কুলাউড়ায় দেড় বছর ধরে নিখোঁজ স্বামীর সন্ধান চেয়ে স্ত্রী-সন্তানদের আকুতি

January 14, 2025,

মাহফুজ শাকিল : কুলাউড়ায় দেড় বছর থেকে নিখোঁজ মানিক মিয়ার সন্ধান ও জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনী ব্যবস্থা নেয়ার দাবিতে সংবাদ সম্মেলন করেছেন ভুক্তভোগী পরিবারের সদস্যরা।

সোমবার ১৩ জানুয়ারি রাতে কুলাউড়া মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্সে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে দেন বরমচাল ইউনিয়নের কলিমাবাদ গ্রামের বাসিন্দা নিখোঁজ মানিক মিয়ার স্ত্রী আছমা বেগম, স্কুল পড়ুয়া দুই মেয়ে ফাতেমা বেগম ও মরিয়ম আক্তার সুমা।

লিখিত বক্তব্য ও আদালতের দায়েরকৃত মামলা সূত্রে জানা যায়, কুলাউড়া উপজেলার বরমচাল ইউনিয়নের কলিমাবাদ গ্রামের বাসিন্দা দিনমজুর মানিক মিয়ার সাথে জমিসংক্রান্ত বিরোধ ছিল একই ইউনিয়নের বাসিন্দা তাজ হোসেন, আবুল হোসেন খছরু উদ্দিন, রিয়াজ উদ্দিন, লেচু উদ্দিন ও লেবু মিয়ার।

বিরোধের জেরে পূর্বপরিকল্পিতভাবে ২০২৩ সালের ২৫ মে রাতে বিয়ের একটি অনুষ্ঠানে কাজ করানোর কথা বলে মানিক মিয়াকে বাড়ি থেকে নিয়ে যান প্রতিপক্ষরা। বিয়ের অনুষ্ঠান শেষ হলেও পরদিন ২৬ মে বাড়ি ফিরেননি মানিক মিয়া।

অনেক খোঁজাখুঁজির পর বাড়ি না ফেরায় স্বামী মানিক মিয়ার সন্ধানে স্ত্রী আছমা বেগম প্রতিপক্ষদের বাড়িতে গিয়ে খোঁজ নেন। ওইসময় প্রতিপক্ষরা আছমা বেগমকে বলেন, স্বামীকে জীবিত পেতে হলে মুক্তিপণ হিসেবে দুই লক্ষ টাকা দিতে হবে। বিষয়টি নিয়ে প্রতিবাদ করলে আছমা বেগমকে হুমকি-ধামকি দিয়ে তাড়িয়ে দেন প্রতিপক্ষরা।

বিষয়টি নিয়ে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের জানালে তাদের পরামর্শ আছমা বেগম থানায় অভিযোগ দিলেও সেটি মামলা হিসেবে নথিভুক্ত হয়নি। পরে ন্যায়বিচারের আশায় আদালতের দ্বারস্ত হন ভুক্তভোগী আছমা বেগম।

২০২৩ সালের ১৭ আগস্ট বরমচাল ইউনিয়নের বাসিন্দা তাজ হোসেন, আবুল হোসেন খছরু উদ্দিন, রিয়াজ উদ্দিন, লেচু উদ্দিন ও লেবু মিয়ার বিরুদ্ধে আদালতে (মামলা নং-৪৬৪) দায়ের করেন আছমা বেগম। আদালত মামলাটি তদন্ত করে প্রতিবেদন জমা দেবার জন্য কুলাউড়া থানা পুলিশকে নির্দেশ দেন।

ভুক্তভোগী আছমা বেগম বলেন, আমার স্বামী একজন দিনমজুর। ডেকোরের্টাসের শ্রমিক হিসেবে কাজ করে কোনমতে সংসার চালাতেন। আমি সৌদিআরবে গিয়ে কাজ করে ৯শতক জমি ক্রয় করি। সেই জমি নিয়ে আসামীদের সাথে বিরোধ চলছিল। আমার স্বামীকে পরিকল্পিতভাবে তারা অপহরণ করে নিয়ে দুই লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করে। এ ঘটনায় আমি থানায় জিডি (নং-৩৩৫/২৩) দায়ের করি। কিন্তু তদন্তকারী কর্মকর্তা আমার স্বামীকে উদ্ধার করতে পারেননি।

আবুল হোসেন খছরু উদ্দিন বিগত ইউপি নির্বাচনে নৌকা নিয়ে প্রতিদ্বন্ধিতাকারী ও যুবলীগের যুগ্ম সম্পাদকের পদে থাকায় তিনিসহ তার সহযোগীরা থানা পুলিশকে প্রভাবিত করে টাকার বিনিময়ে ঘটনা ধামাচাপা দিতে থানার তৎকালীন এসআই মনির হোসেন মামলার তদন্ত প্রতিবেদন আসামীদের পক্ষে দেন। পুলিশি প্রতিবেদন নিয়ে আমি আদালতে নারাজী আবেদন করেছি।

তিনি দাবি করে বলেন, বিবাদী পক্ষ আওয়ামীলীগের প্রভাবশালী সন্ত্রাসী থাকায় আমার স্বামীকে অপহরণ করে কোথায় নিয়ে হত্যা করেছে এবং বিভিন্ন মহলে প্রচার করতেছে আমার স্বামী নাকি প্রবাসে চলে গেছে।

মামলাটি সুষ্ঠু তদন্ত করলে প্রকৃত ঘটনা উন্মোচিত হবে। প্রায় দেড় বছরের অধিক সময় থেকে স্বামীর সন্ধান না পাওয়া আছমা বেগম দুই স্কুল পড়ুয়া মেয়েকে নিয়ে নিরাপত্তাহীনতায় দিনযাপন করছেন।

এ বিষয়ে কুলাউড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. গোলাম আপছার সোমবার রাত আটটায় এই প্রতিবেদককে বলেন, তৎকালীন সময়ে ওই ঘটনাটি আমার জানা নেই। বাদী বিজ্ঞ আদালতে যদি নারাজি দিয়ে থাকেন তাহলে আদালত পুনরায় যদি পুলিশ কিংবা অন্য আইন প্রয়োগকারী সংস্থাকে তদন্তের জন্য নির্দেশ দেন তাহলে বাদী ন্যায়বিচার পাবেন।

সংবাদটি শেয়ার করতে নিচের “আপনার প্রিয় শেয়ার বাটনটিতে ক্লিক করুন”

মন্তব্য করুন

Social Media Auto Publish Powered By : XYZScripts.com