কমলগঞ্জে রবিদাস গুরু মহারাজ জী’র ৬৪০ তম জন্ম জয়ন্তী পালিত

February 11, 2017,

কমলগঞ্জ প্রতিনিধি॥ মানব সমাজের ও নিপীড়িত মানব সমাজের মুক্তির দিশারী, পরম সমাজ সংস্কারক সন্তু গুরু শ্রী শ্রী রবিদাস জী মহারাজের ৬৪০ তম শুভ আবির্ভাব তিথি উপলক্ষে মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলার শমশেরনগর চা বাগানে ধর্মীয় আলোচনা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়। সনাতনী হিন্দু ধর্মের সবচেয়ে অবহেলিত ও বঞ্চিত বলে নিজেদের মান মর্যাদা প্রতিষ্ঠা ও ভেদাভেদ ভুলে মানুষ হিসাবে ভাবার দাবিতে দুঃখ ও আর ক্ষোভে ধর্মীয় আলোচনা অনুষ্ঠানটি অবশেষে রবিদাস সম্প্রদায়ের মহা মিলন মেলায় রুপ নেয়। রবিদাস সম্প্রদায়ের সন্তু গুরু শ্রী শ্রী মহারাজ জী’র জন্ম জয়ন্তী উপলক্ষে শুক্রবার ১০ ফেব্রুয়ারি রাত আটটায় শমশেরনগর চা বাগানের রবিদাস টিলায় (বস্তি) আলোচনা পর্বে রবিদাস সম্প্রদায়ের নেতৃবৃন্দরা এদাবি জানান।
শ্রী শ্রী গুরু রবিদাস জী’র জন্ম জয়ন্তী উদযাপন কমিটির সভাপতি মোহন লাল রবিদাসের সভাপতিত্বে শুক্রবার রাতের আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন মৌলভীবাজারের জেলা প্রশাসক তোফায়েল ইসলাম। বিশেষ অতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন মৌলভীবাজারের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক আশফাকুর রহমান, কমলগঞ্জ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য অধ্যাপক রফিকুর রহমান, কমলগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ মাহমুদুল হক। মিলন রবিদাসের সঞ্চালনায় আলোচনার শুরুতেই স্বাগত বক্তব্য রাখেন উদযাপন কমিটির সাধারন সম্পাদক মোহন রবিদাস। মোহন রবিদাস বলেন, হিন্দু ধর্মীয় ও চা জনগোষ্ঠীর মাঝে সবচেয়ে অবহেলিত ও বঞ্চিত রবিদাস সম্প্রদায়। প্রাচীনকালে তথা কথিত সুবিধাভোগীরা হিন্দু ধর্মের মানুষজনকে চারটি ভিাগে বিভক্ত করে শুধুই নির্যাতন ও নিপীড়ন করেই গেছে। এর মাঝে সবচেয়ে নির্যাতন আর নিপীড়নের শিকার রবিদাস সম্প্রদায়। রবিদাস সম্প্রদায়ের লোকজনও সবার মত রক্ত মাংসের মানুষ। সমাজে তারাও অবদান রাখছে। রবিদাস সম্প্রদায় এখন জেগেছে। তারা তথা কথিত এই ধর্মীয় বিভাজন মানতে রাজি নয়। তাই রবিদাস সম্প্রদায়কে ছোট না ভেবে জাত গুত্র পরিহার করে মানুষ হিসাবে ভাবার আহ্বান জানান তিনি। মোহন রবিদাস আরও বলেন, রবিদাস সম্প্রদায়ের সমৃদ্ধ একটি নিজস্ব ইতিহাস, ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি রয়েছে। বিলুপ্তপ্রায় এই ইতিহাস, ঐতিহ্য ও সংস্কৃতিকে সংরক্ষণ করে তার বিকাশের লক্ষে শ্রী শ্রী গুরু রবিদাস জী’র জন্ম জয়ন্তী উদযাপন কমিটির পক্ষে এই প্রথম বার শমশেরনগর চা বাগানে আয়োজন করা হয় রবিদাস ধর্মীয় আলোচনা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের।
সিলেট বিভাগের চারটি জেলাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানের চা বাগান ও বস্তির সবচেয়ে অবহেলিত রবিদাস সম্প্রদায়ের আগত নারী পুরুষ সমন্বয় দুই সহ¯্রাধিক প্রতিনিধিদের অংশগ্রহনে শুক্রবার বিকার পাঁচটায় আনন্দ শুভাযাত্রাটি চা বাগানের বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে শমশেরনগর বাজার হয়ে আবারও রবিদাস টিলায় অনুষ্ঠানস্থলে সমাপ্ত হয়।
১০ ফেব্রুয়ারি শুক্রবার রাত আটটায় প্রথমে অনুষ্ঠিত হয় আলোচনা সভা। আলোচনা পর্বে মোহন রবিদাসের আবেগ ঘন দুঃখ ক্ষোভে ভরা নিপীড়ন ও বঞ্চার বক্তব্য শুনে প্রধান অতিথি জেলা প্রশাসক মো: তোফায়েল ইসলামসহ অতিথিরা বলেন, এখন জাত পাতের কথা বড় নয়। মানুষের পরিচয় হবে তার কাজে। সুতরাং সে রবিদাস পরিবারের হোন আর অন্য পরিবারের হোক কাজই তাকে প্রতিষ্টিত করবে। পিছিয়ে পড়া রবিদাস সম্প্রদায়কে শিক্ষায় এগিয়ে এসে নিজেদের বঞ্চনা দূর করার সাথে সাথে দেশকেও এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে। জেলা প্রশাসক আরও বলেন, মোহন রবিদাসের বক্তব্যে সংগ্রামের কথা আছে। সংগ্রাম নয় প্রয়োজনে আলোচনার টেবিলে বসে নিজেরও সম্প্রদায়কে প্রতিষ্ঠিত করতে হবে। এ জন্য প্রশাসন তাদেরকে প্রয়োজনীয় সহায়তা প্রদান করবে।
রাত সাড়ে নয়টায় সাংস্কৃতিক পর্বে প্রখ্যাত ভজন স¤্রাট অনুপ জালোটার শিষ্য ভারত থেকে আগত শিল্পী সুশান্ত সিনহার মনোমুগ্ধকর ভজন পরিবেশনে পুরো চা বাগান এলাকাকে মোহিত করে। তার সাথে ছিলেন বাংলাদেশ বেতার ও বিটিভির নিয়মিত শিল্পী কুমার শ্যামের সংগীত পরিবেশন। রাত সাড়ে ১২টা থেকে গুরু মহারাজ জী’র উপর আড়াই ঘন্টার ধর্মীয় প্রচারনা ও জীবনীর উপর ভিডিও প্রজেক্টরের মাধ্যমে উপস্থাপন করা হয়। শীতের রাতে ভোর পর্যন্ত আগত রবিদাস সম্প্রদায়ের লোকজন তা উপভোগ করেন।

সংবাদটি শেয়ার করতে নিচের “আপনার প্রিয় শেয়ার বাটনটিতে ক্লিক করুন”

মন্তব্য করুন

Social Media Auto Publish Powered By : XYZScripts.com