কুলাউড়ায় ছোট ভাইয়ের মামলায় বড় ভাই জেলহাজতে
মাহফুজ শাকিল : মৌলভীবাজারের কুলাউড়ায় বড় ভাইয়ের অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে স্ত্রী-সন্তানসহ ঘরবাড়ি ছেড়ে সংবাদ সম্মেলন করে প্রশাসনের কাছে লিখিত আবেদন করলে পুলিশ সেই অত্যাচারী বড় ভাই লিয়াকত মিয়াকে গ্রেপ্তার করে জেলহাজতে পাঠিয়েছে।
শনিবার ২৮ ডিসেম্বর রাতে উপজেলার চান্দগাঁও গ্রামে অভিযান চালিয়ে আসামী লিয়াকত আলীকে গ্রেপ্তার করেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা কুলাউড়া থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মো. মুহিত মিয়া।
জানা যায়, ভুক্তভোগী প্রবাসী শাহিন মিয়া ২০২৪ সালের ১৮ ডিসেম্বর বড়ভাই লিয়াকত আলীর বিরুদ্ধে কুলাউড়া থানায় চাঁদাবাজি ও প্রাণনাশের অভিযোগে মামলা (নং-১১) দায়ের করেন।পরবর্তীতে বিজ্ঞ আদালতের নির্দেশে কুলাউড়া থানা পুলিশ মামলাটি রুজু করে।
এরআগে উপজেলার হাজীপুর ইউনিয়নের চান্দগাঁও গ্রামের মৃত রুশন আলীর ছেলে ওমান প্রবাসী শাহিন মিয়া সোমবার ৩০ অক্টোবর সংবাদ সম্মেলন করেন বড়ভাই লিয়াকত আলীর বিরুদ্ধে। বাড়িতে ঠাঁই না হওয়ায় স্ত্রী ও দুই অবুঝ কন্যা সন্তানকে নিয়ে বিভিন্ন আত্মীয়-স্বজনের বাড়িতে যাযাবরের মতো দিনযাপন করছিলেন তিনি।
প্রবাসী শাহিন মিয়া বলেন, আমার পিতা মৃত রুশন আলী। আমাদের ছোট রেখে বাবা মারা যান। পরিবারে ৪ ভাই ও ৪ বোনের মধ্যে আমি সবার ছোট। আমি দীর্ঘদিন থেকে মধ্যপ্রাচ্যের দেশ ওমানে বসবাস করছি। কিন্তু অত্যন্ত দুঃখের বিষয়, প্রায় ২০ বছর আগে আমাদের মৌরসি সম্পত্তি বিক্রি করে অন্যত্র চার ভাইয়ের নামে ৫২ শতক জমি দলিল করে বাড়ি তৈরি করা হয়। সেই বাড়িতে আমরা চার ভাই একত্রে বসবাস করলেও ২০২১ সালে বড় ভাইয়ের কারণে আমরা চার ভাই আলাদা হয়ে যাই। এরপর আমি আমার অংশে একটি পাকা ও কাচা ঘর তৈরির কাজ শুরু করি।
কাঁচা ঘরে আমার পরিবার কিছুদিন থাকলেও পাকা ঘরের কাজ নির্মাণাধীন থাকাবস্থায় আমার বড়ভাই লিয়াকত আলী আমি প্রবাসে থাকাবস্থায় ২০২৩ সালে আমার স্ত্রী সেলিনা বেগম ও অবুঝ দুটি মেয়ে সন্তানকে আমার বসতঘর থেকে জোরপূর্বক বের করে দেন। বর্তমানে ওই বাড়ির ভূমি নিয়ে সমস্যা সৃষ্টি হলে স্থানীয়ভাবে একাধিকবার সালিশ বৈঠক হয়। বৈঠকে বিচারকদের সিদ্ধান্ত উপস্থিতভাবে মেনে নিলেও স্থায়ী সমাধানের জন্য আমার ভাই লিয়াকত আলী মোটা অংকের টাকা ছাড়া রাজি হননি।
একই নিয়মে ২০২২ সালে আমি বিচারকদের সিদ্ধান্তমতে দেড় লক্ষ টাকা আমার ভাই লিয়াকতকে দিয়েছি। সেই লোভে আমার ভাই লিয়াকত আমি যতবার প্রবাস থেকে দেশে আসি ততবারই বিভিন্ন সমস্যা তৈরি করে আমাকে টাকার জন্য হয়রানি করে আসছেন। যাযাবরের মতো স্ত্রী-সন্তানদের নিয়ে বিভিন্ন আত্মীয়-স্বজনদের বাড়িতে দিনযাপন করছি।
প্রবাসী শাহিন মিয়া আরো বলেন, আমরা যৌথ থাকাবস্থায় আমিসহ অন্য ভাইয়েরা প্রবাসে টাকা উপার্জন করে বাড়িতে বড়ভাই লিয়াকত আলীর কাছে লক্ষ লক্ষ টাকা পাঠাই। তিনি সেই টাকা নিজের মতো করে খরচ করেন এবং আমাদের সকল ভাইয়ের নামে দলিল না করে চতুরতার আশ্রয় নিয়ে প্রায় ১৫০ শতক জমি নিজের নামে দলিল সম্পাদন করেন।
বিষয়টি নিয়ে তৎকালীন সময়ে হাজীপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আওয়ামীলীগ নেতা ওয়াদুদ বক্স, ইউপি সদস্য রাজা মিয়ার কাছে একাধিকবার ধরণা দিলেও তারা বিষয়টির স্থায়ী কোন সমাধান করে দেননি। বরং তারা বিষয়টি সমাধান না করার জন্য নানা টালবাহানা করতে থাকেন। চলতি বছরের ৯ অক্টোবর আমি ওমান থেকে দেশে আসলে সকল বিরোধের মীমাংসার উদ্যোগ নিলেও আমার ভাই তাতে কোন সাড়া দেননি।
স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান নুর আহমদ চৌধুরী বুলবুল, মেম্বার রাজা মিয়া ও গণ্যমান্য ব্যক্তিদের অবগত করলে তারা সালিশি বৈঠক করেন। বৈঠকে আমার ভাই উপস্থিত সকলের সামনে সিদ্ধান্ত মেনে নিলেও বাড়িতে গিয়ে তিনি সিদ্ধান্ত বদলে আমার কাছে মোটা অংকের টাকা দাবি করেন।
প্রবাসী শাহিন মিয়া তার বড়ভাই লিয়াকত আলী গ্রেপ্তার হওয়ায় কিছুটা স্বস্তি ফেললে বাড়িতে প্রবেশ ও বাড়ির রাস্তা নিয়ে বিরোধটি নিরসনের জন্য প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।
মন্তব্য করুন