কমলগঞ্জে ছাত্রলীগের ১০ সদস্যকে বহিষ্কার নিয়ে শমশেরনগরে মিছিল-পাল্টা মিছিল ॥ যুবলীগ নেতার উপর হামলা
কমলগঞ্জ প্রতিনিধি॥ মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলার শমশেরনগরে একটি সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গ করে বিক্ষোভ মিছিল দিয়ে বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি সৃষ্টির অভিযোগে কলেজ শাখা ছাত্রলীগ যুগ্ম সম্পাদকসহ ১০ জন ছাত্রলীগ সদস্যকে বহিষ্কার করার জের ধরে ছাত্রলীগের দুই গ্রুপের মিছিল-পাল্টা মিছিল বের হয়। ছাত্রলীগের বিক্ষোভ মিছিলকালে ইউনিয়ন যুবলীগ নেতার উপর হামলার ঘটনায় শমশেরনগরে ছাত্রলীগ, যুবলীগ ও আওয়ামীলীগের তিন ধারায় উত্তেজনা বিরাজ করছে। ঘটনাটি ঘটেছে, গত বৃহস্পতিবার (৮ ডিসেম্বর) রাত সাড়ে ৭টায় শমশেরনগর চৌমুহনা চত্বরে।
জানা যায়, গত ৪ ডিসেম্বর সন্ধ্যায় শমশেরনগরে ইউনিয়ন যুবলীগের উদ্যোগে কমলগঞ্জ উপজেলা চেয়ারম্যান, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যকরী কমিটির সদস্য অধ্যাপক রফিকুর রহমানকে সংবর্ধনা প্রদান করা হয়। এ সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যকরী কমিটির আরেক সদস্য সিলেটের সাবেক সিটি মেয়র বদর উদ্দিন আহমদ কামরান। এ সংবর্ধনা অনুষ্ঠানের শেষ পর্যায়ে অতিথিরা চলে যাবার সময় ছাত্রলীগের একটি অংশ কমলগঞ্জ উপজেলা ছাত্রলীগ সভাপতি মো. সানোয়ার হোসেনের বিরুদ্ধে অশালীন উক্তিসহ বিক্ষোভ মিছিল করায় স্থানীয় নেতারা তাদের সরিয়ে দেন। এ ঘটনার সূত্র ধরে কমলগঞ্জ উপজেলা ছাত্রলীগের সাধারন সম্পাদক শাহেদুল আলম স্বাক্ষরিত প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে ১০ ছাত্রলীগ সদস্যকে বহিষ্কার করেন।
প্রেসবিজ্ঞপ্তি সূত্রে জানা যায়, দলীয় শৃঙ্খলা ভেঙ্গে একটি সংবর্ধনা অনুষ্ঠান ব্যহত করার অভিযোগে নিজেদের মাঝে তদন্তক্রমে কমলগঞ্জ উপজেলা ছাত্রলীগ গত বুধবার রাত আটটায় কমলগঞ্জ উপজেলা সদরের ভানুগাছ বাজারের উপজেলা আওয়ামী লীগের দলীয় কার্যালয়ে জুরুরী সভা করে। এই জরুরী সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ঘটনার জন্য দায়ী হিসাবে শমশেরনগরের সুজা মেমোরিয়াল কলেজ শাখা ছাত্রলীগের যুগ্ম সম্পাদক পাভেল আহমদসহ ছাত্রলীগের ১০ সদস্যকে বহিষ্কার করা হয়। বহিষ্কৃত বাকী সদস্যরা হলেন মুহিবুল ইসলাম, মোস্তাকিম আহমদ, মুজিবুর রহমান শাকিব, শেখ মাজহারুর ইসলাম, জুনেদ আহমদ চৌধুরী, মিসতা আহমদ রাহী, রাসেল আহমদ, ইমন আহমদ ও ফয়ছল আহমদ।
ছাত্রলীগ থেকে বহিষ্কার পদ্ধতি অগঠনতান্ত্রিক দাবি করে উপজেলা ছাত্রলীগ সভাপতি সানোয়ার হোসেনের বিরুদ্ধে শমশেরনগরে বহিষ্কৃতরাসহ ছাত্রলীগের একাংশ বুধবার রাতে ঝাড়–সহকারে বিক্ষোভ মিছিল বের করে। একই সাথে উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি সানোয়ার হোসেনের সমর্থনেও বহিষ্কারের পক্ষে ছাত্রলীগের একটি অংশ মিছিল বের করে। ছাত্রলীগের দুই পক্ষের মিছিল বের হলে বৃহস্পতিবার রাতে শমশেরনগর বাজারে টান টান উত্তেজনা বিরাজ করায় ব্যবসায়ীসহ সাধারণ লোকজন আতংকিত হয়ে পড়েছিলেন। উত্তেজনার এক পর্যায়ে উপজেলা যুবলীগ সদস্য ব্যবসায়ী আকমল হোসেন শমশেরনগর ইউনিয়ন যুবলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক গোপাল বর্মা (মনি)-কে প্রহার করেন। এ ঘটনার পর আবার শমশেরনগরে ছাত্রলীগ, যুবলীগ ও আওয়ামীলীগের মাঝে তিন ধারায় উত্তেজনার খবর পেয়ে কমলগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার বদরুল হাসানের নেতৃত্বে পুলিশি টহল শুরু হলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে।
বহিষ্কৃত ছাত্রলীগ সদস্য মুহিবুল ইসলাম বলেন, কোন প্রকার কারণ দর্শানোর নোটিশ প্রদান না করে, আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ না দিয়ে উদ্দেশ্যমূলক একটি এলাকার ছাত্রলীগের ১০জনকে বহিষ্কার করা হয়েছে। যাহা গঠণতন্ত্র বিরোধী। তাই উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতির বিরুদ্ধে বিক্ষোভ মিছিল বের করা হয়েছিল। তখনই শমশেরনগর যুবলীগের কয়েক নেতার উস্কানীতে ছাত্রলীগের আরকেটি অংশ মিছিল বের করে।
শমশেরনগর ইউনিয়ন যুবলীগ যুগ্ম আহ্বায়ক গোপাল বর্মা মনি অভিযোগ করে বলেন, গত ৪ ডিসেম্বর সংবর্ধনা অনুষ্ঠানেও ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের একটি অংশের উস্কানীতে কতিপয় ছাত্রলীগ সদস্য বিক্ষোভ মিছিল করে অনুষ্ঠান বানচালে চেষ্টা করেছিল। আওয়ামীলীগের ঐ অংশের নেতাদের উস্কানীতে আবার বৃহস্পতিবার বিক্ষোভ মিছিল করে পরে তাকে (গোপাল বর্মাকে) প্রহার করা হয়। এ ঘটনার প্রতিবাদে শুক্রবার রাতে আবার যুবলীগের একটি জরুরী সভা হওয়ার কথা রয়েছে।
কমলগঞ্জ উপজেলা ছাত্রলীগ সাধারন সম্পাদক শাহেদুল আলম দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের দায়ে শমশেরনগর ইউনিয়ন ছাত্রলীগ থেকে ১০ জনকে বহিষ্কারের সত্যতা স্বীকার করে বলেন, সাংগঠনিক প্রক্রিয়ায় অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহন করা হয়েছে।
মন্তব্য করুন