কমলগঞ্জে ঘূর্ণিঝড়ের তান্ডবে সব হারালেন লীলাই বিবি
কমলগঞ্জ প্রতিনিধি॥ কমলগঞ্জ উপজেলার সীমান্তবর্তী ৯নং ইসলামপুর ইউনিয়নে ২৮ এপ্রিল শুক্রবারের সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড়ে তান্ডবে কোনাগাঁও গ্রামের লীলাই বিবি (৬০)’র একমাত্র বসতভিটাটি মাটির সাথে মিশে যায়। অন্যের বাড়িতে ঝিয়ের কাজ করা ষাটোর্ধ্ব এ অসহায় মহিলা এখন চোখের জলে খোলা আকাশে দিন কাটাচ্ছেন। ভাঙ্গাঘরের নিচে বসে অসহায় চোখে তাকিয়ে আছেন, কারো সহযোগিতা পাবেন বলে। কিন্তু এখ নপর্যন্ত কোন ধরণের সহযোগিতা তার ভাগ্যে ছুটেনি।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, লীলাই বিবির একমাত্র কুড়েঘরটি ঘূর্ণিঝড়ের তান্ডবে মাটির সাথে মিশে গেছে। আলাপকালে জানা যায়, ১৫-২০ বছর আগে স্বামী ষোলই মিয়া তিন সন্তানকে রেখে মারা যান। জীবিকার তাগিতে পরের বাড়িতে ঝিয়ের কাজ করে কোন রকমে জীবন চালাচ্ছেন। তিন সন্তানের লালন পালন শেষে অবশিষ্ট কোন আয় থাকে না। দুই ছেলে বিয়ের পর পৃথক হয়ে যায়। আর মেয়েকে দিতে ভিটামাটি সব বিক্রি করে দিয়েছেন। এখন সরকারি খাস জায়গায় মাথাগোঁজার ঠাই হিসেবে দায়-দেনা করে ছোট একটি কুড়েঘর তৈরী করেছিলেন। সেখানে থেকেই তিনি পরের বাড়িতে ঝিয়ের কাজ করে যা পেতেন তা দিয়েই চলতো লীলাই বিবির একার সংসার। কিন্তু তার মাথা গোজার একমাত্র অবলম্বনটি ঘূর্ণিঝড়ে ধ্বংস হওয়ায় নিঃস্ব হয়ে গেছেন। তার আশা সমাজের বিত্তবান মানুষেরা এগিয়ে এলে হয়তো এ লীলাই বিবি জীবনের বাঁচার জন্য নতুন দিশা খোঁজে পাবে।
উল্লেখ্য, শুক্রবার কমলগঞ্জ উপজেলায় শুক্রবার ২৮ এপ্রিল সন্ধ্যায় আকস্মিক সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড়ে তিনটি ইউনিয়নে দেড় শতাধিক কাঁচা ঘর সম্পূর্ণরুপে বিধ্বস্ত হয়েছে। আরও প্রায় দুই শত কাঁচা ঘর আংশিক বিধ্বস্ত হয়েছে। ঝড়েরর সময় চোখের সামনে গাছ ভেঙ্গে পড়ছে দেখে আতঙ্কে স্ট্রোক করে এক নারীর মৃত্যু হয়েছে। একটি চা বাগানে দেয়াল চাপায় এক চা শ্রমিকের একটি গরুও মারা গেছে। ঝড়ের কারণে ইসলামপুর, আদমপুর ও মাধবপুর ইউনিয়নে সহ¯্রাধিক ছোট বড় গাছ ভেঙ্গে পড়েছে। দুটি ইউনিয়নে ১৫টি বৈদ্যুতিক খুঁটি ভেঙ্গে পড়ে। ঘুর্ণিঝড়ে আহত হয়েছেন কমপেক্ষ ১৫ জন। ঘূর্ণিঝড়ে রাস্তার উপর একাধিক গাছ উপড়ে পড়লে শুক্রবার সন্ধ্যা থেকে কমলগঞ্জ উপজেলার ভানুগাছ-পাত্রখোলা সড়কে যানবাহন চলাচল বন্ধ ছিল। ঝড়ের সময় চোখের সামনে একটি বড় গাছ ভেঙ্গে পড়তে দেখে আতঙ্কে ইসলামপুর ইউনিয়নের শ্রীপুর গ্রামের আছকন মিয়ার স্ত্রী সাহেরা বিবি (৫০) ঘটনাস্থলেই স্ট্রোক করে মারা গেছেন। মাধবপুর ইউনিয়নের পাত্রখোলা চা বাগানের পশ্চিম লাইন শ্রমিক বস্তির শুকুয়া রিকিয়াশনের ঘরের দেয়াল চাপায় তার একটি গরু মারা গেছে। ঝড়ে শ্রীপুর কোণাগাঁও-এর ভিক্ষক লিলাই বিবি(৬০)-র ঘর ও একই গ্রামের মৃত মুক্তিযোদ্ধা মন্তাজ মিয়ার কাঁচ ঘরটিও সম্পূর্ণরুপে বিধ্বস্ত হয়েছে। ঘূর্ণিঝড়ে আদমপুরের উত্তরভঅগ গ্রামের আতিকুর রহমান, পাত্রখোলা চা বাগানের শ্রমিক শ্যামাকান্ত ভৌমিকসহ তিনটি ইউনিয়নে কমপক্ষে ১৫ জন আহত হয়েছেন। এখনও অনেক এলাকায় বিদ্যুৎবিহীন অবস্থায় রয়েছে। ক্ষতিগ্রস্থদের এখনও ত্রাণসামগ্রী পৌঁছে দেয়া হয়নি বলে জানা যায়।
কমলগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ মাহমুদুল হক, উপজেলা প্রকল্প কর্মকর্তা মোহাম্মদ আসাদুজ্জামান ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা শনিবার ক্ষতিগ্রস্ত মাধবপুর, ইসলামপুর ও আদমপুর ইউনিয়ন এলাকা পরিদর্শন করেন। কমলগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ মাহমুদুল হক শুক্রবারের ঘূর্নিঝড়ে ক্ষয় ক্ষতির সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, দুর্বল কাঠামোওয়ালা প্রায় দেড় শতাধিক কাঁচা ঘর সম্পূর্ণরুপে বিধ্বস্ত হয়েছে। আরও প্রায় দুই শত ঘর আংশিক বিধ্বস্ত হয়েছে। ঝড়ের সময় বড় গাছ ভেঙ্গে পড়তে দেখে আতঙ্কে এক নারীর মৃত্যুসহ কয়েকজন আহত হওয়ার সত্যতাও নিশ্চিত করেন নির্বাহী কর্মকর্তা। কমলগঞ্জ উপজেলা প্রকল্প কর্মকর্তা মোহাম্মদ আসাদুজ্জামান বলেন, ক্ষতিগ্রস্তদের সঠিক তালিকা সংগ্রহ করে জেলা প্রশাসেেকর কাছে প্রেরণ করা হয়েছে। দ্রুত সময়ে ক্ষতিগ্রস্তদের সহায়তা প্রদান করা হবে।
মন্তব্য করুন