কাগজে-কলমে মেডিক্যাল টিম বড়লেখায় বিভিন্ন পরীক্ষা কেন্দ্রে তাৎক্ষণিক পাওয়া যায় না চিকিৎসক আইনশৃঙ্খলা কমিটির সভায় ক্ষোভ ও অসন্তোষ প্রকাশ
আব্দুর রব॥ বড়লেখায় এসএসসি ও দাখিল পরীক্ষার প্রায় ৩৪০৮ জন পরীক্ষার্থীর পরীক্ষা চলাকালীন সময়ের জন্য চিকিৎসা সেবায় গঠিত ৪টি মেডিক্যাল টিমের কার্যক্রম শুধু কাগজে-কলমেই সীমাবদ্ধ। হঠাৎ কেন্দ্রে অসুস্থ্য হয়ে পড়া পরীক্ষার্থীর জন্য জরুরী চিকিৎসাসেবা নিতে গিয়ে তাৎক্ষণিক পরীক্ষা কেন্দ্রে পাওয়া যাচ্ছে না চিকিৎসক। এমন অভিযোগ সংশ্লিষ্ট কয়েকটি পরীক্ষা কেন্দ্রের সচিব ও শিক্ষার্থীর অভিভাবকদের।
১৩ ফেব্রুয়ারি সোমবার সকালে দাসেরবাজার উচ্চ বিদ্যালয়ের এসএসসি পরীক্ষা কেন্দ্রের পাঁচজন পরীক্ষার্থী সড়ক দুর্ঘটনায় গুরুতর আহত হলে তাদের চিকিৎসা দেওয়ার জন্য তাৎক্ষণিক মেডিক্যাল টিমের কাউকে কেন্দ্র পাওয়া যায়নি। এ নিয়ে অনেকেই ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।
তাৎক্ষণিক চিকিৎসক না পাওয়ার বিষয়টি নিয়ে এদিন সকালে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত মাসিক আইনশৃঙ্খলা কমিটির সভার পূর্বে অনির্ধারিত আলোচনায় উপজেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি ডা. প্রণয় কুমার দে, সাধারণ আনোয়ার উদ্দিন, সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুল লতিফ হাসপাতালের চিকিৎসা সেবার মান ও চিকিৎসকদের গাফিলতির বিষয় নিয়ে তীব্র প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন।
কেন্দ্র সচিব, পরীক্ষার্থীদের অভিভাবকদের সাথে কথা বলে জানা গেছে,
১৩ ফেব্রুয়ারি সোমবার সকাল সাড়ে ৯টার দিকে উপজেলার ফকিরবাজার এলাকায় সিএনজি চালিত অটোরিকশা উল্টে দাসেরবাজার উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রের ধর্মীয় শিক্ষা বিষয়ের ৫জন পরীক্ষার্থী আহত হন। আহত অবস্থায় শিক্ষার্থীদের অভিভাবক ও এলাকার লোকজন তাদের পরীক্ষা কেন্দ্রে নিয়ে আসলে তাৎক্ষণিক প্রাথমিক চিকিৎসা দেয়ার জন্য পরীক্ষা কেন্দ্রের নির্ধারিত মেডিক্যাল টিমের সদস্য চিকিৎসক ডা. ফেরদৌস আক্তার ও উপ-সহকারী কমিউনিটি মেডিক্যাল অফিসার আশীষ কুমার সরকারকে পাওয়া যায়নি।
তখন কেন্দ্র সচিব দিপক চন্দ্র দাস চিকিৎসকের জন্য মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তাকে বিষয়টি জানান। মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা চিকিৎসকদের সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করেন এবং বিষয়টি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এসএম আব্দুল্লাহ আল মামুনকে অবহিত করেন। তিনি কর্তব্যরত চিকিৎসককে ফোন করে কর্মস্থলে পাননি। প্রায় আধঘন্টা অপেক্ষা করে মেডিক্যাল টিমের চিকিৎসক না পেয়ে ৩জন শিক্ষার্থীকে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে গুরুতর আহত অপর দুই শিক্ষার্থীকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে পাঠানো হয়।
একই অবস্থা উপজেলার অন্যান্য পরীক্ষা কেন্দ্রে। পরীক্ষার্থীরা অসুস্থ্য হলে তাৎক্ষণিক চিকিৎসা সেবায় গঠিত মেডিক্যাল টিমের কোন সদস্যকে পাওয়া যাচ্ছে না কেন্দ্রে। সরেজমিন কয়য়েকটি কেন্দ্র ঘুরে ও কেন্দ্র সচিবদের সাথে কথা বলে এ রকম তথ্য পাওয়া গেছে।
দাসেরবাজার উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রের সচিব দিপক চন্দ্র দাস বলেন, ‘আহত অবস্থায় শিক্ষার্থীদের অভিভাবক ও এলাকার লোকজন পরীক্ষা কেন্দ্রে নিয়ে আসলে তাৎক্ষণিক প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়ার জন্য পরীক্ষা কেন্দ্রের নির্ধারিত মেডিক্যাল টিমের চিকিৎসকদের পাওয়া যায়নি। আমি তখন উপ-সহকারী কমিউনিটি মেডিক্যাল অফিসার আশীষ কুমার সরকারের সাথে যোগাযোগ করি। আমার কেন্দ্রে যে তার ডিউটি রয়েছে তিনি তা জানেন না। তবে এর প্রায় ঘন্টাখানেক পরে তিনি কেন্দ্রে আসেন। প্রতিদিন শিক্ষার্থীরা অসুস্থ্য হচ্ছেন। তাৎক্ষণিক নির্ধারিত চিকিৎসক না পাওয়ায় স্থানীয় বাজারের পল্লী চিকিৎসকের দারস্থ হচ্ছি।’
এ ব্যাপারে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা: আহম্মদ হোসেন জানান, ‘হাসপাতালে এমনিতেই জনবল সংকট। তার মধ্যে মেডিক্যাল টিমে ৮জন চিকিৎসক দেয়ায় তাদেরকে এক সাথে হাসপাতালেও ডিউটি করতে হচ্ছে। তবে কোন চিকিৎসকের অবহেলার প্রমাণ পাওয়া গেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা সমীর কান্তি দেব জানান, জরুরী সময় মেডিক্যাল টিমের চিকিৎসকদের কেন্দ্রে পাওয়া যাচ্ছে না। এ বিষয়টি আমি ইউএনও’কে জানিয়েছি।
ইউএনও ও পরীক্ষা কমিটির সভাপতি এসএম আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, ‘পরীক্ষা চলাকালীন পরীক্ষার্থীদের চিকিৎসা সেবায় ৪টি মেডিক্যাল টিম গঠন করে দেয়া হয়েছে। কিন্তু তাদের কেন্দ্রে তাৎক্ষণিক না পাওয়ার অভিযোগ আসছে।’
মন্তব্য করুন