কমলগঞ্জে দেড় মাসে ১৪টি ট্রান্সফরমার চুরি : ভোগান্তিতে বিদ্যুৎ গ্রাহকরা: গ্রেফতার-৬
কমলগঞ্জ প্রতিনিধি॥ কমলগঞ্জ উপজেলার বিভিন্ন স্থানে বৈদ্যুতিক ট্রান্সফরমার চুরির হার বৃদ্ধি পেয়েছে। মধ্য মার্চ থেকে কমলগঞ্জ উপজেলার আদমপুর, মাধবপুর, আলীনগর, মুন্সীবাজার ও শমশেরনগর ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রাম থেকে দেড় মাসে ১৪টি ট্রান্সফর্মার চুরি হয়। পুলিশ ট্রান্সফর্মার চুরির মামলায় সন্দেহজনকভাবে ৬ জনকে গ্রেফতার করেছে। ট্রান্সফরমার চুরির কারণে নতুনভাবে টাকা দিয়ে ট্রান্সফরমার কিনতে বিদুুৎ গ্রাহকরা ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন।
মৌলভীবাজার পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির (পবিস) কমলগঞ্জ জোনাল অফিস ও স্থানীয় এলাকাবাসী সূত্রে জানা যায়, ২ এপ্রিল মঙ্গলবার দিবাগত রাতে মুন্সীবাজার ইউনিয়নের নারায়নক্ষেত্র গ্রাম থেকে ১০ কেভি ক্ষমতা সম্পন্ন ১টি, রামচন্দ্র পুর গ্রাম থেকে ১৫ কেভি ক্ষমতা সম্পন্ন ২টি বৈদ্যুতিক ট্রান্সফরমার চুরি হয়। এছাড়া গত দেড় মাসের ভিতরে বিভিন্ন সময়ে উপজেলার আলীনগর ইউনিয়নের ফাজিলপুর গ্রাম থেকে ১৫ কেভি ক্ষমতা সম্পন্ন ৩টি, আদমপুর ইউনিয়নের নঈনারপার গ্রাম থেকে ১০ কেভি ক্ষমতা সম্পন্ন ৫টি ট্রান্সফর্মার চুরি হয়। ২৮ এপ্রিল শুক্রবার দিবাগত গভীর রাতে শমশেরনগর ইউনিয়নের রঘুনাথপুর গ্রাম থেকে ১৫ কেভি ক্ষমতা সম্পন্ন ১টি, ভলতপুর গ্রাম থেকে ২৫ কেভি ক্ষমতা সম্পন্ন ১টি ও নিত্যানন্দপুর গ্রাম থেকে ১০ কেভি ক্ষতা সম্পন্ন ১টি ট্রানসফর্মার চুরি হয়।
বৃহস্পতিবার ২৭ এপ্রিল রাত ১০টার পর থেকে শুরু হয় ঝড় আর বৃষ্টি। ঝড় বৃষ্টি শুরু হলে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ হয়ে যায়। এ সুযোগে চোরচক্র মাধবপুর ইউনিয়নের জপলার পার গ্রাম থেকে ১০ কেভি ক্ষমতা সম্পন্ন ২টি ও মাধবপুর মাঝের গাঁও গ্রাম থেকে ১৫ কেভি ক্ষমতা সম্পন্ন ৩টি ও ৫ কেভি ক্ষমতা সম্পন্ন ২টি ট্রান্সফর্মার চুরি করে নেয়। গত দেড় মাসে সর্বমোট ১৪টি বৈদ্যুতিক ট্রান্সফরমার চুরির ঘটনা ঘটেছে। এসব ট্রান্সফরমার চুরি হওয়ায় নতুন করে ট্রান্সফরমার স্থাপনের আগ পর্যন্ত গ্রামবাসীদের অন্ধকারে থাকতে হচ্ছে। দ্রুত ট্রান্সফরমান স্থাপন করতে গিয়ে দরিদ্র গ্রামবাসীরা অর্থ সংকটে পড়েছেন। পবিসের নিয়ম মেনে গ্রাহকরা আবার নিজের টাকা দিয়ে নতুনভাবে ট্রান্সফরমার কিনেও বিদ্যুৎ গ্রাহকরা ক্ষতির স্বীকার হচ্ছেন।
নারায়নক্ষেত্র গ্রামের মো. শাহজাহান আহমদ, জসিম মিয়া সহ বিদ্যুৎ গ্রাহকরা বলেন, চোরচক্র খুটির উপর ট্রান্সফর্মারের খোলস (কভার) রেখে ভিতর থেকে দামী তেল ও যন্ত্রাংশ চুরি করে নেয়। একই রাতে দুটি গ্রাম থেকে ৩টি ট্রান্সফরমার চুরি করে নিয়ে যায়। ফলে পোল্ট্রি খামারসহ প্রায় দেড়শ পরিবার এক সপ্তাহ অন্ধকারে ছিলেন। পরবর্তীতে টাকা দিয়ে নতুনভাবে ট্রান্সফরমার কিনে লাগাতে হয়েছে।
মৌলভীবাজার পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির কমলগঞ্জ জোনাল অফিসের জুনিয়র প্রকৌশলী বিদ্যুৎ রায় দেড় মাসে উপজেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে ১৪টি ট্রান্সফরমার চুরির সত্যতা নিশ্চিত করেন। কমলগঞ্জ জোনাল অফিসের ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার মোবারক হোসেন বলেন, ট্রান্সফরমার চুরির ফলে অধীনস্থ গ্রাহকরা প্রথম দফায় অর্ধেক টাকা এবং দ্বিতীয় বার চুরি হলে পুরো টাকা পরিশোধ করে ট্রান্সফরমার কিনে নিতে হয়। প্রতিটি ট্রান্সফরমার চুরির ঘটনায় পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির পক্ষ থেকে কমলগঞ্জ থানায় মামলা করা হয় বলে তিনি জানান।
মাধবপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান পুষ্প কুমার কানু, শমশেরনগর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জুয়েল আহমদ বলেন, এখন গ্রাহকরাই আবার নিজের টাকা দিয়ে ট্রান্সফর্মার কিনে নিতে হয়েছে ।
মৌলভীবাজার পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি কমলগঞ্জ জোনালের এজি এম (কম) গোলাম ফারুক বলেন, এক দিকে ঝড়ের কারণে বিদ্যুৎ বিপর্যয় হচ্ছে। তার উপর আবার ট্রান্সফর্মার চুরি যেন মরার উপর খড়ার ঘাঁ। ট্রান্সফর্মার চুরির ফলে গ্রাহকদের আর্থিক দুর্ভোগ সম্পর্কে এজিএম (কম) গোলাম ফারুক বলেন পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির বিধি মোতাবেক গ্রাহকদের ট্রান্সফর্মার কিনতে হচ্ছে। এখানে স্থানীয় কর্মকর্তাদের করার কিছু নেই।
কমলগঞ্জে বৈদ্যুতিক ট্রান্সফর্মার চুরির হার বৃদ্ধি ও পরবর্তীতে থানায় মামলার সত্যতা নিশ্চিত করে কমলগঞ্জ থানার ওসি (তদন্ত) মো: নজরুল ইসলাম বলেন, এ বিষয়ে জোর তদন্ত চলছে।
২২ এপ্রিল কমলগঞ্জ থানায় দায়েরকৃত মামলায় সন্দেহজনকভাবে কমলগঞ্জ উপজেলা সদরের কুমড়া কাপন গ্রামের বাবুল মিয়া (৩৬), জয়নুল মিয়া (৩৫), রফিক মিয়া (৫০), কাউছার মিয়া (২০) ও ব্রাহ্মণ বাড়িয়া জেলার নবীনগর উপজেলার লক্ষীপুর গ্রামের আরী আকবরের ছেলে নুরুল ইসলাম (২২), শমশেরনগর ইউনিয়নের হরিপুর গ্রাম থেকে তাজুদ মিয়া (২৫) নামে মোট ৬ জনকে সম্প্রতি গ্রেফতার করা হয়েছে।
মন্তব্য করুন