কমলগঞ্জে ধলাই নদীর প্রতিরক্ষা বাধেঁ ২টি স্থানে ভেঙ্গে পাহাড়ি ঢলের পানিতে ২৫টি গ্রাম প্লাবিত

April 6, 2017,

কমলগঞ্জ প্রতিনিধি॥ টানা ভারী বর্ষণে বুধবার ৫ এপ্রিল রাতে মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জে ধলীই নদীর প্রতিরক্ষা বাঁধের দুটি স্থান ভেঙ্গে উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলের পানি প্রবেশ করে ২৫টি গ্রাম প্লাবিত করে। প্লাবনের পানিতে বুধবার রাত থেকে বৃহস্পতিবার সকাল পর্যস্ত কমলগঞ্জ- মৌলভীবাজার সড়ক ্দুই ফুট পানিতে নিমজ্জিত থাকায় রাতে সড়ক যোগাযোগ বন্ধ ছিল।
৩ দিনের টানা বর্ষণে ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলের পানিতে বুধবার সন্ধ্যা থেকেই ধলাই নদীতে অস্বাভাবিকভাবে পানি বাড়তে থাকে। রাত সাড়ে আটটায় পানির ¯্রােতের আঘাতে কমলগঞ্জ পৌরসভার গোপালনগর এলাকার মনবাবুর বাড়ি সামনে ১টি ও মুন্সীবাজার ইউনিয়নের কোনাগাঁও এলাকায় নদীর প্রতিরক্ষা বাঁধ ভেঙ্গে যায়। ভাঙ্গা দুটি স্থান দিয়ে দ্রতগতিতে নদীর ঢলের পানি প্রবেশ করে পৌরসভার গোপালনগর, নাগড়া, করিমপুর, যোদ্ধাপুর এলাকা ও মুন্সীবাজার ইউনিয়নের কোনাগাঁও, ঠাকুর বাজার, মইডাইল, সোনাপুর, ঘোষপুর ও শংকরপুর সহ ২০টি গ্রামের ৩০ হাজার লোক পানিবন্দি হয়ে পড়েছিলেন। পানির নীচে নিমজ্জিত হওয়ায় বুধবার রাত থেকে কমলগঞ্জ-মৌলভীবাজার সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে ছিল। বুধবার রাত থেকে বৃষ্টিপাত না হওয়ায় ও আবহাওয়ার কিছুটা উন্নতি হওয়ায় নদীতে পানি কমতে থাকে। অন্যদিকে সড়ক থেকেও পানি নেমে গেলেও ২৫ গ্রামের ফসলি জমি ও গ্রাম্য রাস্তা এখনও নিমজ্জিত রয়েছে। এদিকে বিদ্যালয় মাঠে ৩/৪ ফুট পানি ঢুকে পড়ায় বৃহষ্পতিবার আলীনগর ইউনিয়নের কামুদপুর উচ্চ বিদ্যালয় ছুটি ঘোষনা করা হয়। সকালে শতাধিক শিক্ষার্থী এসে পানির কারণে বিদ্যালয়ে প্রবেশ করতে পারেনি। এছাড়া করিমপুর ও বাসুদেবপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে পানি প্রবেশ করে। পানির নীচে তলিয়ে যাওয়ায় বুধবার রাত ১১টায় সড়ক কমলগঞ্জ-মৌলভীবাজার সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছিল। বৃহষ্পতিবার ভোওে পানি কমতে শুরু করলে যানবাহন চলাচল স্বাভাবিক হয়। এছাড়া ধলাই নদীর প্রায় ১৫টি স্থান সম্পূর্ন ঝুঁকিপূর্ন থাকায় আরও ভাঙ্গনের আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। ভানুগাছ বাজারের পাশে নতুন ব্রীজ এলাকায় ঝুঁকিপূর্ণ ফাটল থাকায় কমলগঞ্জ পৌর এলাকার ভানুগাছ বাজার হুমকির মুখে পড়েছে। কমলগঞ্জ পৌরসভার ১নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর দেওয়ান আং রহিম মুহিন বলেন, পানি উন্নয়ন বোর্ডেও গাফিলাতির কারণে পৌরসভার গোপালনগর এলাকায় নতুন করে ভাঙ্গনের সৃষ্টি হয় এবং প্রায় অর্ধশত কাঁচ ঘর বিধ্বস্ত, মৎস্য খামার এর বিপুল পরিমান ক্ষতি সাধিত হয়।
৬ এপ্রিল বৃহস্পতিবার সকাল থেকে কমলগঞ্জ পৌরসভা এলাকা থেকে পানি নেমে সেখানকার পরিস্থিতি বেশ উন্নতি হয়। তবে এসব পানি এস আবার শমশেরনগর, মুন্সীবাজার ও পতনউষার ইউনিয়নের প্রায় ১৫টি গ্রামের বোরো ফসলসহ গ্রাম্য রাস্তা ও ফসলি জমিতে প্লাবনের সৃষ্টি করে।
সরেজমিন ধলাই নদীর প্রতিরক্ষা বাঁধ এলাকা ঘুরে দেখা যায় কমলগঞ্জে পৌরসভা এলাকার বাঁধের প্রায় ১৫টি স্থান সম্পূর্ন ঝুঁকিপূর্ন অবস্থায় আছে। তাছাড়া কমলগঞ্জ সদর ইউনিয়নের চৈতন্যগঞ্জ গ্রামের প্রতিরক্ষা বাঁধ খুবই ঝুঁকির মুখে রয়েছে। চৈতন্যগঞ্জ গ্রামের ঝুঁকিপূর্ণ বসত বাড়ির মুক্তিযোদ্ধা নিরঞ্জন দাস এ প্রতিনিধিকে বলেন, বিগত ৬/৭ বছরে এ গ্রামের ১৫টি বসত ঘর ধলাই নদী গর্ভে বিলিন হয়েছে। প্রতি বছর বন্যা হলে বা নদীতে পানি বাড়লে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও উপজেলা প্রশাসন প্রতিরক্ষা বাঁধ মেরামতের আশ্বাস দিয়ে যান। তার পর আর কোন খোঁজ থাকে না।

 


এ দিকে কয়েক দিনের বর্ষণে কমলগঞ্জ উপজেলায় এ বছর আবাদকৃত ৩ হাজার ৮৭৫ হেক্টর বোরো ফসল সম্পূর্ণরুপে প্লাবনের পানিতে নিমজ্জিত রয়েছে। শমশেরনগর ইউনিয়নের বোরো চাসী সিদ্দিকুর রহমান, দুরুদ আলী আক্ষেপ করে বলেন, বড় আশা করে এ বছর বরো চাষাবাদ করেছিলেন। তিন দফা পানিতে নিমজিÍ হওয়ার সম্পূর্ণরুপে বোরো ক্ষেত বিনষ্ট হয়ে যাবে।
কমলগঞ্জ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো: শামছুদ্দীন আহমদ প্লাবেনর পানিতে বোরো ফসল নিমজিÍত হওয়ার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, দ্রুত পানি নেমে গেলে বোরো ফসলের একটি অংশ রক্ষা পেতে পারে। তবে যেসব জমিতে ধান বের হয়ে গেছে সেই ধান সম্পূর্ণরুপে বিনষ্ট হয়ে যাবে। কি পরিমাণ বোরো ফসল সম্পূর্ণরুপে বিনষ্ট হবে সে সম্পর্কে তিনি সঠিক তথ্য দিতে পারেননি। তবে কৃষকরা আশাঙ্কা প্রকাশ করে বলেন সমূহ ফসলই বিনষ্ট হয়ে যাবে।
কমলগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ মাহমুদুল হক বুধবার রাতে ধলাই প্রতিরক্ষা বাঁধের ভাঙ্গনের সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, রাতে কোন বৃষ্টিপাত না হওয়ায় আবহাওয়ার উন্নতি হওয়ায় ধলাই নদীতে পানি কমতে থাকায় ফসলি জমি ও গ্রাম্য রাস্তা থেকে পানি নামতে শুরু কওে পতনঊষার ইউনিয়ন ও মুন্সীবাজার ইউনিয়নের নি¤œাঞ্চলে কিছুটা অবনতি হয়েছে। এ অবস্থার আরও উন্নতি হবে বলেও তিনি আশা প্রকাশ করেন। কমলগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা চৈতন্যগঞ্জ গ্রামে ধলাই প্রতিরক্ষা বাঁধ বেশ ঝুঁকিপূর্ণ থাকার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, বাঁধ মেরামতের ব্যাপারে মৌলভীবাজার পানি উন্নয়ন বোর্ডে প্রস্তাবনা পাঠানো হয়েছে। প্রশাসন থেকে তাগাদা দেওয়া হচ্ছে। মূলত কাজ করতে হবে পানি উন্নয়ন বোর্ড।

সংবাদটি শেয়ার করতে নিচের “আপনার প্রিয় শেয়ার বাটনটিতে ক্লিক করুন”

মন্তব্য করুন

Social Media Auto Publish Powered By : XYZScripts.com