কমলগঞ্জ উপজেলার ৯টি ইউনিয়নে ভোট গ্রহণ আজ
কমলগঞ্জ প্রতিনিধি॥ কমলগঞ্জ উপজেলার ৯টি ইউনিয়নে ভোট গ্রহন ২৮ মে শনিবার অনুষ্ঠিত হবে। ইউনিয়নগুলো হচ্ছে-রহিমপুর, পতনঊষার, মুন্সীবাজার, শমশেরনগর, কমলগঞ্জ, আলীনগর, আদমপুর, মাধবপুর ও ইসলামপুর। ইতোমধ্যে সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে প্রশাসন। কঠোর নিরাপত্তার মধ্য দিয়ে ৯টি ইউনিয়নের ৯৪টি কেন্দ্রে মোট ৪২৫টি কক্ষে (বুথ) মোট ১৩৬৯ জন ভোটগ্রহণ কর্মকর্তা ভোট গ্রহণ করবেন। প্রতিটি কেন্দ্রে পুলিশ আনসার মোতায়েন করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন রির্টানিং অফিসার। এছাড়াও ম্যাজিষ্ট্রেটের নেতৃত্বে বিজিবি, র্যাব মোবাইল টিম নয়টি ইউনিয়নে এবং পুলিশের মোবাইল টিম সার্বক্ষনিক টহলে থাকবে ইউনিয়নগুলোতে। কমলগঞ্জ উপজেলায় চেয়ারম্যান পদে ৩৭ জন, সংরক্ষিত মহিলা সদস্য পদে ৮৭ জন ও সাধারণ ওয়ার্ড সদস্য পদে ৩২৮ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দিতা করছেন।
বৃহষ্পতিবার মধ্যরাত থেকে নির্বাচনী প্রচার প্রচারনা বন্ধ হয়ে গেছে। এবার কমলগঞ্জ উপজেলার ৯টি ইউপি নির্বাচনে ৫জন রিটানিং অফিসার, ৯৪জন প্রিজাইডিং অফিসার, ৪২৫জন সহকারী প্রিজাইডিং অফিসার, ৮৫০জন পোলং অফিসার নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। কমলগঞ্জ উপজেলার ৯টি ইউনিয়নে মোট ভোটার সংখ্যা ১ লক্ষ ৫৮ হাজার ৯৭০ জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ৭৯ হাজার ১১২ এবং মহিলা ভোটার ৭৯ হাজার ৮৫৮ জন। এ উপজেলায় মহিলা ভোটাররাই চেয়ারম্যান প্রার্থীর জয়-পরাজয়ে ভুমিকা রাখবেন। এছাড়া রহিমপুর, শমশেরনগর, কমলগঞ্জ, আলীনগর, মাধবপুর ও ইসলামপুরে চা শ্রমিক ভোটারই জয়-পরাজয়ের নিয়ামক শক্তি। বৃহস্পতিবার রাত থেকে আনুষ্টানিক প্রচারনা বন্ধ হলেও প্রার্থীদের ভিতরে ভিতরে প্রচারনা বন্ধ নেই। তাই সবাই ছুটছেন ঘরে ঘরে। বিশেষ করে মহিলা ভোটারদের কাছে চেয়ারম্যান প্রার্থীরা বেশি যাবার চেষ্টা করছেন। কারন মহিলা ভোটার সংখ্যা এবার বেশি। এ কারনে মহিলা ভোটারদের গুরুত্ব বেশি প্রার্থীদের কাছে । কমলগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোহাম্মদ মাহমুদুল হক সুষ্ঠ, অবাধ, নিরপেক্ষ ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন অনুষ্ঠানে প্রশাসনের পক্ষ থেকে সকল প্রকার প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে বলে জানান। কমলগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ বদরুল হাসান বলেন, শতভাগ নিরপেক্ষভাবে দায়িত্ব পালন করবে পুলিশ প্রশাসন। আইন শৃংখলা ভঙ্গ করলে কেউই রেহাই পাবে না।
১ নং রহিমপুর ইউনিয়নে বর্তমান চেয়ারম্যান সাবেক চিফ হুইপ উপাধ্যক্ষ আব্দুস শহীদ এমপির ছোট ভাই কমলগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আওয়ামীলীগ মনোনীত প্রার্থী ইফতেখার আহমেদ বদরুল নৌকা) এর সাথে তীব্র প্রতিদ্বন্দিতায় রয়েছেন বিএনপি মনোনীত প্রার্থী সাজিম আহমদ তরফদার (ধানের শীষ)। এই ইউনিয়নে মাত্র দুইজন প্রার্থীই প্রতিদ্বন্দিতা করছেন। উভয় প্রার্থীর সুর সমান তালে চলছে। গোটা কমলগঞ্জ তথা মৌলভীবাজার জেলার মানুষজন এই ইউনিয়নের দিকে চেয়ে আছেন। উভয় প্রার্থীরা দেওরাছড়া চা বাগান, মিরতিংগা চাবাগান ও কালেঙ্গায় ভোট সেন্টারের দিকে নজর দিচ্ছেন। কারণ তিনটি সেন্টারেই হিসাব নিকাশে বোঝা যাবে কে হচ্ছেন চেয়ারম্যান ? সাধারণ মানুষের ধারনা হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হবে। এ ইউনিয়নে মোট ভোটার সংখ্যা ২৩ হাজার ১২৯।
২ নং পতনউষার ইউনিয়নে মোট ৭ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দিতা করছেন। তবে মুল লড়াই হবে আওয়ামীলীগ মনোনীত প্রার্থী ইঞ্জিনিয়ার মো: তওফিক আহমদ বাবু (নৌকা) ও বিএনপি মনোনীত প্রার্থী অলি আহমদ খান (ধানের শীষ) এর মধ্যে। এছাড়া জাতীয় পার্টির মনোনীত জরিফ হোসেন জাহিদ (লাঙ্গল), স্বতন্ত্র প্রার্থী মাহমুদুর রহমান বাদশা মোটর সাইকেল), বদরুজ্জামান চৌধুরী (চশমা), শেখ আসাদুজ্জামান চৌধুরী (আনারস) ও আজিজ চৌধুরী (ঘোড়া)। এই ইউনিয়নে লাঘাটা নদীর এপার ওপার নিয়ে কিছু আঞ্চলিক ভোট ফ্যাক্টর হলেও তৃতীয় বারের মতো প্রতিদ্বন্দিতাকারী সর্বমহলের কাছে সুপরিচিত ইঞ্জিনিয়ার তওফিক আহমদ বাবুর পাল্লা ভারী রয়েছে বলে ভোটারদের অভিমত। এ ইউনিয়নে মোট ভোট সংখ্যা ১৫ হাজার ৪০৬।
৩ নং মুন্সীবাজার ইউনিয়নে মোট ৪ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দিতা করছেন। এর মধ্যে আওয়ামীলীগ মনোনীত প্রার্থী বীর মুক্তিযোদ্ধা আবদুল মোতালিব তরফদার (নৌকা) এর সাথে বিএনপি মনোনীত প্রার্থী সফিকুর রহমান চৌধুরী (ধানের শীষ) এর সঙ্গে লড়াই হবে। অন্য প্রার্থীরা হলেন বিদ্রোহী আওয়ামীলীগের স্বতন্ত্র প্রার্থী মাজেদা কোরেশী (আনারস) ও বিদ্রোহী বিএনপির স্বতন্ত্র প্রার্থী মো: রফিকুল হক (মোটর সাইকেল)। এখানে লড়াই হবে দ্বিমুখী। আব্দুল মোতালিব তরফদারের সুর অনেক এগিয়ে রয়েছে তবে সফিকুর রহমান চৌধুরীর ভোট নিরব ভূমিকা পালন করছে। এ ইউনিয়নে মোট ভোটার সংখ্যা ১১ হাজার ৩৪।
৪ নং শমশেরনগর ইউনিয়নে মোট ৫ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দিতা করছেন। প্রতিদ্বন্দি প্রার্থীদের জয়-পরাজয় নির্ভর করছে চা শ্রমিকদের ওপর। এখানে মূল প্রতিদ্বন্দিতা হবে আওয়ামীলীগ মনোনীত প্রার্থী জুয়েল আহমদ (নৌকা) এর সাথে বিদ্রোহী আওয়ামীলীগের স্বতন্ত্র প্রার্থী মো. আবদুল গফুর (আনারস)। অন্য প্রার্থীরা হলেন- বিএনপি মনোনীত প্রার্থী মো: আব্দুল মোহিত (ধানের শীষ), বিদ্রোহী বিএনপির স্বতন্ত্র প্রার্থী মো: আহমদুর রহমান (মোটর সাইকেল) ও বিদ্রোহী বিএনপির স্বতন্ত্র প্রার্থী মো: এনামুল হক শামীম (চশমা)। এ ইউনিয়নের তিনটি চা বাগানের ভোটে প্রত্যেকেই ভাগ বসাতে মরিয়া হয়ে উঠেছেন। এখানে দ্বিমুখী লড়াইয়ের সম্ভাবনা থাকলেও বিদ্রোহী আওয়ামীলীগের মো. আব্দুল গফুরের সুর বেশি রয়েছে। এ ইউনিয়নে মোট ভোটার ২১ হাজার ৫শত ৭৭।
৫ নং কমলগঞ্জ ইউনিয়নে লড়াই হবে সেয়ানে সেয়ানে। এখানে ৫ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দিতা করলেও মূলত লড়াই হবে বর্তমান চেয়ারম্যান বিএনপি মনোনীত প্রার্থী গোলাম কিবরিয়া শফি (ধানের শীষ) এর সাথে আওয়ামীলীগের মনোনীত প্রার্থী মো. আব্দুল হান্নান (নৌকা) এর প্রতিদ্বন্দিতা হবে। অন্য প্রার্থীরা হলেন-জাতীয় পার্টির মনোনীত প্রার্থী মো: আব্দুল আজিজ (লাঙ্গল), স্বতন্ত্র প্রার্থী সফিকুল ইসলাম সফি (আনারস) ও বিদ্রোহী আওয়ামীলীগের স্বতন্ত্র প্রার্থী রহিম হোসেন (মোটর সাইকেল)। বর্তমান চেয়ারম্যান গোলাম কিবরিয়া শফির সুর বেশি রয়েছে বলে মাঠ পর্যায়ে জানা যায়। এ ইউনিয়নে মোট ভোটার ১৩ হাজার ২শত ২৫।
৬ নং আলীনগর ইউনিয়নে মোট ৪ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দিতা করছেন। বর্তমান চেয়ারম্যান আওয়ামীলীগ মনোনীত প্রার্থী ফজলুল হক হক বাদশা (নৌকা) এর সাথে বিএনপি মনোনীত প্রার্থী এডভোকেট মো. আব্দুল আহাদ (ধানের শীষ) ও স্বতন্ত্র প্রার্থী সাংবাদিক শাহীন মিয়া (আনারস) এর লড়াই হবে। এছাড়া প্রার্থী হিসেবে রয়েছেন জাতীয় পার্টির মনোনীত প্রার্থী আব্দুস সালাম (লাঙ্গল)। এ ইউনিয়নে এবার পরিবর্তনের সুর উঠেছে। এবার প্রথম বারের মতো উদীয়মান সাংবাদিক শাহীন মিয়া স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে মাঠে নামার সঙ্গে সঙ্গে পরিবর্তনের সুর ওঠে আলীনগর ইউনিয়ন জুড়ে। এ ইউনিয়নে মোট ভোটার ১৯ হাজার ৫৮।
৭ নং আদমপুর ইউনিয়নে মোট ৪ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দিতায় রয়েছেন। তবে মুল প্রতিদ্বন্দিতা হবে বর্তমান চেয়ারম্যান আওয়ামীলীগ মনোনীত প্রার্থী সাব্বির আহমদ ভূঁইয়া (নৌকা) এর সাথে বিএনপি মনোনীত প্রার্থী মো. আবদাল হোসেন (ধানের শীষ) এর সাথে। অন্য প্রার্থীরা হলেন- বিদ্রোহী আওয়ামীলীগের স্বতন্ত্র প্রার্থী মো. হাজির বক্স (ঘোড়া) ও স্বতন্ত্র প্রার্থী মো: আব্দুল হাই (আনারস)। এ ইউনিয়নে আবদাল হোসেন ও সাব্বির আহমদ ভূঁইয়ার মধ্যে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হবে। এ ইউনিয়নে মোট ভোটার ১৮ হাজার ৩শত ৫৫।
৮ নং মাধবপুর ইউনিয়নে মোট ৪ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দিতা করছেন। চা বাগান অধ্যুষিত এ ইউনিয়নে মূলত লড়াই হবে আওয়ামীলীগ মনোনীত প্রার্থী আসিদ আলী (নৌকা) এর সাথে বর্তমান চেয়ারম্যান স্বতন্ত্র প্রার্থী বিএনপি নেতা পুষ্প কুমার কানু (সিএনজি) এর সাথে। কৌশলগত কারণে বর্তমান চেয়ারম্যান চা শ্রমিক সন্তান পুষ্প কুমার কানু এবার বিএনপির মনোনয়ন নেননি। এখানে অন্য প্রার্থীরা হলেন- বিএনপি মনোনীত প্রার্থী এম এম হারুনুর রশীদ (ধানের শীষ) ও স্বতন্ত্র প্রার্থী কমলা বাবু সিংহ (আনারস)। এখানে প্রার্থীদের ভাল-মন্দ সবকিছুই ভোটাররা ওয়াকিবহাল। তাই নেই কোন নির্বাচনী উত্তাপ। তবে ভয় কাজ করছে সাধারণ ভোটারদের মধ্যে। চা বাগান ও মণিপুরী অধ্যুষিত থাকায় উভয় প্রার্থীদের মধ্যে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হবে। ভোটারা জানান, মন্তব্য করবো না। সময় মত জেনে নেবেন। এ ইউনিয়নে মোট ভোটার ১৯ হাজার ৫৮।
৯ নং ইসলামপুর হচ্ছে কমলগঞ্জ উপজেলার ভারতীয় সীমান্তবর্তী ইউনিয়ন। সবুজ আর পাহাড় ঘেরা চা বাগান অধ্যুষিত এ ইউনিয়নে প্রতিদ্বন্দিতায় রয়েছেন আপন দুই ভাই। বর্তমান চেয়ারম্যান আওয়ামীলীগ মনোনীত প্রার্থী মো. সুলেমান মিয়া (নৌকা) এর সাথে তীব্র প্রতিদ্বন্দিতা হবে বড় ভাই স্বতন্ত্র প্রার্থী বিএনপি নেতা মো. আবদুল হান্নান (আনারস) এর মধ্যে। কৌশলগত কারণে আব্দুল হান্নান ধানের শীষ প্রতীকে বিএনপির মনোনয়ন নেননি। এ ইউনিয়নে বিএনপির মনোনীত প্রার্থী সুন্দর আলী স্বতন্ত্র প্রার্থী আব্দুল হান্নানকে সমর্থন দিয়ে মনোনয়ন পত্র প্রত্যাহার করে নেন। এ অঞ্চলে কার অবস্থান কেমন হবে সাধারণ ভোটারাই বলতে অক্ষম। সমান তালে চলছে প্রচারণা। তবে চা শ্রমিক ভোটারদের ভোট যেদিকে বেশি পড়বে তিনিই নির্বাচিত হবেন। ভাই ভাই যুদ্ধে কে জয়ী হবে, কে হবে এই ইউনিয়নের পিতা দেখার বিষয়। এখন শুধু সময়ের অপেক্ষা ? এ ইউনিয়নে মোট ভোটার ১৭ হাজার ৯শত ৪৬ জন।
মন্তব্য করুন