কমলগঞ্জে মধ্যরাতে আবারও মৃদ্যু ভূ-কম্পন ॥ শতাধিক মাটির দেয়ালের ঘর বিধ্বস্ত ॥ ৫ শতাধিক ঘরে ফাটল
কমলগঞ্জ প্রতিনিধি॥ বেলা ৩ টা ৯ মিনিটে ৫ দশমিক ৫৯ মিটারে সৃষ্ট ভূমিকম্পের পর রাত একটায় মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জে ৫ দশমিক ১ মিটারে আবারও মৃদু ভূ-কম্পন অনুভূত হয়। ভূমিকম্পে কমলগঞ্জ উপজেলায় ফুটবল খেলার মাঠ, ফসলি জমিসহ অর্ধ শতাধিক স্থানের মাটি ফেটে পানি ও বালি বের হয়। ভূমিকম্পে কমলগঞ্জ উপজেলার একটি পৌরসভা ও নয়টি ইউনিয়নে শতাধিক মাটির দেয়ালের ঘর বিধ্বস্ত হয়। পাঁচ শতাধিক ঘরের দেয়ালে ফঅটল দেয়। ভূমিকম্পে এক শিশুসহ আহত হয়েছেন পাঁচজন। ভূমিকম্পের ভয়াল থাবায় উপজেলার নয়টি ইউনিয়নের দেড় শতাধিক ভবনের দেয়াল, ছাদ ও প্রাচীর দেয়াল ফেটে গেছে। হাঁড় কাঁপানো পৌষে বসতঘর ধ্বসে কনকনে শীতে কাঁপছে আদমপুর ইউনিয়নের উত্তরভাগের হাবিল মিয়া ,জালালপুরের দিনমজুর হেকিম আলী আর কমলগঞ্জ পৌর এলাকার রামপুর গ্রামের সত্তরোর্ধ বিধবা বৃদ্ধা ফাতিমাদের অসহায় পরিবার।তারা এখন কিভাবে বসত ঘর তুলবে আর কিভাবেইবা পরিবারের ভরণপোষণে আয় রোজগারে কাজে যাবে সে চিন্তায় দিশেহারা।
মঙ্গলবার বিকাল তিনটা নয় মিনিটে প্রথম দফায় প্রায় ৮ থেকে ১০ সেকেন্ড স্থায়ী বড় ধরনের একটি ঝাঁকুনি দিয়ে ভূমিকম্প হয়। রাত একটায় আবারও ৫ দশমিক ১ মিটারে ভূ-কম্পন হয়। রাতে দ্বিতীয় দফা ভূ-কম্পনে সাধান মানুষজন নুতুন করে আতঙ্কিত হয়ে পড়েন। ভয়ে বসত বাড়ির অধিকাংশ লোকজন বাকী রাত জেগে কাটান। বোধবার কমলগঞ্জ পৌরসভা, শমশেরনগর, আদমপুর, আলীনগর, মাধবপুর, পতনউষার, ইসলামপুর, মুন্সীবাজার, রহিমপুর ও কমলগঞ্জ সদর ইউনিয়ন ঘুরে খোজ নিয়ে জানা যায়, শতাধিক মাটির দেয়ালের ঘর সম্পূর্ণরুপে বিধ্বস্ত হয়েছে। পাঁচ শতাধিক পাকা ও আধা পাকা ঘরের দেয়াল ফেটে গেছে। ভূমিকম্পে কমলগঞ্জ পৌরসভার ভবন ও জেলা পরিষদের ৫০০ আসন বিশিষ্ট নবনির্মিত অডিটোরিয়াম কাম মাল্টি পারপাস ভবন, কমলগঞ্জ পৌর ভবন, মুন্সীবাজারে বিষ্ণুপুর কমিউনিটি ক্লিনিক ভবন, রামেশ্বরপুর সরকারি প্রাইমারী স্কুল কাম বন্যা আশ্রয় কেন্দ্র ভবনের অসংখ্য স্থানে ফাটল সৃস্টি হয়।
মঙ্গলবার ৩ জানুয়ারী মঙ্গলবার দিনের প্রথম দফা বড় ধরনের ভূমিকম্পে বৈদ্যুতিক তার ছিড়ে উপরে পড়ে শমশেরনগর ইউনিয়নের ভরতপুর গ্রামের মরিয়ম বেগম (৪০) আহত হয়েছেন। দেয়ালের ইটের আঘাতে কমলগঞ্জ পৌরসভার বড়গাছ এলাকার আমিন মিয়া (৪৫) ও তার স্ত্রী আহত হয়েছেন। আধাপাকা ঘরের দেয়াল ভেঙ্গে আদমপুর ইউনিয়নের উত্তর বানুবিল গ্রামের উজ্জল সিংহ (২০) নামক এক যুবক আহত হয়েছেন। তাছাড়া মাটির দেয়াল ভেঙ্গে আলীনগর ইউনিয়নের চিৎলিয়া গ্রামের চেরাগ মিয়ার মেয়ে রুবি বেগম (১৩), শিক্ষক সঞ্জয় কান্তি দেব (২৮) আহত হয়েছেন।
কমলগঞ্জ পৌরসভার মেয়র জুয়েল আহমদ বলেন, দিনের ভূমি কম্পের পর ধারনা ছিল আবারও ভূ-কম্পন হতে পারে। রাত একটায় বাস্তবে আবার মৃদু ভূ-কম্পন হওয়ায় মানুষজন আতঙ্কে সারা রাত জেগে কাটিয়েছে।
কমলগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ মাহমুদুল হক ভূমিকম্পে শতাধিক ঘর বিধবস্ত ও পাঁচ শতাধিক বসত ঘর, অফিস, বিদ্যালয় ভবন, ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের দেয়ালে ফাটল দেখা দিয়েছে বলে জনপ্রতিনিধিরা মৌখিকভাবে জানিয়েছেন। তবে কাগজে কলমে লিখে দিলে প্রকৃত ক্ষয়ক্ষতি জানা যাবে।
মন্তব্য করুন