করোনার প্রভাব : শ্রীমঙ্গলে দুর্দশায় কিন্ডারগার্টেন স্কুলের ৬ শতাধিক শিক্ষক ও কর্মচারী

June 30, 2021,

এহসান বিন মুজাহির॥ মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গল উপজেলায় কিন্ডারগার্টেন স্কুল শিক্ষকদের জীবনযাপন চরমে পৌঁছেছে। করোনার অভিঘাতে দেড় বছর ধরে বন্ধ রয়েছে দেশের সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় প্রতিষ্ঠানের ভাড়া, শিক্ষক-কর্মচারীদের বেতন পরিশোধ করতে পারছেন না প্রতিষ্ঠানের উদ্যোক্তারা। এসব শিক্ষকদের সহায়তায় কেউ এগিয়ে না আসায় পরিবার-পরিজন নিয়ে চরম বিপাকে পড়েছেন তাঁরা। ফলে মানবেতর জীবনযাপন করতে হচ্ছে শিক্ষকদের। শ্র্রীমঙ্গলে ৯ টি ইউনিয়ন ও ১ টি পৌরসভায় ৪৮টি কিন্ডারগার্টেন স্কুল রয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠানে কর্মরত শিক্ষক-শিক্ষিকার সংখ্যা ৫৫০ জন এবং এবং কর্মচারী সংখ্যা ৭০ জন। এসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো শিক্ষার্থীদের বেতনের টাকায় পরিচালিত হয়। শিক্ষার্থীদের বেতন-ভাতা আর টিউশনের ফি দিয়ে সংসার চালাতেন তাঁরা। করোনার কারণে প্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধ থাকায় শিক্ষার্থীদের বেতন যেমন বন্ধ, প্রাইভেট টিউশনিও রয়েছে বন্ধ। ফলে একেবারেই বন্ধ শিক্ষকদের আয়। করোনাকালে শিক্ষাঙ্গনের সঙ্কটের চিত্র নিয়ে সরেজমিন অনুসন্ধানে বেরিয়ে এসেছে উদ্বেগজনক নানা চিত্র। শ্রীমঙ্গলে কয়েকটি প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে ভবন বাড়িওয়ালাকে ছেড়ে দেয়া হয়েছে। আবার কিছু প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে রাখলেও শিক্ষকরা আশা করছেন যদি পরিস্থিতি ভালো হয় তবে আবার চেষ্টা করবেন খোলার। প্রধান শিক্ষকরা প্রায় প্রত্যেকেই বলছেন, তারা প্রতিষ্ঠান বিক্রি করে দিতে চান, কিন্তু এখনতো কেউ তা কিনতেও রাজি হচ্ছেন না। অনেকেই কয়েক মাস ধরে বিক্রির জন্য ক্রেতা খুঁজছেন। কিন্ডারগার্টেন স্কুল শিক্ষকদের সংগঠন সুত্রে জানা যায়-নিজের প্রিয় প্রতিষ্ঠান বিক্রি করে দেয়ার সিদ্ধান্ত দিচ্ছেন বেশ কয়েকজন উদ্যোক্তা ও শিক্ষকরা। জীবন-জীবিকার তাগিদে খুঁজছেন অন্য পেশা। বহু শিক্ষক চাকরি হারিয়ে যুক্ত হচ্ছেন বিভিন্ন পেশায়। শ্রীমঙ্গল শহরতলীর এক্সপার্ট কিন্ডারগার্টেন স্কুলের প্রধান শিক্ষক মোহাম্মদ আব্দুল হান্নান বলেন-২০২০ সালের ১৭ মার্চ থেকে স্কুলের শিক্ষা কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। বন্ধ রয়েছে সব ধরনের আয়-রোজগারও। এক বছরেরও বেশি সময় বন্ধ রয়েছে বেতন-ভাতা। কিন্তু প্রতি মাসে বকেয়ার খাতায় যোগ হচ্ছে স্কুল ভাড়া। সেটার জন্য বাড়িওয়ালা চাপ দিচ্ছেন। চরম হতাশার মধ্যে দিন কাটাচ্ছি। উপজেলার বরুণা চাইল কেয়ার এডুকেশন সেন্টারের প্রধান শিক্ষক বলেন-একদিকে যেমন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে প্রতিষ্ঠানের আসবাবপত্র নষ্ট হচ্ছে। অন্যদিকে শত শত শিক্ষকরা কর্মহীন হয়ে পড়ায় পরিবার পরিজন নিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন। জালালিয়া রোডে অবস্থিত শ্রীমঙ্গল আইডিয়াল স্কুলের অধ্যক্ষ লেখক ও সাংবাদিক এহসান বিন মুজাহির বলেন-‘পিঠ দেয়ালে ঠেকে গেছে। করোনা মহামারী এক চ্যালেঞ্জের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। অভিভাবকদের কাছ থেকে স্কুলের বেতন আদায় হচ্ছে না। স্কুলের ঘর ভাড়াও পরিশোধ করতে পারছি না। প্রতি মাসেই জমতে জমতে বাড়িভাড়া ও শিক্ষক-কর্মচারীদের বেতন মিলিয়ে লাখ লাখ টাকা দিতে হচ্ছে। শিক্ষক-কর্মচারীদের বেতন-ভাতা, বাড়িভাড়াসহ অন্যান্য খরচের বাকির পরিমা বেড়েই যাচ্ছে। আর কোন উপায় নেই স্বাভাবিকভাবে প্রতিষ্ঠান চালানোর। পরিস্থিতি দীর্ঘ হওয়ায় স্কুল পরিচালনা দুরূহ ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। যদি সরকারের পক্ষ থেকে কোনো ধরণে সহায়তা না দেয়া হয় এবং করোনা সঙ্কট আরও বেশি দিন স্থায়ী হয়, তাহলে অনেক কিন্ডারগার্টেন স্কুলই বন্ধ হয়ে যাবে। কঠিন পরিস্থিতিতে পড়া এসব স্কুলের শিক্ষকদের আর্থিক সহায়তা, স্কুল উদ্যোক্তাদের জন্য সহজ শর্তে ঋণ এবং স্বাস্থ্যবিধি মেনে দ্রুত স্কুল খুলে দেয়ার জন্য সরকারের কাছে দাবি জানাই। করোনা দুর্যোগে আর্থিক সঙ্কটের কারণে কয়েকটি কিন্ডারগার্টেন স্কুল বিক্রির উদ্যোগও চিরতরে বন্ধের কথা জানিয়ে শ্রীমঙ্গল কিন্ডারগার্টেন শিক্ষক ঐক্য পরিষদ এর সভাপতি ও বাংলাদেশ কিন্ডারগার্টেন এসোসিয়েশন এর মৌলভীবাজার জেলা কমিটির সভাপতি অধ্যক্ষ মোঃ এহসানুল হক বলেন-বর্তমান আর্থিক সঙ্কট ও ভবিষ্যতের আর্থিক দুরবস্থা বিবেচনা করে সরকারকে দ্রুত পদক্ষেপ নিতে হবে। বেসরকারি শিক্ষা স্তরের চলমান সঙ্কটে নজর না দিলে ভয়াবহ ক্ষতির মুখে পড়বে দেশের ভবিষ্যত প্রজন্ম।
পৌর শহরের জালালিয়া সড়কে অবস্থিত শ্রীমঙ্গল আইডিয়াল স্কুল ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি, শিক্ষানুরাগী ইসমাইল মাহমুদ বলেন, করোনা ভাইরাসের কারণে দীর্ঘদিন ধরে স্কুল বন্ধ। স্কুল বন্ধ থাকার কারণে প্রতিষ্ঠানের আয়ের সকল উৎস বন্ধ রয়েছে।শিক্ষক-কর্মচারীদের বেতন দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। স্কুলের ঘর ভাড়া ২ লাখেরও বেশি বকেয়া রয়েছে। এই দুর্যোগকালীন সময়ে সরকারি বা বেসরকারিভাবে কোনও সুযোগ-সুবিধা না পাওয়ায় শিক্ষক-কর্মচারীদের পরিবারে হাহাকার বিরাজ করছে। দেশের শিক্ষা ব্যবস্থার উন্নয়নে এসব প্রাইভেট প্রতিষ্ঠানগুলোর অনেক অবদান রয়েছে। করোনার এই দুর্যোগের সময়ে সরকারের উচিত এ সমস্ত শিক্ষক এবং প্রতিষ্ঠানকে আর্থিক সহায়তা করা। প্রসঙ্গত,বিগত বছর এবং চলতি বছরে ঢাকাসহ সারাদেশে বাংলাদেশ কিন্ডারগার্টেন এসোসিয়েশন (গভ: রেজি: নং: এস-১০২৮/৯৮) এর চেয়ারম্যান মিসেস মনোয়ারা ভূঁইয়া ও মহাসচিব মিজানুর রহমান সরকার এর নেতৃত্বে কিন্ডারগার্টেন স্কুল শিক্ষকরা সংবাদ সম্মেলন, স্মারকলিপি, মানববন্ধন কর্মসূচি, প্রতীকি অনশনসহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করেন। সেখানে আপদকালীন সময়ে সরকার থেকে সহজ শর্তে ঋণ, শিক্ষকদের অনুদান প্রদানসহ স্বাস্থ্যবিধি মেনে দ্রুত স্কুল খুলে দেওয়ার দাবি জানানো হয়।

সংবাদটি শেয়ার করতে নিচের “আপনার প্রিয় শেয়ার বাটনটিতে ক্লিক করুন”

মন্তব্য করুন

Social Media Auto Publish Powered By : XYZScripts.com