‘কীটনাশকে সয়লাব সবজি : ঝুঁকির মুখে মানবস্বাস্থ্য’ বিষয়ক কমলগঞ্জে পরিবেশ সাংবাদিক ফোরামের মতবিনিময় সভা
কমলগঞ্জ প্রতিনিধি॥ জীবন ধারনের জন্য বিশুদ্ধ ও পুষ্টিকর খাবার সু-স্বাস্থ্যের জন্য প্রয়োজন হলেও বর্তমানে ভেজাল খাদ্য পণ্যের পাশাপাশি শাক-সবজিতেও মরনব্যাধি কীটনাশক ব্যবহারের মাত্রা ছাড়িয়ে গেছে। ক্ষেতের শাক সবজিতে ঘন ঘন কীটনাশক ব্যবহার আমাদের মানবস্বাস্থ্যকে অনাগত ঝুঁকির মুখে ঠেলে দিচ্ছে। বাংলাদেশ পরিবেশ সাংবাদিক ফোরাম মৌলভীবাজার জেলা শাখার উদ্যোগে ‘কীটনাশকে সয়লাব সবজি : ঝুঁকির মুখে মানবস্বাস্থ্য’ বিষয়ক মতবিনিময় সভায় আলোচকরা এসব কথা বলেন।
৬ মার্চ সোমবার বিকাল তিনটা থেকে সন্ধ্যা ছয়টা পর্যন্ত চলা উপজেলা পরিষদ সম্মেলন কক্ষে মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়। বাংলাদেশ পরিবেশ সাংবাদিক ফোরাম মৌলভীবাজার জেলা শাখার সভাপতি সৈয়দ মহসিন পারভেজ এর সভাপতিত্বে ও সাধারন সম্পাদক নূরুল মোহাইমীন মিল্টন এর সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন কমলগঞ্জ উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান অধ্যাপক রফিকুর রহমান। বিশেষ অতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন কমলগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ মাহমুদুল হক। আলোচক হিসাবে উপস্থিত ছিলেন বন্যপ্রাণি ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের বিভাগীয় সহকারী বন কর্মকর্তা মো. তবিবুর রহমান, কমলগঞ্জ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. শামসুদ্দীন আহমদ, উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. শাহদাত হোসেন, লেখক-সাংবাদিক আকমল হোসেন, ইউপি চেয়ারম্যান আব্দাল হোসেন, আহমদ সিরাজ, এড. রাধাপদ দেব সজল, মুজিবুর রহমান, আব্দুল হান্নান, সালেহ এলাহী(কুটি)। অনুষ্ঠানের শুরুতে প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন মৌলভীবাজার পরিবেশ সাংবাদিক ফোরামের সাধারন সম্পাদক নূরুল মোহাইমীন মিল্টন। বিষয়ের উপর অন্যান্যের মধ্যে আলোচনা করেন কৃষক ও ঈমাম মোবাশ্বির আলী, শাহাজাহন আলী, আসাফুজ্জামান শাওন, সীতারাম বীন,বিশিষ্ট সমাজসেবক সাবেক ছাত্রনেতা মোঃ খালেদ মাহমুদ, সুব্রত দেব রায়, এম এ ওয়াহিদ (রুলু), সানোয়ার হোসেন, শাহিন আহমদ প্রমুখ।
আলোচকরা বলেন, কৃষি অধ্যুষিত কমলগঞ্জ তথা মৌলভীবাজার জেলা। বিভিন্ন মৌসুমে এখানকার উর্বর মাটিতে সোনালী ফসল, শাকসবজি, ফলমূলে ভরপুর হয়ে উঠে। ইতিপূর্বে দেশীয় প্রজাতির বীজ দিয়েও জৈব সার ব্যবহার করে কৃষকরা ফলমূল, সবজি উৎপাদন করেছেন। সময়ের পরিক্রমায় আধুনিক তথ্য প্রযুক্তির যুগে অধিকাংশ ক্ষেত্রে বিদেশী প্রজাতির হাইব্রীড জাতীয় বীজের ব্যবহার সর্বত্র ছড়িয়ে পড়ছে। ফলে সোনালী ফসল, ফলমূল ও শাকসবজি উৎপাদনে রাসায়নিক সার ও কীটনাশক নির্ভরশীল হয়ে উঠছে। বিষাক্ত কীটনাশকের মাত্রাতিরিক্ত ব্যবহার আমাদের মানবস্বাস্থ্যকে মারাত্মক ঝুঁকির মুখে ঠেলে দিয়েছে। ফলে বৃদ্ধি পাচ্ছে জটিল থেকে জটিলতর রোগব্যাধি। শাক সবজির ক্ষেত্রে টমেটো, বেগুন, বরবটি, শিম, ফুলকপি, লালশাক সহ বিভিন্ন ধরনের সবজি কীটনাশক নির্ভরশীল হয়ে উঠছে। কৃষকদের বক্তব্যে ফুটে উঠেছে,অজ্ঞতা, শাক পোকার হাত থেকে সব্জি টেকানো, প্রশিক্ষণ কিংবা ব্যাপক সচেতনার অভাবে সহনীয় মাত্রা না জেনেই অবাধে ক্ষেতের জমিতে সপ্তাহে দু’বার পর্যন্ত কীটনাশক প্রয়োগ করা হচ্ছে। ন্যাশনাল ফুড সেফটি ল্যাবরেটরি (এনএফএসএল), জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার (এফএও), বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের (বারি), ইনস্টিটিউট অব পাবলিক হেলথ (আইপিএইচ) সংস্থাগুলোর বিগত বছরের গবেষণার রিপোর্টের আংশিক উপস্থাপন করা হয়।
মতবিনিময় অনুষ্ঠানে কৃষকদের কীটনাশক ব্যবহারের ক্ষেত্রে সচেতন ও সহনীয় মাত্রা ব্যবহার ও বিকল্প পদ্ধতিতে কীটনাশক মুক্ত সবজি উৎপাদনের বিষয়ে মাঠ পর্যায়ে সচেতনতা মূলক আলোচনা করার প্রস্তাব উপস্থাপন করা হয়। তাছাড়া রাসায়নিক কীটনাশক পরিহার করতে ভেষজ কীট নাশক ব্যবহারে উদ্বুদ্ধ করতে হবে কৃষকদের।
মন্তব্য করুন