কালবৈশাখী ঝড়ে বোরো ফসলের ব্যাপক ক্ষতির আশংখ্যা
স্টাফ রিপোর্টার॥ দেশের বৃহত্তম হাওর হাকালুকি ও কাউদিঘি হাওরসহ অন্যান্য হাওরে এবছর বোরো ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে। এরই মধ্যে গেল দু’দিনের ঝড়-তোফানে এসব সোনালী ধানের শীষের উপর দিয়ে তান্ডব চালিয়ে গেল কাল বৈশাখী ঝড়। কৃষকেরা মনে করছেন লাগাতার আরো দু-একদিন এভাবে ঝড়ো হাওয়া বইতে থাকলে উঠতি বোরো ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হতে পারে। কাউয়াদিঘি হাওরে এখনো ৫০ শতাংশ ধানের শীষে সবেমাত্র ফুল দিতে শুরু করেছে। ঝড়ো বাতাসের গতিবেগে এসব ফুল আচড়ে গিয়ে শীষ থেকে ছিটকে পড়ছে।
কাউয়াদিঘি হাওর পাড়ের কৃষকেরা জানিয়েছেন বৃহস্পতি ও শুক্রবারের শিলা বৃষ্টি আর বাতাসের গতিবেগে ধানের শীষ হেলে গিয়ে সদ্য ফুটা ধানের ফুলগুলী আচড়ে পড়ছে। এভাবে ছিটকে পড়তে থাকলে ৫০ শতাংশ ধান নষ্ট হয়ে যাবে।
রাজনগর উপজেলার উত্তরভাগ ইউনিয়নের উমরপুর গ্রামের বশর মিয়া ও কান্দিগাঁও গ্রামের আব্দুল করিম জাকির জানান, হাওরে ৫০ শতাংশ ধান নিজের রূপ নিয়ে ফুটে উঠেছে। বাকি ৫০ শতাংশ ধানের শীষে ফুল ফুটে সবেমাত্র পরিপূর্ণ ধানে বেড়ে উঠতে চাইছে। ঝড়-বাদলা বন্ধ না হলে ৫০ ভাগ ফসল নষ্ট হবে।
এদিকে পানি উন্নয়ন বোর্ড জানিয়েছে, মনুনদী সেচ প্রকল্প’র অধিনে মৌলভীবাজার সদর ও রাজনগর উপজেলার কাউয়াদিঘি হাওরের ১৯ হাজার ২শ ২৮ হেক্টর চাষযোগ্য জমির বন্যা নিয়ন্ত্রন,নিষ্কাশন ও সেচ ব্যবস্থা প্রদান করার লক্ষে নিয়ে কাশিমপুরে দ্বিতীয় বারের মত স্থাপন করা হচ্ছে নতুন পাম্প মেশিন। পাউবো প্রকৌশলীরা বলছেন, ৭৮ কোটি টাকা ব্যয়ে ৮টি মেশিনের মধ্যে ৩টি মেশিন বসানোর কাজ চলছে। মেশিনগুলো স্থাপন করা হলে প্রকল্পের আওতায় সকল কৃষকেরা নির্ভিগ্নে কৃষি ক্ষেত করতে পারবে। বন্যা,কিংবা বৃষ্টির পানি হাওরে লেগে থাকলেও নতুন সংযোগের কারনে সহজে সেচ করে কুশিয়ারা নদীতে পানি নিষ্কাশন করা সম্ভব হবে।
এদিকে কাউদিঘি হাওর পাড়ের কৃষকেরা কৃষি ক্ষেত পানিতে তলিয়ে যাবে এমন আশংখ্যা করছেন।
রাজনগর উপজেলার ফতেপুর ইউনিয়ন আ’লীগের সভাপতি ও পশ্চিম বেড়কুড়ি (মোল্লাবাড়ি) গ্রামের হাজি মোঃ ইসমাইল আলী পানি উন্নয়ন বোর্ডের গতানুগতিক পাম্প বসানো দেখে বলেন, এরকম কাজে এলাকার কোন ফায়দা (লাভ) হবেনা। ওই টাকা গুলো (৭৮ কোটি টাকা মূল্যের কাজের) টকিয়া (লুট করে) খেয়ে ফেলবে কোম্পানী। এতে পানি নিস্কাসন হবেনা। পানি যদি বৈশাখ মাসে কুশিয়ারা নদীতে না নামে তবে জনগণের কোন উপকার হবেনা। তারা (সংশ্লিষ্ট পানি উন্নয়ন বোর্ড) এর আগেও সময় মত পানি সেচ করেনি। নানা অজুহাত দেখিয়ে বলেছে “কারেন্ট নাই,এই নাই,সেই নাই”। তিনি আরো বলেন, লাগাতার বন্যার কারণে ৩ বছর ধরে কাউয়াদিঘি হাওরে তার ৯০ কিয়ার জমি থেকে ধান তুলতে পারেন নাই। কাউয়াদিঘি হাওর পাড়ের ফতেপুর ইউনিয়নের শাহাপুর গ্রামের জাকির হোসেন জানান, তারা যদি নতুন মেশিন দিয়ে চৈত্র মাস থেকে সেচ করে পানি নিস্কাসন করে তবে ধান গোলায় তোলা যাবে। পুরো হাওরে পানি জমা করে এক সাথে সেচ করতে চাইলে নিস্কাসন করতে পারবেনা।
মন্তব্য করুন