কমলগঞ্জে খাদ্য বান্ধব কর্মসূচীতে অনিয়ম নভেম্বর মাসের চাল উত্তোলন হয়নি ॥ যাচাই বাছাই চলছে কার্ড
কমলগঞ্জ প্রতিনিধি॥ সরকারের খাদ্য বান্ধব কর্মসূচীর আওতায় কমলগঞ্জে ১০ টাকা কেজি দরে হত-দরিদ্রের মাঝে চাল বিতরণে অনিয়ম বিষয়ে সহ বিভিন্ন জাতীয় সংবাদ প্রকাশের পর ইউনিয়ন থেকে কার্ড ফেরৎ নিয়ে তা যাচাই বাছাই শুরু করেছে উপজেলা প্রশাসন। ফলে খাদ্য গোদাম থেকে নভেম্বর মাসের চাল উত্তোলণ করতে পারেননি ডিলাররা। ৯টি ইউনিয়নে সচ্ছল, দোকানী, প্রবাসী পরিবার ও জনপ্রতিনিধির স্বজনদের মাঝে কার্ড বিতরণ করা হয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে।
জানা যায়, চেয়ারম্যান, সদস্যদের পরিচিত স্বজন, স্বচ্ছল, দোকানী ও প্রবাসী পরিবার সদস্য অনেকেই ১০ টাকা কেজি চালের কার্ড পেয়েছেন। প্রথমে বিষয়টিকে আমলে না নিয়ে জনপ্রতিনিধিরা ইচ্ছেমতো কার্ড বিতরণ করেন। দেশব্যাপী এ অনিয়মের উপর সংবাদ পত্রে প্রতিবেদন প্রকাশ হতে থাকলে সারাদেশে তোলপাড় দেখা দেয়। কমলগঞ্জে অনিয়ম বিষয়ে ইত্তেফাকসহ অন্যান্য পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশ হলে কমলগঞ্জ প্রশাসনও বিতরণকৃত কার্ড জব্দ করে অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্তু শুরু করেছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দু’জন ডিলার ও উপজেলা প্রশাসন কার্যালয় সূত্র জানায়, রবিবার ৬ নভেম্বর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ডিলারদের নিয়ে মতবিনিময় সভা করেছেন। সভায় ডিলারদের বক্তব্যেও নিজ উদ্যোগে গোপন তদন্তে অনিয়মের অভিযোগের সত্যতা পেয়েছেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা। ডিলারের দোকান থেকে ১০ টাকা মূল্যের চাল নিতে দেখা গেছে অনেক বিত্তবান, ভূমির মালিক দোকানী, দলীয় অবস্থাশালী ব্যক্তিবর্গ ও প্রবাসী পরিবার সদস্যদের। অথচ হত দরিদ্র অসংখ্য লোক রয়েছেন যারা এখনও কার্ড পাননি। অনিয়ম করে যারাই কার্ড নিয়েছেন তারা আবার ১০ টাকা দরে চাল কিনে চালের দোকানে ২৫ টাকা দরে বিক্রি করেছেন।
অবশেষে কমলগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সংম্লিষ্ট উর্দ্ধতন কর্মকর্তার সাথে কথা ১০ টাকা দরের চাল বিক্রয় বন্ধ রেখে আবারও বিতরণকৃত কার্ডের তালিকা মাঠ পর্যায়ে যাচাই বাছাই শুরু করেছেন। অন্যদিকে পুরোপুরি যাচাই বাছাই শেষ না হওয়া পর্যন্ত ডিলাররা খাদ্য গোদাম থেকে চাল উত্তোলণ না করতে নির্দেশনা দিয়েছেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা। ফলে সরকারী খাদ্য গোদাম থেকে চলতি নভেম্বর মাসের কোন চাল উত্তোলণ করেননি ডিলাররা।
কমলগঞ্জ উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রণ কর্মকর্তা শরিফ মোল্লা অভিযোগের সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, সরকারী নির্দেশনা সঠিকভাবে না বুঝে কমলগঞ্জে নয়টি ইউনিয়নে অতিরিক্ত কার্ড বিতরণ করা হয়েছে। কমলগঞ্জের নয়টি ইউনিয়নের জন্য মোট ৬ হাজার ৩৮৭টি কার্ড বিতরণ করা হয়েছে। প্রকৃত পক্ষে বিতরণ করার কথা ছিল ৫ হাজার ২৪৪টি। এখানে ১ হাজার ১৪৩টি কার্ড অতিরিক্ত বিতরণ করা হয়। অতিরিক্ত কার্ড বিতরণ ও অনিয়মের কারণে এখন নির্বাহী কর্মকর্তার নির্দেশে কার্ডের যাচাই বাছাই চলছে। তিনি আরও বলেন, অতিরিক্ত ১ হাজার ১৪৩ টি কার্ড আড়াআড়িভাবে ইউনিয়ন পর্যায় থেকে প্রত্যাহার করে নেওয়া হবে। আর বাকী কার্ড নতুন করে যাচাই বাছাই শেষে প্রকৃত দুঃস্থ্য ও দরিদ্রদের মাঝে বিতরণ করা হবে।
কমলগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ মাহমুদুল হক বলেন, উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) রফিকুল আলমকে প্রধান করে একটি তদন্ত কমিটি করা হয়েছে। এই কমিটি অনিয়ম বিষয়ে তদন্ত করে দেখছে। তাছাড়া কিছু কিছু ক্ষেত্রে নাম পরিবর্তনও হচ্ছে। সব মিলিয়ে জোর তদন্ত করে দেখা হচ্ছে।
মন্তব্য করুন