করোনা দূর্যোগ : অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়ানোর এখনই সময়
এহসান বিন মুজাহির॥ করোনা ভাইরাসের কারণে পুরো দেশই কার্যত অবরুদ্ধ হয়ে আছে দেশ। এতে সারাদেশে বিভিন্ন শ্রেণির মানুষ উপার্জনহীন হয়ে পড়েছেন। এসব মানুষ খাদ্য সংকট ও অর্থকষ্টে ভুগছেন। এসব দূর্গত মানুষের পাশে দাঁড়ানোর এখনই সময়। বাংলাদেশে নিবন্ধিত ৪১টি রাজনৈতিক দলসমুহের মাঝে এই করোনা দুর্যোগে অসহায় মানুষের পাশে কয়টি দলকে পাওয়া যাচ্ছে? বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে করোনা দুর্গত সকল শ্রেণির মানুষের দুর্দশা লাঘবের জন্য সর্বোচ্চ চেষ্টা অব্যাহত রেখেছে। আওয়ামীলীগ এবং তাদের অঙ্গসংগঠনের তৎপরতাও চোখে পড়ার মতো।
কিন্তু বড় বড় অন্যান্য রাজননৈতিক দল এবং ইসলামী দলগুলোর নেতাকর্মীদের তৎপরতা খুব একটা চোখে পড়ার মতো না। ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশসহ দুয়েকটি ইসলামী সংগঠন দুর্গত মানুষের কল্যাণে কাজ করে যাচ্ছে। তবে বিভিন্ন ইসলামী দলের কিছু সংখ্যক নেতা-কর্মীরা ব্যক্তি ও সামাজিক সংগঠনের ব্যানারে সামর্থের আলোকে ত্রাণ বিতরণ করছেন।
বিশেষ করে কওমি আলেমরা করোনা রুগিদের কাফন-দাফনসহ, কর্মহীন মানুষদের ঘরে ঘরে নগদ অর্থ এবং খাদ্যসামগ্রী পৌছে দিচ্ছেন। গতকাল গণভবনে ভিডিও কনফারেন্সে প্রধানমন্ত্রী এসব আলেমদের প্রশংসা করেছেন। ত্রাণ বিতরণে মাঠে সক্রিয় বাংলাদেশ ছাত্রলীগ। শুধু শ্রীমঙ্গল নয়, সারাদেশেই তারা তৎপর। এজন্য গতকাল গণভবনে ভিডিও কনফারেন্সে ছাত্রলীগের প্রশংসা করেছেন প্রধানমন্ত্রী।
বাংলাদেশে বেশ কয়েকটি ছাত্র সংগঠন রয়েছে। তন্মধ্যে ইসলামী ছাত্র সংগঠনের সংখ্যাও কম না।
কিন্তু করোনায় অসহায়দের পাশে মাঠে কয়টি ছাত্র সংগঠন কাজ করছে। দুয়েকটি সংগঠন কয়েকটি জেলা বা থানার ভেতরেই তাদের কার্যক্রম সীমাবদ্ধ।
সরকার থেকে নিবন্ধিত এনজি এবং বিভিন্ন সমাজসেবামূলক সামাজিক সংগঠনের অভাব নেই দেশে। শুধু মৌলভীবাজার জেলায় নিবন্ধিত ৪২৯টি সেচ্ছাসেবী সংস্থা রয়েছে। এই দুর্যোগে কয়টি সংগঠন সমাজকল্যাণে মাঠে রয়েছে?
নির্বাচনের সময় জনপ্রতিনিধিরা তো এলাকায় অনেক সময় দেন। খেয়ে না খেয়ে রাতদিন ভোটারের বাসায় বাসায় বারবার যান। নির্বাচনে জেতার জন্য প্রচুর অর্থ খরচ করেন। কিন্তু এই দুর্যোগে কয়জন ভোটারে ঘরে ঘরে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিরা যাচ্ছেন? কোনো কোনো এলাকায় জনপ্রতিনিধিরা নিজে সহযোগিতা করবে দূরের কথা বরং উল্টা সরকারের দেয়া গরিবদের জন্য বরাদ্দকৃত ত্রাণ চুরিতেও লিপ্ত তারা!
আর যারা নির্বাচন আসার আগে নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার টার্গেটে শুভেচ্ছা ব্যানার, ফেস্টুন, পোস্টারে নির্বাচনী এলাকা প্রচারণায় শীর্ষে থাকেন আজ তারা কোথায়? করোনায় দুর্গত মানুষের পােেশ কি আর্থিক এবং খাদ্য সামগ্রী বিতরণের মাধ্যমে এগিয়ে আসছেন?
এটা স্বীকার করতে হবে যে, বক্তিগত উদ্যোগ এবং সামাজিক সংগঠনের পক্ষ থেকে অনেকেই আর্থিক এবং খাদ্য সামগ্রী বিতরণের মাধ্যমে এই করোন দুর্যোগে অসহায় মানুষের সাহায্যে এগিয়ে এসেছেন। তাদের প্রতি আন্তরিক ধন্যবাদ রইলো।
মানুষ হিসেবে আমাদের উচিত প্রত্যেক মানুষের সুখের দিনে তাদের পাশে থেকে আনন্দ ভাগাভাগি করার কথা। মানুষের সুখে-দুঃখে তাদের পাশে থাকার আহ্বান জানিয়েছিলেন কবি জসিম উদ্দিন। তিনি বলেছিলেন-সবার সুখে হাসবো আমি, কাঁদবো সবার দুখে, নিজের খাবার বিলিয়ে দিব অনাহারির মুখে।
নিজের সুখকে বিসর্জন দিয়ে অপরের মুখে হাসি ফোটানোর উদ্দেশ্যে আমরা কতজন পেরেছি? এখন তো পরিস্থিতি এমন হয়েছে যে, নিজের খাবার অন্যকে বিলিয়ে দেয়া তো দূরের কথা, বরং অন্যের মুখের খাবার কেড়ে নেয়ার প্রবণতা লক্ষ করছি। কবি কামিনী রায় বলেছিলেন-আপনারে লয়ে বিব্রত রহিতে, আসে নাই কেহ অবনী পরে, সকলের তরে সকলে আমরা, প্রত্যেকে মোরা পরের তরে। এই মানবিক বোধ সবার মধ্যে জেগে উঠুক।
আমাদের প্রত্যেকেরই উচিত কবি জসিম উদ্দিনের মতো করে চিন্তা করা। কবির মতো গরিব অসহায় মানুষকে ভালোবাসা। প্রতিবেশীকে উপোস রেখে নিজে খাওয়ার মাঝে, বিলাসিতার মাঝে আসলে তৃপ্তি পাওয়া যায় না। প্রকৃত তৃপ্তি তখনই পাওয়া যায় যখন কারও প্রতি সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেয়া হয়।
এই করোনা দুর্যোগের সময় বাংলাদেশ পুলিশ, র্যাব, সেনাবাহিনী, বিজিবি, চিকিৎসক, সাংবাদিকরা অসহায় মানুষের পাশে সর্বদা নিয়োজিত রয়েছেন। দেশের নাগরিকদের জন্য এসব পেশাজীবিরা মাঠে তৎপর। এই সময়ের প্রকৃত যোদ্ধা এবং সেবক তারাই। প্রশাসন ডাক্তার, সাংবাদিক এবং করোনায় মৃত্যুদের কাফন-দাফনে নিয়োজিত তরুণ আলেমদের স্যালুট। আসুন কর্মহীন অসহায় মানুষের পাশে যার যার সামর্থের আলোকে এগিয়ে আসি।
লেখক : সাংবাদিক, কলামিস্ট ও প্রিন্সিপাল শ্রীমঙ্গল আইডিয়াল স্কুল।
মন্তব্য করুন