কমলগঞ্জে বীরশ্রেষ্ঠ হামিদুর রহমানের ৪৫ তম শাহাদাৎ বার্ষিকী পালিত
কমলগঞ্জ প্রতিনিধি॥ মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলার ধলই সীমান্তে ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা যুদ্ধে সম্মুখ সমরে শাহাদাৎবরণকারী বীরশ্রেষ্ঠ শহীদ সিপাহী হামিদুর রহমানের ৪৫তম শাহাদাত বার্ষিকী কমলগঞ্জে পালিত হয়েছে। কর্মসুচীর মধ্যে ছিল স্মৃতিস্তম্ভে পুষ্পস্তবক অর্পন, মিলাদ মাহফিল, আলোচনা সভা প্রভৃতি। শাহাদাত বার্ষিকী উপলক্ষে শুক্রবার সকাল ১১টায় কমলগঞ্জ উপজেলা প্রশাসনের উদ্যোগে ধলই বিজিবি সংলগ্ন বীরশ্রেষ্ট সিপাহী হামিদুর রহমানের স্মৃতিসৌধে পুষ্পমাল্য অর্পনের মাধ্যমে শ্রদ্ধাঞ্জলী অর্পন করা হয়। এরপর বিভিন্ন সামাজিক, সাংস্কৃতিক সংগঠন শ্রদ্ধাঞ্জলী প্রদান করে। শ্রদ্ধাঞ্জলী প্রদান শেষে ১মিনিট দাঁড়িয়ে নিরবতা পালন করা হয়। এ সময় কমলগঞ্জ উপজেলা চেয়ারম্যান অধ্যাপক মো. রফিকুর রহমান, উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোহাম্মদ মাহমুদুল হক কমলগঞ্জ পৌরসভার মেয়র মো. জুয়েল আহমদ, উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার আব্দুল মুনিম তরফদার, উপজেলা প্রশাসনের কর্মকর্তা, বিজিবি’র সদস্যবৃন্দ, কমলগঞ্জ প্রেসক্লাব নেতৃবৃন্দসহ বিভিন্ন সামাজিক, রাজনৈতিক ও সাংষ্কৃতিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দ এ সময় উপস্থিত ছিলেন। পরে ধলই বিজিবি ক্যাম্পে এক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়।
উল্লে¬খ্য, ১৯৭১ সালের অক্টোবর মাসের শেষদিকে মৌলভীবাজার জেলার কমলগঞ্জ উপজেলার সীমান্তবর্তী ধলাই সীমান্ত এলাকায় প্রানপন লড়াই করে সম্মুখ সমরে দেশের জন্য শহীদ হন সিপাহী হামিদুর রহমান। চারদিকে চা বাগান, মাঝখানে ধলই সীমান্ত চৌকি। ধলই সীমান্ত চৌকি থেকে দক্ষিণপূর্ব দিকে ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের কমলপুর শহরে ছিল মুক্তিবাহিনীর সাবসেক্টর ক্যাম্প। সব প্রস্তুতি নিয়ে ২৮ অক্টোবর ভোর রাতে লেফটেন্যান্ট কাইয়ুমের নেতৃত্বে একটি দল পাক সেনাদের উপর চতুর্দিক থেকে সাঁড়াশি আক্রমন চালায়। ব্যাপক গোলাবর্ষনে পাক সেনাদের ক্যাম্পে আগুন ধরে যায়। প্রচন্ড গুলিবর্ষন ও পাকবাহিনীর পুঁতে রাখা মাইন বিষ্ফোরণে বেশ কিছু মুক্তিযোদ্ধা হতাহত হন। সিপাহী হামিদুর রহমান সাহসিকতার সাথে সীমান্ত চৌকি দখলের উদ্দেশ্যে মৃত্যুকে তুচ্ছ ভেবে মেশিনগান নিয়ে বিক্ষিপ্ত গোলাগুলির মধ্যে হামাগুড়ি দিয়ে শত্রু পক্ষের ৫০ গজের মধ্যে ঢুকে পড়েন। গর্জে উঠে তার হাতের মেশিনগান।
শত্রুদলের অধিনায়কসহ বেশ কয়েকজন সৈন্য এতে প্রাণ হারায়। এমন সময় শত্রুসৈন্যের একটি বুলেট হামিদুর রহমানের কপালে বিদ্ধ হয়। কিছুক্ষনের মধ্যে কমলগঞ্জ উপজেলার ধলই সীমান্তের তৎকালীন ইপিআর (বর্তমান বিজিবি ক্যাম্প) এর সামনে মৃত্যূর কূলে ঢলে পড়েন তিনি।
স্বাধীনতা পরবর্তী দীর্ঘ দিন পর ১৯৯২ সালে তৎকালীন বাংলাদেশ সীমান্ত রক্ষী বাহিনীর (বিডিআর) উদ্যোগে সর্বপ্রথম কমলগঞ্জ উপজেলার ধলাই সীমান্ত চৌকির পাশে নির্মাণ করা হয় বীরশ্রেষ্ঠ হামিদুর রহমানের স্মৃতিফলক। ২০০৬ সালে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অর্থায়নে ১০ শতাংশ জায়গার উপর সাড়ে ১৪ লক্ষ টাকা ব্যয়ে গণপূর্ত
বিভাগ বীরশ্রেষ্ঠ শহীদ সিপাহী হামিদুর রহমান স্মরণে স্মৃতিস্তম্ভ নির্ম্মাণ করে। সাথে সাথে কমলগঞ্জ পৌরসভার ভানুগাছ-মাধবপুর সড়কটিকে বীরশ্রেষ্ঠ সিপাহী হামিদুর রহমানের নামে নামকরণ করা হয়।
মন্তব্য করুন