করোনা ভাইরাস ও কৃষি

May 19, 2020,

সায়েক আহমদ॥ ফেসবুকে এসএম উমেদ আলীর একটি ছবি দেখে চমকে উঠলাম। কৃষক এসএম উমেদ আলী। মৌলভীবাজার প্রেসক্লাবের পর পর তিনবার নির্বাচিত সাধারণ সম্পাদক এবং এনটিভির জেলা প্রতিনিধি। একটি ছবিতে ধানের চারা উত্তোলন করছেন। আরেকটি ছবিতে ধানের চারা রোপন করছেন। হঠাৎ করে একজন মিডিয়াকর্মীর কৃষক হওয়ার সখ জাগলো কেন? এটা কি শুধুই সখ, নাকি করোনা মহাযুদ্ধের প্রস্তুতিপর্ব?

বিশ্বজুড়ে করোনা ভাইরাস মহামারি আকার ধারণ করেছে। বাংলাদেশেও এর ব্যতিক্রম কিছুই হয়নি। বরং পরিসংখ্যান, দেশের আবহাওয়া পরিস্থিতি, জনসাধারণের অবহেলা, করোনা প্রতিরোধে অসচেতনতা, করোনা সংক্রমণে লুকোচুরি, চিকিৎসক, পুলিশ ও মিডিয়াকর্মীদের করোনায় আক্রান্ত এবং মৃত্যুবরণসহ অসংখ্য কারণ এটাই নির্দেশ করছে যে, অচিরেই বাংলাদেশ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের চেয়েও ভয়াবহ পরিস্থিতিতে পড়তে যাচ্ছে। অনেকেই বলতে পারেন এত ভয় পাবার কারণ কী? যদি সত্যিই আমরা আশংকামুক্ত থাকতে পারি তবে মনের শান্তিটা অন্তত পাওয়া যাবে। কিন্তু পরিস্থিতি কি আসলেই তাই?

প্রতিদিনই দেশে করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। পাল্লা দিয়ে বাড়ছে মৃতের সংখ্যা। আজ সর্বমোট মৃতের সংখ্যা ২৫০। বিশ্বের অন্যান্য দেশের হিসাব বাদ দিলেও শুধুমাত্র মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রেই বাংলাদেশীদের মধ্যে মারা গিয়েছেন ২৫০ জন। সারাবিশ্বে মোট কতজন বাংলাদেশী করোনায় আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করেছেন তার সঠিক সংখ্যা কি আমরা বলতে পারি? পাশাপাশি শ্বাষকষ্ট, সর্দি, কাশি, জ্বর এবং করোনা উপসর্গ নিয়ে মৃতের সংখ্যা কত? এরা কি করোনায় আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করেছেন নাকি অন্য কারণে এ সব তথ্যও আমরা সঠিকভাবে পাচ্ছি না। কোন কোন জায়গায় লুকোচুরি এমনভাবে চলছে যে, মনে হচ্ছে করোনায় আক্রান্তের সংবাদ পরিবেশিত হলে ভূমিকম্প হয়ে যাবে। বাস্তবেও তাই। কারণ নমুনা পরীক্ষায় করোনায় আক্রান্তের সংবাদ এলেই পুরো এলাকাজুড়ে ভয়াবহ পরিস্থিতির সৃষ্টি হচ্ছে। প্রতিবেশিরা জীবিত অবস্থাতেই করোনায় আক্রান্ত ব্যক্তিকে অর্ধমৃত করে ফেলছে। আত্মীয়স্বজন পালিয়ে যাচ্ছে। সবচেয়ে ভয়াবহ অবস্থা হচ্ছে, মৃত্যুর পর জানাযার নামাজেও কাউকে পাওয়া যাচ্ছে না। কোথাও বা সংসদ সদস্য কোথাও বা ইউএনও জানাযার নামাজে ইমামতি করছেন এমন সংবাদ আমাদের হৃদয়কে ক্ষতবিক্ষত করে ফেলে। এ কারণে করোণায় আক্রান্ত হয়ে সঠিক কতজন মৃত্যুবরণ করছে, এমন সংবাদ আমাদের পক্ষে বের করা অসম্ভব ব্যাপার।

সারাবিশ্বের মত বাংলাদেশেও চলছে অঘোষিত লকডাউন। চলছে সাধারণ ছুটি। এই সময়ে ঘরে থাকার জন্য সরকার বারবার তাগাদা দিচ্ছেন। অনুরোধ করছেন। আইন প্রয়োগ করছেন। তারপরও পরিস্থিতির উন্নতি হচ্ছে না। এর একমাত্র কারণ, ‘ক্ষুধার রাজ্যে পৃথিবী গদ্যময়, পূর্ণিমা চাঁদ যেন ঝলসানো রুটি।’ বাঙালিরা করোনায় আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করতে প্রস্তুত কিন্তু ক্ষুধায় মৃত্যুবরণ করতে রাজী নয়। নিম্নবিত্তরা অসহায়। মধ্যবিত্তরা হতভম্ব। উচ্চবিত্তরা অর্থ-বিত্ত-প্রাচুর্য আরো বেশি বেশি অর্জন করতে না পেরে হতাশ এবং আক্রমণাত্মক। এ কারণে সরকারকেও মাথা নত করতে হয় গার্মেন্টস মালিকগণের কাছে, ব্যবসায়ীদের কাছে, পরিবহন বিভাগের কাছে। সরকারও তো কিংকর্তব্যবিমূঢ়। তারপরও সত্যিকার অর্থে আমাদের মত হতদরিদ্র দেশে বর্তমান প্রধানমন্ত্রীর মত সাহসী নেতৃত্ব থাকায়ই সাহসের সাথে লড়ছে বাংলাদেশ। লড়ছে বাংলাদেশের সচেতন জনগণ। হোক সে চিকিৎসক-নার্স, পুলিশ-সেনাবাহিনী কিংবা মিডিয়ার সাহসী সৈনিকেরা। যদিও এদের সংখ্যা অপ্রতুল। তাদের কারণেই জাতি কিছুটা হলেও আশার আলো দেখছে।

চিকিৎসক-নার্স, পুলিশ-সেনাবাহিনী সহ যারা করোনাযোদ্ধা, যারা সাহসের সাথে লড়াই করে মৃত্যুর কাছে পরাজিত হন, তাদের সংবাদ আমরা প্রতিনিয়ত পেয়ে থাকি। তাদেরকে জানাই বিনম্র শ্রদ্ধা। তাদের আত্মত্যাগ আমাদের হৃদয়কে করে ক্ষতবিক্ষত। তারপরও আমরা সেই অমোঘ বাণীতে শান্তনা খুঁজে পাই, ‘যেতে নাহি দেব হায়, তবু চলে যেতে চায়, তবু চলে যায়।’

প্রতিনিয়ত করোনার সংবাদ দেশবাসীকে যারা অবহিত করেন সেই সংবাদকর্মীরাও আজ অসহায়। ইতোমধ্যে মিডিয়াব্যক্তিত্বদের মৃত্যুসংবাদ জেনে আমরা হতবিহ্বল। তারপরও তো তারাও মানুষ। পেশার কারণে হোক কিংবা নেশার কারণে হোক সংবাদকর্মীদেরকে পেশাগত দায়িত্ব পালন করার জন্য প্রতিদিনই কিছুটা সময় বাইরে কাটাতে হয়। এদের আড্ডা দেয়ারও কোন স্থান নেই। দায়িত্ব শেষ করে তারা ফিরে যান ঘরে, বাইরের সংবাদ সংক্রান্ত কাজগুলো ঘরে বসেই সেরে নেন। তারপরও তাদেরও সময় কাটে না। কারই বা ঘরে বসে থাকতে ইচ্ছে হয়?

এ পরিস্থিতিতে সময় কাটানোর জন্য এবং সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার স্বার্থে একটি নতুন নির্দেশনা দিয়েছেন স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী। সারাদেশের জেলা প্রশাসক, সংসদ সদস্যসহ গন্যমান্য ব্যক্তিবর্গের সাথে তিনি ভিডিও কনফারেন্সে করোনা পরিস্থিতি নিয়ে কথা বলেন। এ সময় তিনি বলেন, করোনা পরবর্তীতে বিশ্ব ব্যাপী খাদ্য সংকট দেখা দিবে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ওই সময় আরো বলেন, ‘এক ইঞ্চি জমিও যেন কেউ খালি ফেলে না রাখেন।’

মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর ঐ আহ্বান কিন্তু অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কেন গুরুত্বপূর্ণ তা জানার আগে আমরা পবিত্র কোরআন শরীফ এবং হিব্রু বাইবেলে বর্ণিত হযরত ইউসুফ (আ.) এর দুর্ভিক্ষজনিত একটি স্বপ্নের ব্যাখ্যার ইতিহাসটুকু জেনে নেই।

ভাগ্যের পরিহাসে হযরত ইউসুফ (আ.) কে কারাগারে প্রেরণ করা হয়। তিনি যখন কারাগারে প্রবেশ করলেন তখন তার সাথে আরও দু’জন কয়েদিও কারাগারে প্রবেশ করল। তাদের একজন বাদশাহকে মদ্যপান করাত এবং অপরজন বাবুর্চি ছিল। তারা উভয়েই বাদশাহর খাদ্যে বিষ মিশ্রিত করার অভিযোগে দণ্ডিত হয়েছিল। একদিন তারা হযরত ইউসুফ (আ.) কে বলল, ‘আমরা আপনার কাছে আমাদের স্বপ্নের ব্যাখ্যা জানতে চাই।’ তাদের একজন যে বাদশাহকে মদ্যপান করাত সে বলল, ‘আমি স্বপ্নে দেখলাম যে, আঙ্গুর থেকে শরাব বের করছি।’ দ্বিতীয় জন যে বাদশাহর বাবুর্চি ছিল সে বলল, ‘আমি স্বপ্নে দেখলাম যে, আমার মাথায় রুটিভর্তি একটি ঝুড়ি রয়েছে। তা থেকে পাখিরা ঠুকরে ঠুকরে আহার করছে।’ হযরত ইউসুফ (আ.) তাদের স্বপ্নের ব্যাখ্যা দিলেন যে, ‘তোমাদের একজন মুক্তি পাবে এবং চাকুরীতে পুনর্বহাল হবে। অপর জনের অপরাধ প্রমাণিত হবে এবং তাকে শূলে চড়ানো হবে। পাখিরা তার মাথার মগজ ঠুকরে খাবে।’

যে ব্যক্তি মুক্তি পাবে বলে ধারণা করেছিলেন তাকে হযরত ইউসুফ (আ.) বললেন, ‘যখন তুমি মুক্তি পাবে এবং বাদশাহর চাকুরীতে পুনর্বহাল হবে, তখন বাদশাহর কাছে আমার বিষয়ে আলোচনা করো।’ কিন্তু কারাগার থেকে মুক্তি পাওয়ার পর ঐ ব্যক্তি হযরত ইউসুফ (আ.) এর কথা ভুলে গেল। ফলে হযরত ইউসুফ (আ.) কে সাত বছর কারাগারে থাকতে হলো।

একদিন মিশরের বাদশাহ স্বপ্নে সাতটি মোটাতাজা গাভী দেখলেন। এগুলোকে অন্য সাতটি শীর্ণ গাভী খেয়ে যাচ্ছে। আরও দেখলেন সাতটি গমের সবুজ শীষ ও সাতটি শুষ্ক শীষ। এ স্বপ্নের ব্যাখ্যার জন্য রাজ্যের জ্ঞানী ব্যক্তিদেরকে একত্রিত করে তিনি স্বপ্নের ব্যাখ্যা জিজ্ঞেস করলেন। কিন্তু কেউ স্বপ্নটির ব্যাখ্যা দিতে পারলো না। তাই সবাই উত্তর দিল, এটা কল্পনাপ্রসূত স্বপ্ন। আমরা এরূপ স্বপ্নের ব্যাখ্যা জানি না। সঠিক স্বপ্ন হলে ব্যাখ্যা দিতে পারতাম। তখন মুক্তিপ্রাপ্ত সেই কয়েদির হযরত ইউসুফ (আ.) এর কথা মনে পড়ে গেল। সে অগ্রসর হয়ে বলল, ‘আমি এ স্বপ্নের ব্যাখ্যা বলতে পারব। তবে আমাকে কারাগার বদ্ধ হযরত ইউসুফ (আ.) এর কাছে যেতে হবে। তিনিই এই স্বপ্নের ব্যাখ্যা দিতে পারবেন।’ বাদশাহ তাকে কারাগারে হযরত ইউসুফ (আ.) এর সাথে সাক্ষাতের অনুমতি দিলেন। সে ব্যক্তি কারাগারে গিয়ে হযরত ইউসুফ (আ.) এর কাছে বাদশাহর স্বপ্নের ব্যাখ্যা করার জন্য অনুরোধ করলো। হযরত ইউসুফ (আ.)  বললেন, ‘সাত বছর ভাল ফলন হবে, এরপর সাত বছর দুর্ভিক্ষ হবে। হযরত ইউসুফ (আ.) আরও বললেন, দুর্ভিক্ষের বছর অতিক্রান্ত হয়ে গেলে এক বছর খুব বৃষ্টিপাত হবে এবং প্রচুর ফসল উৎপন্ন হবে। তিনি পরামর্শ দিলেন যে, প্রথম সাত বছর যে অতিরিক্ত শস্য উৎপন্ন হবে, তা শীষের মধ্যেই রাখতে হবে, যাতে পুরানো হওয়ার পর গমে পোকা না লাগে। এ ব্যক্তি স্বপ্নের ব্যাখ্যা নিয়ে ফিরে আসে এবং বাদশাহকে তা অভিহিত করে। বাদশাহ আদেশ দিলেন যে, হযরত ইউসুফ (আ.) কে কারাগার থেকে বাইরে নিয়ে এসো। বাদশাহর দূত এ বার্তা নিয়ে কারাগারে পৌঁছল। বাদশাহ হযরত ইউসুফ (আ.) কে মুক্তি দিয়ে তার উপদেষ্টা করে নিলেন। তখন হযরত ইউসুফ (আ.) বাদশাহর কাছে দেশের উৎপন্ন ফসলসহ দেশীয় সম্পদ রক্ষণাবেক্ষণ করার দায়িত্ব তার কাছে সোপর্দ করার অনুরোধ করলেন। এক বছর অতিবাহিত হওয়ার পর শুধু অর্থ মন্ত্রণালয়ই নয়, বরং যাবতীয় সরকারী দায়িত্বও তাঁর উপর সোপর্দ করে দেয়া হলো।

হযরত ইউসুফ (আ.)  এর হাতে মিসরের শাসনভার দেওয়ার পর স্বপ্নের ব্যাখ্যা অনুযায়ী প্রথম সাত বছর সমগ্র দেশে সুখ-শান্তি ও কল্যাণ নিয়ে আসে। এই সময় প্রচুর ফসল উৎপন্ন হয় এবং তা সঞ্চিত করে রাখা হয়। সাত বছর অতিক্রম হওয়ার পরে ভয়াবহ দুর্ভিক্ষ দেখা দেয়। হযরত ইউসুফ (আ.) প্রথম বছরে দেশের মজুদকৃত শস্য খুব সাবধানে সংরক্ষিত করলেন। মিসরের অধিবাসীদের কাছে তাদের প্রয়োজন পরিমাণে খাদ্যশস্য পূর্বে সঞ্চিত করানো হলো। যখন দুর্ভিক্ষ ব্যাপক আকারে ছড়িয়ে পড়ল তখন মিসর দুর্ভিক্ষের ছোবল থেকে মুক্ত ছিল। ছিল খাদ্যশস্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ। বরং আশেপাশের সকল দেশ থেকে খাদ্যশস্য নিয়ে যাবার জন্য লোকজন মিসরে আগমন করতে লাগল। হযরত ইউসুফ (আ.) কৃষি বিভাগকে শক্তিশালী করে তৎকালীন সময়ে মিসরকে ভয়াবহ দুর্ভিক্ষের হাত থেকে রক্ষা করেছিলেন।

সারাবিশ্ব যখন করোনা ভাইরাসের হাত থেকে মুক্তিলাভ করবে, তখন বিশ্বজুড়ে চলবে ভয়াবহ দুর্ভিক্ষ। ইতোমধ্যে পঙ্গপালের মত আরেক ভয়াবহ আতংক আফ্রিকা, ইসরাইল থেকে শুরু করে ভারত, পাকিস্তান পর্যন্ত অগ্রসর হয়ে গেছে। কাজেই নিশ্চিতভাবে বলা যায় যে, অচিরেই বাংলাদেশের মত দারিদ্রের কষাঘাতে জর্জরিত দেশকেও দুর্ভিক্ষের বিরুদ্ধে লড়াই করতে হবে। কাজেই প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা অনুযায়ী বাংলাদেশের আনাচে কানাচে পড়ে থাকা সকল ভূমিকে কাজে লাগাতে হবে। এজন্য কাউকে ঘরের বাইরে যেতে হবে না। বরং অত্যন্ত সুন্দরভাবে সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে করোনার হাত থেকেও রেহাই পাওয়া যাবে এবং বাংলাদেশকেও দুর্ভিক্ষের হাত থেকে রক্ষা করা যাবে।

মিডিয়াকর্মী এসএম উমেদ আলী যখন কৃষক হয়ে যান, তখন আমাদেরকে আশায় বুক বেঁধে ফেলতে হবে। কারণ দেশকে পরবর্তী যুদ্ধ থেকে রক্ষা করার জন্য আগাম সতর্কতা হিসেবে কৃষিখাতকে অবশ্যই গুরুত্ব দিতে হবে। দেশের আপামর জনগণকে ধান থেকে শুরু করে সকল ধরণের শাক-সব্জি, ফলমূল সহ কৃষিপণ্য উৎপাদনের মত গুরুত্বপূর্ণ কাজে নিয়োজিত হতে হবে। হোক না তা ছাদ বাগান কিংবা ছোট্ট টবে একটি মরিচ গাছ রোপন এবং পরিচর্যার মাধ্যমে।

মৌলভীবাজার জেলার আরেকটি সংবাদ পড়ে হৃদয়জুড়ে আনন্দের শিহরণ বয়ে গেল। মৌলভীবাজার জেলার হাওরে ধান কাটা প্রায় শেষ। কারণ প্রতি বছরের মত এবার আর মৌলভীবাজারের হাওরের ধান তোলা নিয়ে চিন্তিত থাকতে হয়নি কৃষকদেরকে। এ অঞ্চলের কৃষকরা সর্বদা আতংকিত থাকতেন না জানি কখন ভারতের উজান ঢল নেমে হাওরের ধান প্লবিত করে নিয়ে যায়। তবে চলতি বোরো মৌসুমে প্রকৃতি ছিল অনুকূলে। বন্যা, পাহাড়ি ঢল, শিলাবৃষ্টি ও অতিবৃষ্টি কিছুই ছিল না। করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাবজনিত কারণে শ্রমিক সংকট থাকার পরও সর্বস্তরের মানুষের প্রচেষ্টায় হাওরের নিম্নাঞ্চলের শতভাগ ধান কাটা শেষ হয়েছে। এ সংবাদটি শুধু মৌলভীবাজার জেলা নয় বরং দেশের জন্যও একটি আনন্দ সংবাদ। তবে কৃষকরা ধানের ন্যায্যমূল্য পাওয়া নিয়ে সংশয়ে রয়েছে। এ সংশয়টা দূর করার জন্য সরকারকেই এগিয়ে আসতে হবে।

জানা যায় কৃষি মন্ত্রণালয়ের নানান উদ্যোগের ফলে সারা দেশের হাওরের ধান সফলভাবে কর্তন শেষ হয়েছে। আশা করা যায়, আগামী জুন মাসের মধ্যে সফলভাবে সারা দেশের বোরো ধান শতভাগ কর্তন সম্পন্ন হবে।

মৌলভীবাজার জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, এ বছর জেলায় বোরো ধানের আবাদ হয়েছে ৫৩ হাজার ৫৩০ হেক্টর জমিতে। বোরো ধানের উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে দুই লাখ চার হাজার ৪৮৫ মেট্রিক টন। পাশাপাশি চলতি আউস মৌসুমে আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৫৬ হাজার ৭৯৭ হেক্টর জমি। আউসের উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে এক লাখ ৪৮ হাজার ২৪০ মেট্রিক টন।

বছর আমন আবাদ হয় এক লাখ ১৫০ হেক্টর জমিতে। যা উৎপাদন হয়েছিল দুই লাখ ৭০ হাজার ২০৫ মেট্রিক টন। আসছে আমন মৌসুমে ধানের আবাদ ও উৎপাদন আরো বৃদ্ধি পাবে। প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও পোকা-মাকড়ের আক্রমণ না থাকলে জেলায় তিনটি ফসল বোরো, আউস ও আমন মিলে ছয় লাখ ২৩ হাজার ১৩০ মেট্রিক টন খাদ্য উৎপাদন হবে।

এর মধ্যে জেলার সাত উপজেলায় সরকারিভাবে বোরো ধান সংগ্রহের প্রস্তুতি চলছে। মৌলভীবাজার সদর উপজেলায় কৃষকদের মোবাইল অ্যাপের মাধ্যমে আবেদন নেওয়া হচ্ছে। পরে তা লটারি করা হবে। অপরদিকে ছয়টি উপজেলা রাজনগর, কুলাউড়া, জুড়ী, বড়লেখা, কমলগঞ্জ ও শ্রীমঙ্গলে মাঠপর্যায়ে কৃষকদের তালিকা তৈরি করা হয়েছে। এগুলো যাছাইবাছাই শেষে লটারি করা হবে।

মৌলভীবাজার সদর উপজেলা থেকে কৃষক পর্যায়ে সরকারিভাবে এক হাজার ২০৫ মেট্রিক টন, রাজনগর উপজেলায় এক হাজার ৬৭৪ মেট্রিক টন, কুলাউড়ায় ৮৪৭ মেট্রিক টন, জুড়ীতে ৬৮২ মেট্রিক টন, বড়লেখায় ৫৫৭ মেট্রিক টন, কমলগঞ্জে ৫০৫ মেট্রিক টন ও শ্রীমঙ্গলে এক হাজার ১৪৮ মেট্রিক টন ধান সংগ্রহ করা হবে। স্থানীয় কৃষকরা দাবি করছেন, তাঁরা যাতে ধানের ন্যায্য মূল্য পান। পাশাপাশি আধুনিক কৃষি যন্ত্রপাতি ও উন্নত জাতের বীজ সংগ্রহসহ কীটনাশকের মূল্যসহ কৃষিঋণ সহজ শর্তে নামমাত্র সুদে পাওয়ার দাবি করেন।

কৃষকদের চাওয়া পাওয়া খুবই সামান্য। দেশে দূর্নীতির মহোৎসবে হাজার হাজার কোটি টাকা লুটপাত এখন ডালভাত হয়ে গেছে। তবে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর প্রচণ্ড সাহস দেখে দেশবাসীও আশার আলো দেখে। দেশের সার্বিক পরিস্থিতিতে প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ ছাড়া কিছুই সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন হয় না। এক্ষেত্রে করোনা পরিস্থিতির মোকাবেলার পাশাপাশি অনাগত দুর্ভিক্ষ মোকাবেলায়ও মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর দূরদৃষ্টিসম্পন্ন পদক্ষেপ একান্তভাবে কাম্য।

[সায়েক আহমদ, প্রাবন্ধিক, কলাম লেখক, শিশু সাহিত্যিক]

সংবাদটি শেয়ার করতে নিচের “আপনার প্রিয় শেয়ার বাটনটিতে ক্লিক করুন”

মন্তব্য করুন

Social Media Auto Publish Powered By : XYZScripts.com