কমলগঞ্জে তলিয়ে যাওয়া ব্যাপক এলাকার ধান পচে গেছে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকরদের প্রধানমন্ত্রী বরাবরে স্মারকলিপি প্রদান

April 17, 2017,

কমলগঞ্জ প্রতিনিধি॥ মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জে টানা ভারী বৃষ্টিপাতে ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলের পানিতে ধলাই নদীর বাঁধ ভেঙ্গে ও সবগুলো পাহাড়ি ছড়ার পানি তীর উপচে গিয়ে শমশেরনগর, পতনউষার ও মুন্সীবাজার ইউনিয়নের নি¤œাঞ্চলের ব্যাপক এলাকার বোরো ফসল নিমজ্জিত করেছিল। টানা কয়েক দিন এসব জমির বোরো ফসল আটকা পড়া পানিতে নিমজ্জিত থেকে ধান পচে গেছে। প্রয়োজনীয় ক্ষতিপূরণ দাবী করে সোমবার ১৭ এপ্রিল সকাল সাড়ে ১১টায় কমলগঞ্জ উপজেলা প্রশাসনিক কার্যালয়ের সামনে অবস্থান নিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত তিন শতাধিক কৃষক উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী বরাবরে স্মারকলিপি প্রদান করেছেন।
কমলগঞ্জ উপজেলা প্রশাসনিক কার্যালয়ের সামনে তিন শতাধিক ক্ষতিগ্রস্ত কৃষক অবস্থান করছে শুনে কমলগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ মাহমুদুল হক কার্যালয় থেকে বের হয়ে কৃষকদের সামনে এসে তাদের বক্তব্য শুনে। এসময় লাঘাটাছড়া পানি ব্যবস্থাপনা সমবায় সমিতি লিঃ উপকারভোগী কৃষকদের পক্ষে সমিতির সভাপতি মো: দুরুদ আলী ও সাধারন সম্পাদক মো: সিদ্দিকুর রহমান স্বাক্ষরিত একটি স্মারকলিপি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে উপস্থাপন করা হয়। এ সময় কৃষকরা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে বলেন, তিনি এ উপজেলার বাস্তব চিত্র নিজে পরিদর্শণ করেছেন বলে তাঁর সুচিন্তিত সুপারিশসহ স্মারকলিপিটি দ্রুত মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বরাবরে প্রেরণ করার জন্য।
স্মারকলিপিতে বিগত বন্যায় কমলগঞ্জ উপজেলার নি¤œাঞ্চল থাকায় তারা সাধারণত: বোরো চাষাবাদের উপর তারা নির্ভরশীল। টানা কয়েকদিনের টানা বর্ষনের ফলে অতিসম্প্রতি কমলগঞ্জ উপজেলার ধলাই নদীর প্রতিরক্ষা বাঁধের দুটি স্থানে নদীভাঙ্গনের ফলে ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলের পানিতে কমলগঞ্জে অকাল বন্যার সৃষ্টি হয়েছিল। বন্যার পানিতে শমশেরনগর, পতনঊষার, মুন্সীবাজার ইউনিয়নের লাঘাটা ছড়া উপ-প্রকল্পের আওতাধীন ৪৩৮ হেক্টর বোরো ক্ষেত সম্পুর্ণরুপে বিনষ্ট হয়েছে। ধলাই নদীসহ উজানের সমস্ত পানির শেষ ঠিকানা শমশেরনগর ও পতনঊষার ইউনিয়নের কেওলার হাওর, মখাবিল, মাগুরাবিল, ইকড়াউনি বিল। উক্ত বিল সমুহের পানি একমাত্র লাঘাটা নদী দিয়ে রাজনগর উপজেলার কামারচাক ইউনিয়ন হয়ে মনু নদীতে সংযুক্ত হয়েছে। লাঘাটা নদী ভরাট, গাছগাছালি, বাঁশঝাড় ও নদীতে মাছ নিধনের জন্য বাঁশের খর্ঁাটি স্থাপন করায় পানি নিস্কাশনে প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি হয়ে বন্যা ও ঢলের জলাবদ্ধতার কারনে ঐ এলাকার কৃষকগনের আউশ, আমন ও বোরো এই তিনটি ফসল প্রতি বছর বিনষ্ট হয়ে থাকে।

 

যার কারনে এলাকার দরিদ্র কৃষকগন ঋণগ্রস্ত হয়ে পড়েছে।
এমতাবস্থায় উক্ত এলাকার কৃষক সাধারনকে রক্ষার স্বার্থে ধলাই নদীর প্রতিরক্ষা বাঁধ মেরামত, লাঘাটা নদীর পানি নিস্কাশনে প্রতিবন্ধকতা অপসারন, খনন/সংস্কার, অকাল বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের ক্ষতিপূরণ প্রদান, পর্যাপ্ত পরিমানে কৃষকদের মাঝে কৃষিঋণ বিতরণ ও পূর্বের কৃষি ঋণের সুদ মওকুফ করার দাবি জানানো হয়েছে।
কমলগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ মাহমুদুল হক বলেন, প্রয়োজনীয় ক্ষতিপূরণ প্রাপ্তিতে মতামতসহ তিনি স্মারকলিপিটি প্রধানমন্ত্রী বরাবরে দ্রুত প্রেরণ করবেন। তার আগে কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের মাধ্যমে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের সহায়তা প্রদান করা হবে। তাছাড়া লাঘাটা নদীর ঝোপ ঝাড় অপসারণ করে সুষ্ঠু পানি প্রবাহের জন্য ১৫ দিনের মধ্যে ব্যবস্থা গ্রহন করবেন। এসময় উপস্থিত ছিলেন কমলগঞ্জ উপজেলা পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যান-১ পারভীন আক্তার (লিলি), কমলগঞ্জ উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) রফিকুল আলম, সমাজ সেবক ও ক্ষেত মজুর নেতা আব্দুল হান্নান (চিনু), লাঘাটাছড়া পানি ব্যবস্থাপনা সমবায় সমিতি লিঃ-এর সভাপতি মো: দুরুদ আলী, সহ-সভাপতি আরজু মিয়া, সাধারন সম্পাদক মো: সিদ্দিকুর রহমান, কৃষক নেতা জসিম উদ্দীন, কাজী ফজলুল হক ও মছদ্দর আলী প্রমুখ।

সংবাদটি শেয়ার করতে নিচের “আপনার প্রিয় শেয়ার বাটনটিতে ক্লিক করুন”

মন্তব্য করুন

Social Media Auto Publish Powered By : XYZScripts.com