কমলগঞ্জে যৌতুকের টাকা না পেয়ে গৃহবধুর শরীর জ্বলসে দিল শ্বশুড় বাড়ির লোকজন ॥ আটক ২
কমলগঞ্জ প্রতিনিধি॥ কমলগঞ্জে যৌতুকের ১ লাখ টাকা দাবী পূরণ করতে না পারায় দুই মাসের অন্তস্বত্তা হাসনা আক্তার (২০) নামের এক গৃহবধুর শরীরে ফুটন্ত গরম পানি ঢেলে জ্বলসে দিয়েছে শ্বশড় বাড়ির লোকজন। পুলিশ পাষন্ড স্বামীর বড় ভাই কামাল আহমেদ (৪০) ও বড় বোন মজিরুন বিবি (৩৪)কে আটক করছে। তবে স্বামী কামরুল মিয়া পলাতক রয়েছে। কমলগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে বেডে শুয়ে কাতরাচ্ছে গৃহবধু হাসনা আক্তার। ঘটনাটি ঘটেছে বৃহষ্পতিবার সন্ধ্যায় কমলগঞ্জ উপজেলার ইসলামপুর ইউনিয়নের শ্রীপুর কোনাগাঁও গ্রামে। এ ঘটনায় নির্যাতিতা মেয়ের পিতা হারুন মিয়া বাদী হয়ে ৬ জনের নামে কমলগঞ্জ থানায় যৌতুক ও নারী নির্যাতনের একটি মামলা দায়ের করেন।
নির্যাতিত গৃহবধুর পিতা একই উপজেলার মাধবপুর ইউনিয়নের নোয়াগাঁও গ্রামের হারুন মিয়া অভিযোগ করে জানান, ৬ মাস পুর্বে ইসলামপুর ইউনিয়নের দিলাল মিয়ার ৩য় পুত্র কামরুল মিয়ার সাথে আমার প্রথম কন্যা হাসনার আক্তারের সাথে বিবাহ হয়। বিয়ের সময় আসবাবপত্র কিনার জন্য আমি মেয়ের শ্বশুড় বাড়ির লোকজনকে নগদ ৩০ হাজার টাকা দেই। বিয়ের এক মাস পর মেয়ের উপর যৌতুকের জন্য নির্যাতন শুরু করেন পাষন্ড স্বামী কামরুল সহ বাড়ির লোকজন। এক পর্যায়ে বিদেশ যাওয়ার জন্য ১ লাখ টাকা দাবী করলে আমি টাকা দিতে না পারায় প্রতিনিয়ত মেয়ের উপর শরীরিক নির্যাতন চালাতো পাষন্ড স্বামী। ঘটনার এক সপ্তাহ আগে আমি কষ্ট করে আরো ১০ হাজার টাকা আসবাবপত্র দেই। তিনি জানান, গত দিন ধরে মেয়ে হাসনা আক্তারের উপর প্রচন্ড নির্যাতন চালালে আমি খবর পেয়ে স্থানীয় সাবেক ইউপি সদস্য সবুজ মিয়া কে বিষয়টি অবগত করি। বিচার দেয়ার কারনে ৬ এপ্রিল বৃহস্পতিবার সকালে থেকে মেয়ের উপর শ্বশুর বাড়ির লোকজনরা অমানসিক নির্যাতন করলে পাশ্ববর্তী একটি বাড়িতে পালিয়ে গিয়ে আমার কাছে মোবাইলে কল দিয়ে তাকে বাচাঁনোর আকুতি জানায়। কথা বলা অবস্তায় শ্বশুড়বাড়ির লোকজন ওই বাড়ি থেকে ফিরিয়ে নিয়ে গর্ভবতী মেয়েটির উপর ফুটন্ত গরম পানি ঢেলে সারা শরীর জ্বলসে দেয়। আমি বাড়িতে গিয়ে দেখি মেয়েটি অজ্ঞান অবস্থায় পড়ে আছে। চিকিৎসার জন্য মেয়েটিকে নিয়ে আসতে চাইলে শ্বশুর বাড়ির লোকজন বাধা প্রদান করে।
আমি বাধ্য হয়ে কমলগঞ্জ থানায় এসে ৫জনকে আসামী করে যৌতুক ও নির্যাতন মামলা দায়ের করলে কমলগঞ্জ থানা পুলিশের এসআই ইকবাল হোসেন এর নেতৃত্বে আহত মেয়ে হাসনা আক্তারকে বৃহষ্পতিবার রাত ৮টায় উদ্ধার করে কমলগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়। এ সময় ঘটনার সাথে জড়িত থাকার অভিযোগে জামাই কামরুলের বড় ভাই কামাল মিয়া ও বড় বোন মজিরুন বেগমকে আটক করে পুলিশ। মেয়ের স্বামী কামরুল মিয়া পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে পালিয়ে যায়। শুক্রবার সকালে আটককৃত ২জনকে জেল হাজতে প্রেরণ করা হয়েছে।
কমলগঞ্জ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের কতর্ব্যরত চিকিৎসক ড: সাজেদুল কবির জানান, মাথাসহ সারা শরীরের বিভিন্ন জখমের চিহৃ পাওয়া গেছে।
কমলগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ বদরুল হাসান বলেন, এ ঘটনায় নির্যাতিতা মেয়ের পিতা হারুন মিয়া বাদী হয়ে কমলগঞ্জ থানায় যৌতুক ও নারী নির্যাতনের একটি মামলা দায়ের করেন। ২ জন আসামীকে আটক করা হয়েছে এবং জেলহাজতে প্রেরণ করা হয়েছে।
মন্তব্য করুন