক কান্তি দাশ বলেন, এ ধরণের কোন অভিযোগ তার জানা নেই।
মন্তব্য করুন