কমলগঞ্জে শারীরিক নির্যাতন করে গৃহবধূকে হত্যার অভিযোগ
কমলগঞ্জ প্রতিনিধি॥ কমলগঞ্জে শারীরিক নির্যাতন করে পাঁচ সন্তানের জননী এক গৃহবধূকে হত্যার অভিযোগ উঠেছে। অস্বাভাবিক মৃত্যুতে ভাইয়ের আবেদনে লাশের ময়না তদন্তের জন্য মৌলভীবাজার সদর হাসপাতাল মর্গে প্রেরণ করা হয়েছে। শুক্রবার ৫ আগষ্ট দিবাগত রাত একটায় পতনউষার ইউনিয়নের পতনউষার গ্রামে জুবেরা বেগম (৪০) নামের গৃহবধূর মৃত্যু হলে শনিবার সকাল আটটায় স্বামী শ্বশুড়বাড়িতে মৃত্যু সংবাদ প্রেরণ করে।
স্থানীয়ভাবে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ২০ বছর আগে কমলগঞ্জ উপজেলার পতনউষার ইউনিয়নের পতনউষার গ্রামের ব্যবসায়ী জহিরুল হক চৌধুরীর সাথে শমশেরনগর ইউনিয়নের ভাদাইর দেউল গ্রামের মৃত নানু মিয়ার মেয়ে জুবেরা বেগমের বিয়ে হয়েছিল। শুরু থেকেই তাদের দাম্পত্য জীবন সুখের ছিল। তাদের ঘরে দুই ছেলে ও তিন মেয়ে রয়েছে। পাঁচ বছর পূর্বে ভগ্নিপতি জহিরুল হক চৌধুরী বোনের অমতে দ্বিতীয় বিয়ে করেন। এ নিয়ে শুরু হয় দাম্পত্য কলহ। এ কলহের জের ধরে ভগ্নিপতি ব্যবসায়ী জহির মিয়া তাকে প্রায়ই শারীরিকভাবে নির্যাতন করতেন। এ নিয়ে পতনউষার ইউনিয়ন পরিষদের চেযারম্যান, সদস্য ও ব্যবসায়ী নেতৃবৃন্দরা কয়েক দফা সামাজিক বৈঠকও করেছেন। গত এক মাস আগেও এক রাতে স্বামী জুবেরাকে নির্যাতন করে বাড়ি থেকে তাড়িয়ে দিলে আবারও মুরব্বীদের মাধ্যমে সমাধান হলে তাকে স্বামীর বাড়ি ফেরৎ পাঠানো হয়েছিল। গত শুক্রবার রাত একটায় আকস্মিকভাবে গৃহবধূ জুবেরার মৃত্যু হয়। রাতে মৃত্যু হলেও গৃহবধূর বাবার বাড়িতে খবর পাঠানো হয় শনিবার সকাল আটটায়।
৬ আগষ্ট শনিবার সকালে নিহত গৃহবধূর ভাই ডেকোরেটার্স কর্মী শহীদ মিয়াসহ আত্মীয় স্বজনরা পতনউষারে গিয়ে জুবেরার মৃতদেহ দেখে মৃত্যুটি অস্বাভাবিক বলে সন্দেহ পোষণ করেন।
পরে শনিবার সকালেই গৃহবধূর ভাই শহীদ মিয়া কমলগঞ্জ থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করে ময়না তদন্ত দাবি করেন। ফলে শমশেরনগর পুলিশ ফাঁড়ির দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা উপ পরিদর্শক আবু সায়েম আব্দুর রহমান ঘটনাস্থলে গিয়ে লাশের সুরতহাল তৈরী করে মৌলভীবাজার সদর হাসপাতালে ময়না তদন্তের জন্য প্রেরণ করেন। নিহত গৃহবধূর ভাই শহীদ মিয়া অভিযোগ করে বলেন, ভগ্নিপতি শারীরিকভাবে নির্যাতন করলে রাতেই তার বোন মারা যায়। তার পুরো দেহ কালো হয়ে গেছে। তাছাড়া গালেও মুখে কালো দাগও রয়েছে।
পতনউষার ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সেলিম আহমদ চৌধুরী ব্যবসায়ী জহির মিয়ার পরিবারের কয়েক দফা বিচার করার সত্যতা নিশ্চিত করেন। তিনি বলেন, প্রাথমিকভাবে মনে হচ্ছে গৃহবধূ জুবেরার স্বাভাবিক মৃত্যু হয়েছে। তারপরও তার বাবার বাড়ির লোকজন সন্দেহ পোষণ করে ময়না তদন্তের দাবি করায় সেই ব্যবস্থা গ্রহন করা হয়েছে।
তদন্তকারী কর্মকর্তা উপ-পরিদর্শক আবু সায়েম আব্দুর রহমান বলেন প্রাথমিকভাবে ধারনা করা হচ্ছে, হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে গৃহবধূ মারা যেতে পারেন। তবে ময়না তদন্তে মৃত্যুর মূল কারণ বেরিয়ে আসবে।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে নিহত গৃহবধূর স্বামী ব্যবসায়ী জহিরুল হক চৌধুরী বলেন, তার স্ত্রী জুবেরা হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন। তাকে শারীরিক নির্যাতন করে হত্যা করা হয়নি। তিনিও দাবি করেন যেহেতু ময়না তদন্তে লাশ যাচ্ছে, সেহেতু ময়না তদন্তের রিপোর্ট মৃত্যুর মূল কারণ বলে দিতে পারবে।
মন্তব্য করুন