কি চমৎকার দেখা গেল : কোদালি ছড়ার জল ভূবন চিলের চঙ্গঁল
মুজিবুর রহমান মুজিব॥ সৃষ্টির শ্রেষ্ঠ জীব- মানুষের শিক্ষা ও জ্ঞান, মেধা ও মনন, প্রজ্ঞা ও পান্ডিত্যে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির অগ্রগতি, প্রগতি ও নব নব আবিষ্কার এর ফলে আমাদের কালের-বায়স্কোপ হারিয়ে গেছে। তথ্য প্রযুক্তির হালনাগাদ অগ্রগতিতে সিনেমা পর্য্যন্ত হারিয়ে যাচ্ছে। সেই পঞ্চাশ এর দশকে গ্রামীন মেলায় খেলায় টিনের গোলাকৃতির বাক্স দিয়ে বায়স্কোপ দেখাে নার প্রচলন ছিল। কথক পরিচালক ঘন্টা জাতীয় বাজনা বাজিয়ে নির্বাক ছবির বর্ণনা দিতেন-বয়ান করতেন। মাঝে মাঝেই কি চমৎকার দেখা গেল-বলে দর্শক শ্রেুাতার দৃষ্টি আকর্ষণ করতেন। গ্রামের অবুঝ কিশোর কিশোরী-ই-ছিলেন বায়স্কোপ-এর মূল দর্শক। সে সময় গ্রাম বাংলাই নয় শহরেও বায়স্কোপ এর দারুণ জনপ্রিয়তা ছিল। চমৎকার দৃশ্য দেখলে, ভালো কথা শুনলে মানুষের মনে ভাব ও আবেগ সহ একটি সুখানুভূতির অনুভব হয়। আমার শুভানুধ্যায়ীদের দাবী এই কঠিন ও বৈরী সময়ের মাঝে ও যেনো আশা ভাষা ও আনন্দের কথা, ফুলের সৌরভ-পাখির কলরব এর কথা বলি। আনন্দও আশা জাগানিয়া জীবন চিত্র আঁকি।
বিশ্বব্যাপী বর্তমানে জঙ্গীঁ ও সন্ত্রাসী হামলায় জাতি সংঘের অস্থিত্বের উপরই হামলা। অতি সম্প্রতি শ্রীলংকার লংকা কান্ড মানব সভ্যতার অগ্রাভিযানের ইতিহাসে কলংকময় অধ্যায়।
দেশেও চলছে নৈরাজ্য ও নৈরাশ্য। মূল্যবোধের অবক্ষয়, নৈতিকতার ক্রমোবনতি, ধর্ষকদের উদ্ভিন্য উল্লাস ও ভ্রষ্টাচার এর জোয়ারে মনুষ্যত্ব ও মানবতা বর্তমানে দিশাহারা। তবুও জীবন থেমে নেই। এত সব অনাচার এর মাঝেও কিছু মানুষের মানবিক কার্য্যক্রম, জীবন বিকাশ ও গতিশীল গণমূখী জীবন চর্চা, শত নিরাশার মাঝে প্রেরণা যুগায়, পথ দেখায়।
তাই গনদাবীর প্রেক্ষিতে আমাদের প্রাত্যহিক দৈনন্দিন আট পৌরে জীবনের কথা আশা আকাংখা আনন্দ বেদনা হাসি কান্নার কথাও কাহিনী-কি চমৎকার-শিরোনামে তুলে ধরব।
শতাব্দীর গৌরবময় অতীত ঐতিহ্যে লালিত পীরে কামেল সৈয়দ শাহ মোস্তফার স্মৃতি বিজড়িত পূন্যভূমি অষ্টাদশ শতাব্দীর কৃতি পূরুষ সৈয়দ কুদরত উল্লাহর এই মৌলভীবাজার। মৌলভীবাজার পৌরসভাও একটি প্রাচীন জনপদ। টাউন কমিটি থেকে আজকের এই পৌরসভা। স্বাধীনতা উত্তরকালে জনগনের সরাসরি প্রত্যক্ষ ভোটে নির্বাচিত চেয়ারম্যান/মেয়র হিসাবে কাজ করেছেন সর্ব জনাব সজ্জাদুর রহমান পুতুল, সৈয়দ মহসীন আলী, মাহমুদুর রহমান এবং ফয়জুল করিম ময়ূন। সর্বশেষ ফয়জুল করিম ময়ূন ছাড়া বাকী সব পরলোকে। মহান মালিক তাদের বেহেশ্ত নসীব করুন।
বর্তমান মেয়র আলহাজ্ব মোঃ ফজলুর রহমান সকলের চাইতে সর্ব কনিষ্ট। নির্বাচিত হয়েই তিনি ঘুষ, দূর্নীতি, স্বজন প্রীতির বিরুদ্ধে জিহাদ ঘোষনা করে ইতিমধ্যেই দখল উচ্ছেদাভিযান, সড়ক-রাস্তা ঘাটের অব কাঠামোগত উন্নয়নে মান সম্মত কাজ উপহার দিয়ে পৌরবাসির প্রশংসা কুুড়িয়েছেন। তার দু’টি মানবিক ও আন্তরিক কাজ দলমত নির্বিশেষে সকলর মুখে মুখে। এর একটি পৌরসভার সম্মুখস্থ বিশাল ফুচকা বাজারকে উচ্ছেদ করে একটি আধুনিক পার্কে রূপান্তর এবং আরেকটি পৌর জনমিলন কেন্দ্র এলাকার বিশাল পরিত্যক্ত ভূমিতে ষাটোর্ধ্ব বয়োঃবৃদ্ধদের জন্য বিদেশী কায়দায়-ওন্ডকেয়ার-নির্মাণ। দু’টি প্রজেক্ট-কে স্বাগত ও সাধুবাদ জানিয়ে কলাম লিখে প্রশংশিত হয়েছি, অবশ্য কেহ কেহ বিভিন্ন কারনে নারাজ হয়েছেন।
পৌরসভার উদ্যোগে পৌর মেয়র আলহাজ্ব মোঃ ফজলুর রহমানের নেতৃত্ব সৈয়দ শাহ মোস্তফা টাউন ঈদগাহর সম্প্রসারন ও সংস্কার কাজ চলছে। ইতিপূর্বে কতেক ভূমি দাতা কোটি টাকার সম্পত্তি আল্লাহর রাহে বিনামূল্যে দান করে ভূয়শী প্রশংসিত হয়েছেন। পৌর মেয়র ঈদগাহ নির্মাণ সম্প্রসারনে আর্থীক ও সার্বিক সহযোগিতা চেয়েছেন। পৌর মেয়র মোঃ ফজলুর রহমান এখন পর্য্যন্ত তার কথাও কাজে মিল রেখেছেন। নির্বাচিত হয় আল্লাহ রাসুল ও পিতা-মাতার নামে কসম খেয়ে বলেছেন পৌরসভার উন্নয়ন কাজের কোন কমিশন খাবেন না। কাউকে ঘুষ দূনীতি খেতে করতে দেবেন না। দ্বিতীয়ত দলগত ভাবে তিনি একজন নির্ভীক মুজিব সৈনিক। তার ভাষায় কট্রর আওয়ামী লীগার, কিন্তু মেয়র হিসাবে তিনি সকলের, পৌরসভাকে দলীয় করণ করেন নি। আশা করা যায় তিনি তা পূর্ণ মেয়াদ পর্য্যন্তই রাখবেন। পৌর মেয়র ঈদগাহ নিমার্ণে আর্থীক সাহায্য চেয়েছেন। ঈদগাহ ধর্মীয় ঐতিহ্য, আভিজাত্য, শিল্প ও সৌন্দর্য্যের প্রতীক। সিলেটের শাহী ঈদগাহ বিশাল এলাকা জুড়ে দৃষ্টি নন্দন স্থাপনা সহ মাথা উচু করে ইতিহাস-ঐতিহ্যের প্রতীক হয়ে দাড়িয়ে আছে। এ জেলায় হৃদয়বান বিত্তবানদের অর্থায়নে দরগা মসজিদ ও জেলা জামে মসজিদ ইতিমধ্যে নির্মিত হয়েছে। আশা করা যায় টাউন ঈদগাহ নির্মানেও ধনী দারিদ্র নির্বিশেষে সকলে এগিয়ে আসবেন। আসছেনও।
মনু নদীর তীরে অবস্থি প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্যরে অপরূপ লীলা ভূমি মৌলভীবাজার শহর এর বুক দিয়ে বয়ে গেছে-কোদালি ছড়া নামক খালটি।
বৃষ্টি ও ফাটা বিলের পানি কোদালীছড়া দিয়েই মোস্তফাপুর ইউনিয়ন হয়ে হাইলহাওরে গিয়ে পড়ে। এককালে কোদালিছড়ায় নৌকা চলত, জাল ও বর্শি দিয়ে মাছ শিকারি গন মাছ ধরতেন। কালক্রমে দখল-দূষনে ভরাট ও আয়তনে ক্ষুদ্র হয়ে যায় কোদালী ছড়া। ফলতঃ শহরের পূর্বাঞ্চলে জলাবদ্ধতা লেগেই থাকত। কোদালিছড়ার সংস্কার, খোদাই, উন্নয়নে ইতিপূর্বে পৌরবাসি কত প্রজেক্টও মাদারীর খেল, ভেল্কি বাজি দেখলেন। নামকাওয়াস্ত কিছু ঘাস ছাপ-হলেও কোদালি ছড়ায় কয়েক কোদাল মাটি কাটা হয় নি।
পৌর মেয়র মোঃ ফজলুর রহমান কোদালি ছড়ার উন্নয়নে বলিষ্ট পদক্ষেপ নিয়ে উন্নত মেশিনারী এনে কাজ শেষ করলেন। মিডিয়াকেও দেখালেন প্রসঙ্গঁত উল্লেখ্য: কোদালি ছড়া পাড়েই প্রেস ক্লাবের অবস্থান। এখন কোদালি ছড়া একটি ছোট নদী। আছে নৌকাও আছে পানি সঙ্গেঁ মাছও। আমার পৈত্রিক বাসগৃহ মুসলিম কোয়াটার থেকে কোদালি ছড়া কাছেই। তাছাড়া কোর্টে আসাযাওয়ার কারনে, প্রেসক্লাবে কোন সভা সমাবেশে গেলে কোদালি ছড়াকে দেখি। কত গমই খেল এই মাইলেনেউরি-কোদালি ছড়া। হাওর পাড়ের মানুষ আমি। বাল্য কৈশোরে হাওরের মাছ আর পাক পাখালির ওড়াওড়ি জলকেলি দেখে দেখে বেড়ে উঠেছি-বড় হয়েছি। আমার কাছে এমন দৃশ্য মনোমুগ্ধ কর। সেদিন দেখলাম সাদা বুকের একটি লাল ভূবন চিল কোদালি ছড়ায় ছোঁ-মেরে চঙ্গঁল দিয়ে মাছ ধরল। মাছ শিকারে ঈগল ও চিলের টার্গেট মিস হয় না এদের তীঘœ দৃষ্টি। এরা ক্ষিপ্র গতি সম্পন্ন।
কোদালি ছড়ায় মাছ ধরে মনের সুখে ওড়ে গেল শিকারি ভূবন চিল। আমি আপন মনেই বলি-কি চমৎকার দেখা গেল।
[কলামিষ্ট। মুক্তিযোদ্ধা। সিনিয়র এডভোকেট হাই কোর্ট। সাবেক সভাপতি মৌলভীবাজার প্রেসক্লাব]
মন্তব্য করুন