কমলগঞ্জে বিএএফ শাহীন কলেজে একলাফে বেতন বাড়ল ৫০০ টাকা : অভিভাবকরা ক্ষুব্ধ

May 18, 2016,

প্রনীত রঞ্জন দেবনাথ॥ হঠাৎ করেই শিক্ষার্থীদের বেতন বাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে কমলগঞ্জ উপজেলার শমশেরনগরে অবস্থিত সুনামখ্যাত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বিএএফ শাহীন কলেজ। কোন পূর্ব ঘোষণা ছাড়াই বছরের মাঝামাঝি সময়ে মাসিক বেতন শতকরা ৬০ ভাগ বৃদ্ধি করে ৪৭০ টাকা থেকে ৬১৫ টাকা পর্যন্ত বৃদ্ধি করেছে কর্তৃপক্ষ। বাড়ানো বেতন জানুয়ারি থেকে কার্যকর করা হয়েছে। এর সাথে বার্ষিক সেশন ফি দ্বিগুণ করা হয়েছে। আচমকা বেতন বাড়িয়ে দেওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা।
বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর মাধ্যমে পরিচালিত শমশেরনগর বিএএফ শাহীন কলেজে এই বেতন বৃদ্ধিতে অনৈতিক দাবি করে এর প্রতিবাদে আন্দোলনের প্রস্তুতি নিচ্ছেন বলেও জানান অনেক অভিভাবক।
জানা যায়, সম্প্রতি বেতন বৃদ্ধির কথা জানিয়ে বিএএফ শাহীন কলেজ কর্তৃপক্ষ একটি নোটিশ প্রদান করেন। নোটিশে বেতন বৃদ্ধির কারণ হিসেবে উল্লেখ করা হয়- ‘সম্প্রতি জাতীয় বেতন স্কেল ২০১৫ অনুযায়ী সরকারী ও বেসরকারি পর্যায়ের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষক ও কর্মচারীদের বেতন বহুগুণ বৃদ্ধি করা হয়েছে। সেই সাথে জীবনযাত্রার ব্যয়ও বৃদ্ধি পেয়েছে। বিএএফ শাহীন কলেজের শিক্ষক ও কর্মচারীদের বেতন ভাতা সমপর্যায়ের অন্যান্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের তুলনায় অনেক কম। এর ফলে দক্ষ, অভিজ্ঞ ও প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত শিক্ষকদের বিএএফ শাহীন কলেজে ধরে রাখা ও তাদের দ্বারা অব্যাহতভাবে নিষ্ঠা ও আন্তরিকতার সাথে পাঠদান নিশ্চিত করা কঠিন হবে।’এ কারণে ৪৭০ টাকা থেকে ৬১৫ টাকা করে বেতন বাড়ানো হয়েছে জানিয়ে বিগত জানুয়ারি মাস থেকে তা কার্যকর এবং এর সাথে ভর্তি/পূণ:ভর্তিও দ্বিগুণ করা হয়েছে বলেও উল্লেখ করা হয়। যা ডিসেম্বরের মধ্যে বকেয়া পরিশোধ করতে হবে।
বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর মাধ্যমে সারাদেশে বিএএফ শাহীন কলেজের ৭ টি ক্যাম্পাস রয়েছে। শমশেরনগর বিএএফ শাহীন কলেজে নার্সারী থেকে থেকে দ্বাদশ শ্রেণি বর্তমানে ১৮৯৯ জন শিক্ষার্থী এবং ৯৮ জন শিক্ষক-কর্মচারী রয়েছেন। বিএএফ শাহীন কলেজের শিক্ষার্থীদের বেশিরভাগই মধ্যবিত্ত ও নি¤œ মধ্যবিত্ত পরিবারের। বছরের মাঝামাঝি সময়ে এতো টাকা বেতন বাড়িয়ে দেওয়ায় বিপাকে পড়েছেন এসব শিক্ষার্থীদের অভিভাবকরা।
আলাপকালে শিক্ষার্থীর অভিভাবক সুজা মেমোরিয়াল কলেজের অধ্যক্ষ ম. মুর্শেদুর রহমান, পৌর কাউন্সিলর আনোয়ার হোসেন, সাংবাদিক নুরুল মোহাইমিন মিল্টন, প্রভাষক আবু সাদাত, সায়েম, আলমগীর হোসেন, নজরুল ইসলাম, ইন্দুভূষন দেব, মিজানুর রহমান, সলমান মিয়া, মোস্তাক আহমদ, লাভলী বেগম, আশা রানী দত্ত, চম্পা রানী নাথ, মনোয়ারা বেগম, হামিদুল হক চৌধুরী বাবর, লাল মিয়া, পংকজ ভট্টাচার্য্যসহ অনেক অভিভাবক সাংবাদিকদের বলেন, হঠাৎ করে বেতন বৃদ্ধি অভিভাবকদের উপর একটি বাড়তি চাপ। কর্তৃপক্ষ কোন নিয়মনীতি না মেনেই বছরের মাঝখানে জুলাই মাসে বেতন বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত নিলো তাও আবার ৪শ থেকে সোয়া ৬শ টাকা। যা একেবারেই অনৈতিক। তারা বলেন, হঠাৎ করে বেতন বৃদ্ধি করা উচিত হয়নি। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আরো অন্তত শতাধিক অভিভাবক বলেন, মধ্যবিত্ত সীমিত আয়ের পরিবারের জন্য বেতন বৃদ্ধি একটা ধাক্কা। যদি একান্তই বেতন বৃদ্ধির প্রয়োজন তাহলে অভিভাবকদের সাথে আলোচনা সাপেক্ষে সর্বোচ্চ ২০০ টাকা বেতন বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত নেয়া যেতো। কয়েকজন অভিভাবক জানান, শীঘ্রই বেতন বৃদ্ধির প্রতিবাদে অভিভাবকরা সভা করে পরবর্তী কর্মসূচী গ্রহণ করা হবে।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে শমশেরনগর বিএএফ শাহীন কলেজের অধ্যক্ষ গ্রুপ ক্যাপ্টেন সাইদুল আমীন জানান, সরকার ঘোষিত জাতীয় বেতন স্কেল ২০১৫ অনুযায়ী শিক্ষক-কর্মচারীদের বেতন-ভাতা বৃদ্ধি করায় জীবন-যাত্রার ব্যয় বৃদ্ধি পেয়েছে। আগের বেতনে শিক্ষক-কর্মচারীদের ধরে রাখা যাচ্ছে না। তাদের বেতন বাড়াতে হচ্ছে। তাই বাধ্য হয়েই আন্ত: শাহীন কলেজের সভার মাধ্যমে এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। এ কলেজটি চলতি বছরে জাতীয় শিক্ষা সপ্তাহ-২০১৬ তে মৌলভীবাজার জেলার মধ্যে শ্রেষ্ঠ প্রতিষ্ঠান হিসেবে নির্বাচিত হয়েছে।

সংবাদটি শেয়ার করতে নিচের “আপনার প্রিয় শেয়ার বাটনটিতে ক্লিক করুন”

মন্তব্য করুন

Social Media Auto Publish Powered By : XYZScripts.com