কমলগঞ্জে স্কুল পরিচালনা কমিটির সভাপতি নির্বাচনে আদালতের স্থগিতাদেশ
প্রনীত রঞ্জন দেবনাথ॥ কমলগঞ্জ উপজেলার বৃন্দাবনপুর আবুল ফজল চৌধুরী উচ্চ বিদ্যালয়ের ম্যানিজিং কমিটির সভাপতি নির্বাচন স্থগিত ঘোষণা করেছেন মৌলভীবাজার আদালতের বিজ্ঞ বিচারক। জহুরা বেগম চৌধুরী নামে একজনের আবেদনের প্রেক্ষিতে মৌলভীবাজারের সিনিয়র সহকারী জজ আদালত, কমলগঞ্জ এর বিজ্ঞ বিচারক বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির নির্বাচনের ওপর স্থগিতাদেশ দেন।
স্থানীয় সুত্রে জানা যায়, অনিয়ম ও দুর্নীতির মধ্য দিয়ে আবুল ফজল চৌধুরী উচ্চবিদ্যালয় স্কুল ম্যানেজিং কমিটি গঠনের অভিযোগ উঠেছে। এ বিষয়ে গত ২৭ জুন কমলগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে একটি লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন স্কুলের প্রতিষ্ঠাতা ও দাতা ফখর উদ্দিন চৌধুরী।
অভিযোগ সুত্রে জানা যায়, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ফান্ড আত্মসাৎ ও চেয়ার দখলে নিতে আবুল ফজল চৌধুরী উচ্চ বিদ্যালয়ের কমিটি দখলে নিতে চায় একটি সিন্ডিকেট। সদ্য উপজেলা নির্বাচন কালীন সময়ে এ বিদ্যালয়ের সঙ্গে সম্পৃক্ত শিক্ষার্থীদের অভিভাবক যখন উপজেলা নির্বাচন নিয়ে ব্যস্ত ছিলেন, সেই সময়ে কারও মতামতকে প্রাধান্য না দিয়ে কাগজে কলমে নির্বাচন প্রক্রিয়াকে রেকর্ড করা হয়। যারা প্রার্থী হয়েছিলেন কৌশলে তাদের প্রার্থিতা প্রত্যাহার করিয়ে সিলেকশনে অভিভাবক প্রতিনিধি মনোনীত করা হয়। কোনো ভোটাধিকার প্রয়োগ করা হয়নি।
এ ঘটনায় অনেক অভিভাবক ও এলাকার সুশীল সমাজের প্রতিনিধি স্কুলের প্রতিষ্ঠাতা ও দাতা সদস্য হিসেবে অনেকের কাছে বিচার প্রার্থী হয়েছেন। কারও মতামতকে প্রাধান্য না দিয়ে একটি সিন্ডিকেট বাহিনী তাদের মনোনীত লোকদের অভিভাবক সদস্য মনোনীত করে তাদের মধ্যে থেকে একজনকে সভাপতি নির্বাচিত করার পূর্ব নকশা করেছিল। এ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যে প্রক্রিয়ায় এ চক্রটি নির্বাচন করতে যাচ্ছে তা নতুন ম্যানেজিং কমিটি পরিচালনা গাইডলাইন-২০২৪ এর সঙ্গে সাংঘর্ষিক। রোববার (৩০ জুন) পূর্ব পরিকল্পিত সভাপতি নির্বাচনের দিন ধার্য্য ছিল।
ম্যানেজিং কমিটি নির্বাচনের প্রিসাইডিং অফিসার উপজেলা পল্লী উন্নয়ন কর্মকর্তা সাঈদ নাজমুল হাসান বলেন- অভিভাবক, শিক্ষক ও দাতা সদস্য পদে ৯টি পদে ১০ জন প্রার্থী ছিলেন। একজন মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করায় ভোটগ্রহণ হয়নি। যার কারণে সব পদের প্রার্থীরা বিনা প্রতিদ্বন্ধিতায় নির্বাচিত হয়েছিলেন। যার প্রেক্ষিতে রোববার সভাপতি পদে নবাগত অভিভাবক সদস্যদের নিয়ে নির্বাচন চলাকালীন সময়ে মৌলভীবাজার জজকোর্ট থেকে সিনিয়র সহকারী জজ আদালত, কমলগঞ্জ এর বিজ্ঞ বিচারক কর্তৃক বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির নির্বাচনের ওপর স্থগিতাদেশ এর কপি আসলে নির্বাচন স্থগিত করা হয়।
এ বিষয়ে কমলগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জয়নাল আবেদীন বলেন, আমার কাছে একটি লিখিত অভিযোগ এসেছিল। আমি প্রিসাইডিং অফিসার নিয়োগ করেছি। নির্বাচনে আমার বেশি হস্তক্ষেপে করার সুযোগ না থাকায় কারও কোন অভিযোগ থাকলে সেটা সমাধানের জন্য আদালতে যেতে বলেছিলাম। বিজ্ঞ আদালত নির্বাচন স্থগিত করেছে বলে জানতে পেরেছি।
উল্লেখ্য, কমলগঞ্জ উপজেলার পতনউষার ইউনিয়নের বৃন্দাবনপুরে অবস্থিত আবুল ফজল চৌধুরী উচ্চবিদ্যালয় ১৯৮৫ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। গত ২৬ মে ম্যানেজিং কমিটির নির্বাচনের তফশিল ঘোষণা করেন উপজেলা পল্লী উন্নয়ন কর্মকর্তা। ২৩ জুন অভিভাবক সদস্য ৫ পদে ৫ জনের বেশি প্রার্থী না থাকায় বিনা প্রতিদ্বন্ধিতায় তারা নির্বাচিত হন।
অভিযোগ উঠেছে নির্বাচনে মনোনয়নপত্র জমা দেওয়া বাকি প্রার্থীদের মনোনয়নপত্র জোরপূর্বক প্রত্যাহার করিয়ে নিয়েছেন একটি সংঘবদ্ধ চক্র।
বিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা ফখর উদ্দিন চৌধুরী জানান, কমিটি ও চেয়ার নিজেদের দখলে নিতে একটি চক্র- যারা প্রার্থী হয়েছেন তাদের প্রার্থিতা প্রত্যাহার করিয়ে নিয়েছেন। অনেককে ভয় দেখিয়েও প্রার্থিতা প্রত্যাহার করতে বাধ্য করা হয়েছে। মূলত স্কুলের ফান্ড লুটপাট করা তাদের মূল লক্ষ্য।
মন্তব্য করুন