কালেঙ্গায় রিকশা শ্রমিক ইউনিয়নের সভা নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্যের ঊর্দ্ধগতি রোধ ও রেশনিং চালুর দাবি
স্টাফ রিপোর্টার॥ মৌলভীবাজার জেলা রিকশা শ্রমিক ইউনিয়নের উদ্যোগে কালেঙ্গায় আঞ্চলিক শাখার নেতৃবৃন্দকে নিয়ে এক সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। ৭ মে মঙ্গলবার রাত ৮ টার সময় শহরতলীর কালেঙ্গাবাজারে এ সভা অনুষ্ঠিত হয়।
জেলা রিকশা শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি মোঃ সোহেল মিয়ার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জাতীয় গণতান্ত্রিক ফ্রন্ট-এনডিএফ মৌলভীবাজার জেলা কমিটির সভাপতি ডা. আব্দুশ শহীদ সাগ্নিক ও বাংলাদেশ ট্রেড ইউনিয়ন সংঘ মৌলভীবাজার জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক রজত বিশ্বাস। জেলা রিকশা শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক মোঃ দুলাল মিয়ার পরিচালনায় অনুষ্টিত সভায় বক্তব্য রাখেন কালেঙ্গা আঞ্চলিক কমিটির সভাপতি মোঃ গিয়াস মিয়া, সাধারণ সম্পাদক আব্দুল হান্নান খোকন, যুগ্ম-সম্পাদক মাহমুদ মিয়া, কালেঙ্গা আঞ্চলিক কমিটির সাবেক সভাপতি মোঃ শাহজাহান মিয়া, রিকশা শ্রমিকনেতা ইদ্রিস মিয়া, জেলা কমিটির নেতা জাকির হোসেন। এছাড়াও সভায় উপস্থিত ছিলেন জেলা কমিটির সহ-সভাপতি মোঃ জসিমউদ্দিন আহমেদ, সহ-সাধারণ সম্পাদক মোঃ জসিমউদ্দিন, প্রচার সম্পাদক সেবক মিয়া।
সভায় বক্তারা বলেন গ্রাম্য জোতদার মহাজনের শোষণে জমি-জমা হারিয়ে শহরে এসে রিকশা-ঠেলা-ভ্যান শ্রমিকরা প্রতিদিন গভীর রাত পর্যন্ত প্রখর রোদ ও ঝড়বৃষ্টির মধ্যে অমানুষিক পরিশ্রম করে দুঃখ কষ্টের জীবন জীবিকা নির্বাহ করেছেন। বর্তমানে চাল, আটা, ডাল, তেল, লবন, চিনিসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের মূল্যের লাগামহীন অব্যাহত ঊর্ধ্বগতির বাজারে রিকশা-ভ্যান শ্রমিকদের বেঁেচ থাকা দায় হয়ে পড়েছে। নিতান্ত বাধ্য হয়ে জীবন ও জীবিকা রক্ষার্থে শহরের নিম্ন আয়ের লোকজন এবং রিকশা চালকরা ব্যাটারি চালিত রিকশা কিনে জীবন সংগ্রাম চালিয়ে যাচ্ছেন। এই সকল রিকশার অধিকাংশের মালিকই হচ্ছেন রিকশা চালক নিজে, যারা এনজিও ও মহাজনের নিকট হতে উচ্চ সুদে ঋণ করে অথবা নিজের শেষ সহায়-সম্বলটুকু বিক্রি করে ব্যাটারি চালিত রিকশা কিনে জীবন সংগ্রাম চালাচ্ছেন। মানুষ হয়ে মানুষকে টেনে নেওয়ার বদলে ব্যাটারি চালিত এই রিকশায় শ্রমিকরা যেমন তুলনামূলক সহজে কম পরিশ্রমে যাত্রী পরিবহণ করতে পারছেন তেমনি স্বল্প খরচে আমরাদায়ক পরিবহণ হিসেবে অল্প সময়ের মধ্যে যাত্রী সাধারণের কাছে এই সকল রিকশা অত্যন্ত জনপ্রিয় হয়ে উঠে। যার কারণে বর্তমানে দেশের অনেক জেলায়, এমন কি মৌলভীবাজার জেলার অনেক উপজেলাতেও পা-চালিত রিকশা প্রায় উঠেই গেছে। অথচ প্রায়শঃ মৌলভীবাজার শহরে ব্যাটারি চালিত রিকশা-ভ্যান উচ্ছেদ তৎপরতা চালানো হয়, যার কারণে শ্রমিকদের আরও দুর্বিষহ পরিস্থিতির মধ্যে পড়তে হয়। অথচ মাননীয় বিদ্যুত মন্ত্রী ব্যাটারি চালিত রিকশাকে ‘বাংলার টেসলা’ বলে আখ্যায়িত করেছেন এবং ব্যাটারি চালিত রিকশা উচ্ছেদের কোন পরিকল্পনা নেই বলে জানিয়েছেন।
নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের লাগামহীন ঊর্দ্ধগতিতে ক্ষোভ প্রকাশ করে বক্তারা বলেন জীবনযাত্রার প্রতিটি ক্ষেত্রেই লাগামহীন মূল্য বৃদ্ধি ঘটলেও শ্রমিক-কৃষক-জনগণের আয় বাড়েনি। সরকার মুখে উন্নয়নের কথা বললেও দেশের ব্যাংকিং খাতসহ অর্থনীতিতে সংকট ঘনীভূত হওয়ার কথা নানাভাবে আলোচিত হচ্ছে। সাম্রাজ্যবাদী সংস্থা আইএমএফের ঋণচুক্তির শর্ত পুরণে সরকার গ্যাস-বিদ্যুত-জ্বালানিসহ বিভিন্ন খাত থেকে ভর্তুকি প্রত্যাহার করে দফায় দফায় মূল্য বৃদ্ধি করে জনজীবনকে আরও কঠিন পরিস্থিতিতে ফেলে দিচ্ছে। এই ধারাবাহিকতায় সাধারণ মানুষের পরিবহণ রেলের ভাড়াও ২০-৩০ শতাংশ বৃদ্ধি এবং জ্বালানিতেলের মূল্য সমন্বয়ের নামে দাম বাড়ানো হয়েছে। বক্তারা বলেন আমাদের দেশের শ্রমিক-কৃষক-জনগণের দুঃখ-দুর্দশা, সমস্যা-সংকটের জন্য দায়ী হচ্ছে প্রচলিত বিদ্যমান বৈষম্যমূলক নয়াউপনিবেশিক-আধাসামন্তবাদী আর্থসামাজিক ব্যবস্থা। জনগণের তিন শত্রু সাম্রাজ্যবাদ, সামন্তবাদ ও আমলা-মুৎসুদ্দি পুঁজিকে উচ্ছেদ ব্যতিত জনগণের সমস্যার সমাধান নেই। অথচ এই সত্যকে আড়াল ও অস্বীকার করে সাম্রাজ্যবাদ ও তার দালাল শাসক-শোষক গোষ্ঠী এবং তাদের লেজুড় শ্রমিক সংগঠনগুলো বিভক্তি বৃদ্ধি করে জনগণের ঐক্যকে ক্ষতিগ্রস্ত করছে। এর বিরুদ্ধে শ্রমিক-কৃষক-জনগণকে ঐক্যবদ্ধভাবে দাঁড়িয়ে অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা, চিকিৎসা তথা মৌলিক অধিকার নিশ্চিত করার লক্ষ্যে শ্রমিক-কৃষক-জনগণের বাসপোযোগী সমাজ প্রতিষ্ঠার আন্দোলন-সংগ্রামের পথে অগ্রসর হওয়ার জন্য আহবান জানানো হয়।
সভা থেকে ব্যাটারি/মোটর চালিত রিকশা-ভ্যান-ইজিবাইক উচ্ছেদ বন্ধ, রিকশা শ্রমিকদের স্থায়ী স্ট্যান্ড, বর্তমান বাজারদরের সাথে সংগতিপূর্ণ ন্যায্য ভাড়ার তালিকা প্রদান, নিত্যপণ্যের উদ্ধগতি রোধ, দফায় দফায় গ্যাস-বিদ্যুতের মূল্য বৃদ্ধির পাঁয়তারা বন্ধ করা, রেলের বর্ধিত ভাড়া প্রত্যাহারসহ পূর্ণাঙ্গ সার্বজনীন রেশনিং ব্যবস্থা চালু, অত্যাবশকীয় পরিষেবা বিল বাতিল, গণতান্ত্রিক শ্রমআইন প্রণয়ন, অবাধ ট্রেড ইউনিয়ন অধিকার প্রতিষ্ঠার দাবি জানান।
সভায় রিকশা শ্রমিক ইউনিয়ন কালেঙ্গা আঞ্চলিক কমিটির সম্মেলন সফল করার লক্ষ্যে মোঃ গিয়াস মিয়াকে আহবায়ক এবং মোঃ শাহজাহান মিয়া ও জাকির হোসেনকে যুগ্ম-আহবায়ক করে ৯ সদস্য বিশিষ্ট সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটি গঠন করা হয়।
মন্তব্য করুন