(ভিডিওসহ) কুলাউড়ায় জাল ভোট ও কারচুপির অভিযোগে দুই প্রার্থীর ভোট বর্জন
কুলাউড়া প্রতিনিধি॥ মৌলভীবাজার-২ (কুলাউড়া) আসনে অনুষ্ঠিত জাতীয় সংসদ নির্বাচেন জাল ভোট ও কারচুপির অভিযোগ এনে ভোট বর্জন করেছেন আওয়ামীলীগের স্বতন্ত্র প্রার্থী একেএম সফি আহমদ সলমান ও তূণমূল বিএনপির প্রার্থী এম এম শাহীন।
রোববার ৭ জানুয়ারি বিকেল সাড়ে চারটায় ট্রাক প্রতীকের স্বতন্ত্র প্রার্থী একেএম সফি আহমদ সলমান তাঁর নিজ বাসায় সাংবাদিকদের সাথে ব্রিফিং করে নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দিয়ে অভিযোগ করে বলেন, বিকেল সাড়ে চারটা পর্যন্ত অনেক কেন্দ্রে ভোটগ্রহণ চলে। নৌকার প্রার্থীকে বিজয়ী করতে প্রিজাইডিং অফিসারদের সহযোগিতায় কেন্দ্রে কেন্দ্রে ব্যাপক অনিয়ম এবং জাল ভোট দেওয়া হয়েছে। ভোট চলাকালীন সময়ে এসব অনিয়মের কথা রিটার্নিং কর্মকর্তা, সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা ও দায়িত্বপ্রাপ্ত ম্যাজিস্ট্রেটদের জানাই। কিন্তু তারা কেউ কোন প্রদক্ষেপ নেননি। বিকাল ৩টা থেকে শুরু হয় জাল ভোট দেয়ার উৎসব। এসময় অনেক কেন্দ্রে আমার এজেন্টদের ভোটকক্ষ থেকে বের করে দেয়া হয়েছে। এমনকি কয়েকটি কেন্দ্রে আমার এজেন্টদের তালাবদ্ধ করে প্রিজাইডিং অফিসারদের সহযোগিতায় ১০৩ কেন্দ্রের মধ্যে প্রায় ৭৫টি কেন্দ্রে নৌকার কর্মী সমর্থক ও শত শত বহিরাগতরা জাল ভোট প্রদান করেন। এর আগে নৌকার প্রার্থীর পক্ষে বহিরাগতরা কুলাউড়ায় বিভিন্ন হোটেল, বাসা বাড়িতে এমনকি প্রার্থী, তাঁর স্বজন ও সমর্থকদের বাড়িতে অবস্থান নেয়। সুষ্ঠু ভোটের শঙ্কা জেনে নির্বাচন কমিশনের সচিব, জেলা রিটার্নিং অফিসার, সহকারী রিটার্নিং অফিসার, ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কে লিখিতভাবে অবহিত করি। কিন্তু আমি কমিশন থেকে কোন সহযোগিতা পাইনি।
তিনি আরও অভিযোগ করে বলেন, নির্বাচন কমিশনের প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের আশ্বাস পেয়ে আমি নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্ধিতা করি। কিন্তু নির্বাচন কমিশন সুষ্ঠু নির্বাচন দিতে সম্পুর্ণ ব্যর্থ হয়েছে। সুষ্ঠু ভোট হলে আমি বিপুল ভোটে বিজয়ী হতাম। কারণ দীর্ঘদিন থেকে আমি কুলাউড়ার মানুষের সুখে-দুঃখে পাশে ছিলাম।
এদিকে তৃণমূল বিএনপির সংসদ সদস্য প্রার্থী এম এম শাহীন নির্বাচনে নৌকার প্রার্থীর কর্মী-সমর্থকদের মাধ্যমে অধিকাংশ ভোটকেন্দ্র দখল ও জাল ভোট প্রদান করে পোলিং এজেন্টদের বের করে দেওয়ার অভিযোগ এনে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়িয়েছেন। নির্বাচন চলার সময়ে বিকাল সাড়ে ৩ টায় তিনি এ ঘোষণা দেন। এছাড়া ভোট বর্জনের বিষয়ে জেলা রিটার্নিং অফিসারের মাধ্যমে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) বরাবরে একটি লিখিত অভিযোগও দেন এম এম শাহীন।
অভিযোগে এম এম শাহীন উল্লেখ করেন, ১০৩টি ভোট কেন্দ্রের মধ্যে অধিকাংশ আসনে আওয়ামীলীগের নৌকার প্রার্থী শফিউল আলম চৌধুরী নাদেলের কর্মী-সমর্থকরা কেন্দ্র দখল করে জাল ভোট প্রদান করেছেন। নির্বাচনী এলাকায় কোনো কেন্দ্রেই আমার এজেন্টদের ভয়ভীতি দেডষয়ে ঢুকতে দেওয়া হয়নি। কোন কেন্দ্রের আশেপাশে আমার কর্মী-সমর্থকদের অবস্থান করতে দেয়া হয়নি। নৌকার সমর্থকদের এসব অপকর্ম রোধে কিছু ভোটকেন্দ্রের দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রিজাইডিং অফিসার সম্পূর্ণ ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছেন। অনেক কেন্দ্রে প্রশাসনের কিছু লোক নৌকার প্রার্থীর পক্ষে প্রত্যক্ষ-পরোক্ষভাবে অবস্থান নিয়েছেন।
নির্বাচনের আগে সরকার, নির্বাচন কমিশন ও প্রশাসন অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের প্রতিশ্রুতি দেয়ায় আস্থা ও বিশ^াস রেখে সুষ্ঠু নির্বাচনের প্রত্যাশা নিয়ে তৃণমূল বিএনপির সোনালী আঁশ প্রতীক নিয়ে প্রার্থী হই। কিন্তু ভোটের দিন দুপুর থেকেই এর সম্পূর্ণ বিপরীত চিত্র দেখতে পাই। তাই বর্তমান নির্বাচন কমিশন ও প্রশাসনের প্রতি অনাস্থা জানিয়ে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন থেকে ভোট বর্জন করেন। এরআগে নির্বাচনে নৌকার প্রার্থীর পক্ষে বহিরাগতদের অবস্থান নিয়ে জেলা রিটানির্ং অফিসার ও জেলা প্রশাসক বরাবরে ৫ জানুয়ারি রাতে স্বতন্ত্র প্রার্থী একেএম সফি আহমদ সলমান ও জেলা পুলিশ সুপার বরাবরে তৃণমূল বিএনপির সোনালী আঁশ প্রতীকের প্রার্থী এম এম শাহীন পৃথক দুটি লিখিত অভিযোগ করেছেন। এছাড়া ৪ জানুয়ারি সিলেটের বিভাগীয় কমিশনার ও সিলেট রেঞ্জের ডিআইজি বরাবরে পৃথক দুটি লিখিত অভিযোগ করেন তৃণমূল বিএনপির প্রার্থী এম এম শাহীন।
ভোট বর্জনের মাধ্যমে জনগণের নৈতিক বিজয় নিশ্চিত হলো- জহরলাল দত্ত
প্রহসনের নির্বাচন বর্জন করায় মৌলভীবাজার জেলা বাসীকে অভিনন্দন জানিয়েছেন বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি) মৌলভীবাজার জেলা কমিটির সম্পাদক মন্ডলীর সদস্য ও বাম গণতান্ত্রিক জোট জেলার অন্যতম সদস্য জহরলাল দত্ত। তিনি বলেন, ভোট বর্জনের মাধ্যমে জনগণ স্বৈরাচারী সরকারকে লাল কার্ড দেখিয়েছেন। নির্বাচন বর্জনের মাধ্যমে জনগণের একটা নৈতিক বিজয় নিশ্চিত হলো। এই বিজয়ে জেলাবাসীকে সংগ্রামী অভিবাদন জানাচ্ছি।
মন্তব্য করুন