কমলগঞ্জে রোগাক্রান্ত গবাদি পশু জবাই করে মাংস বিক্রির অভিযোগ

August 21, 2016,

কমলগঞ্জ প্রতিনিধি॥ কোন রকমের স্বাস্থ্য পরীক্ষা ছাড়াই মৌলভীবাজারের সীমান্তবর্তী কমলগঞ্জ উপজেলার হাটবাজারে গবাদি পশু জবাই করে মাংস বিক্রির অভিযোগ উঠেছে। যত্রতত্র স্থানে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে রোগাক্রান্ত গবাদি পশু জবাই করে মাংস বিক্রি করারও অভিযোগ রয়েছে। এসব পশুর মাংস খেয়ে স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে রয়েছেন ভোক্তা সাধারন।
সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, কমলগঞ্জ উপজেলার অর্থলোভী কসাইরা খুব ভোরে গরু মহিষ, ছাগল জবাই করে হাটবাজারের নির্ধারিত স্থানে বসে দিনভর মাংস বিক্রি করেন। এদের অধিকাংশই রোগাক্রান্ত থাকায় সস্তায় কিনে জবাই করে মাংস চড়া দামে বিক্রি করা হয় বলে স্থানীয়দের অভিযোগ রয়েছে। উপজেলার শমশেরনগর, আদমপুর ও ভানুগাছ বাজারে সপ্তাহে দু’দিন হাটবারে জবাইকৃত পশুর মাংস বিক্রি করা হয়। এছাড়া পতনঊষার ও মুন্সীবাজারে এসব পশু জবাই করে মাংস বিক্রি করা হয়। তবে তুলনামুলক শমশেরনগর ও আদমপুর বাজারে বেশি পরিমাণে গবাদি পশু জবাই করা হয়। শমশেরনগরে রোববার ও বুধবার, আদমপুরে শুক্রবার ও সোমবার, ভানুগাছে বৃহস্পতিবার ও রোববার বাজারে শত শত মানুষ জবাইকৃত গবাদি পশুর মাংস কিনেন। অথচ এসব পশুর কোন রকমের ডাক্তারি পরীক্ষার ব্যবস্থা নেই। বাচ্চা (কম বয়সের গরু বাছুর), চাষাবাদ যোগ্য বলদ ও দুধের গাভী জবাই না করার কথা থাকলেও অনেক ক্ষেত্রে এধরনের পশু জবাই করে মাংস বিক্রি করা হয় বলে এলাকাবাসীরা জানান। ফলে পশুটি রোগব্যাধি আক্রান্ত কি না তা সহজেই কেউ দেখতে বা বুঝতে পারেন না।
জানা যায়, ‘গবাদি পশু জবাই (বিধিনিষেধ) ও মাংস নিয়ন্ত্রণ অধ্যাদেশ-১৯৫৭’ এ পশু জবাইর সুনির্দিষ্ট বিধি বিধান রয়েছে। প্রতিটি জবাইখানায় আধুনিক পরীক্ষাগার থাকার কথা রয়েছে। জবাইয়ের পূর্বে গর” পরীক্ষা ও জবাইর পরে মাংস পরীক্ষা করার কথা বিধানে রয়েছে। কিন্তু কমলগঞ্জ উপজেলার কোথাও এ ধরনের ব্যবস্থাও নেই আর বিধিও মানা হচ্ছে না।
শমশেরনগর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জুয়েল আহমদ, শমশেরনগর বনিক কল্যাণ সমিতির সভাপতি আব্দুল মালিকসহ এলাকাবাসী অভিযোগ করে বলেন, সব কসাইদের বৈধ লাইসেন্স আছে কিনা তাও বোঝা যাচ্ছে না। একমাত্র লাইসেন্সধারী কসাইরা জবাইর পূর্বে উপজেলা স্যানিটারী পরিদর্শকের কাছ থেকে স্বাস্থ্য সম্পর্কিত একটি ছাড়পত্র নিয়ে স্বাস্থ্য সম্পমত স্থানে গবাদি পশু জবাই করে বাজারে বিক্রির নিয়ম। তবে কোন কসাই এই নিয়ম মানেন না। স্থানীয়ভাবে কসাইদের উপর অভিযোগ রয়েছে তারা রোগাক্রান্ত ও দুর্বল গবাদি পশু জবাই করে বাজারে মাংস বিক্রি করেন। ফলে ভোক্তারা রীতিমত স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে রয়েছেন বলে ইউপি চেয়ারম্যান ও ব্যবসায়ী নেতা জানান।
শমশেরনগর বাজারের কসাই লুন্দুর মিয়া বলেন, পশু জবাই করে মাংস বিক্রির বিষয়ে তার বৈধ অনুমতি পত্র রয়েছে। তিনি বিধি মোতাবেক সুস্থ্য সবল রোগমুক্ত গবাদি পশু জবাই করেন। জবাই করা মাংস স্থানীয় বাজারের তাদের জন্য বরাদ্ধকৃত স্থানে বসেই বিক্রি করছেন। বাজারে বসে মাংস বিক্রির স্থান পরিষ্কার পরিছন্ন রাখার দায় তার নয়। সে দায় বাজার ইজারাদারের।
কমলগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য পরিদর্শক দুলাল মিয়া স্বাস্থ্য পরীক্ষা ছাড়া রোগাক্রান্ত গবাদি পশু জবাই করার অভিযোগের সত্যতা নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, উপজেলার কয়েকজন কসাইকে পশু জবাইয়ের অনুমতিপত্র দেয়া হয়েছে এবং পরিস্কার পরিচ্ছন্ন স্থানে পশু জবাই করার কথা বলা হয়েছে। তাছাড়া মাঝে মধ্যে পরিদর্শন করে সার্বিক অবস্থা পর্যবেক্ষণ ও ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা হয়। অচিরেই কমলগঞ্জ উপজেলার বিভিন্ন হাট বাজারে ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালনা করার উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছেও বলে স্যানিটারী পরিদর্শক জানান।
এ ব্যাপারে কমলগঞ্জ উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা আব্দুল হাই বলেন, তিনি কমলগঞ্জে নতুন এসে যোগদান করেছেন। অন্য এলাকায় থাকাকালীন সময়ে তিনি পশু পরীক্ষা নিরীক্ষা করেছেন। তবে কমলগঞ্জে জনবল কম থাকার কারনে সবসময় পশু পরীক্ষা নিরীক্ষা কতটুকু সম্ভব হবে সে বিষয়ে তিনি সন্দেহাতিত। নিয়ম মোতাবেক পৌরসভা ও সকল ইউনিয়ন থেকে প্রাণিসম্পদ অফিসকে এসব বিষয়ে অবহিত করার কথা।

সংবাদটি শেয়ার করতে নিচের “আপনার প্রিয় শেয়ার বাটনটিতে ক্লিক করুন”

মন্তব্য করুন

Social Media Auto Publish Powered By : XYZScripts.com