কুলাউড়ায় বিএনপি নেতা ফখরুলের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত যুবলীগ নেতা সেন্টু

March 9, 2025,

মাহফুজ শাকিল  : কুলাউড়া উপজেলার বরমচাল ইউনিয়নে বিএনপি নেতা ও ব্যবসায়ী ফখরুল ইসলামের বিরুদ্ধে বিভিন্ন ষড়যন্ত্র ও অপপ্রচারে লিপ্ত রয়েছেন ইউনিয়নের ৭ নম্বর ওয়ার্ড যুবলীগের সভাপতি আজমল আলী শাহ সেন্টু। ৫ আগস্ট ফ্যাসিবাদী আওয়ামীলীগ সরকার পতনের পর এবার নিজের অপকর্ম ঢাকতে নিজেকে বিএনপির রাজনীতির সাথে জড়িত উল্লেখ করে ২ মার্চ কুলাউড়া থানায় বিএনপি নেতা ও ব্যবসায়ী ফখরুল ইসলামের বিরুদ্ধে জমিদখল ও প্রাণনাশের অভিযোগ এনে একটি লিখিত অভিযোগ করেন। এছাড়া বিভিন্ন মাধ্যমে ফখরুল ইসলামের বিরুদ্ধে নানা ষড়যন্ত্র ও অপপ্রচারে লিপ্ত রয়েছেন যুবলীগ নেতা আজমল আলী শাহ। ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে যুবলীগ নেতা আজমল আলী শাহ সেন্টু গত ৬ মার্চ কুলাউড়ার একটি অনলাইল পোর্টালে ‘কুলাউড়ায় জবরদখলকারীদের হুমকিতে আতঙ্কে জমির মালিক’ শিরোনামে একটি সংবাদ প্রকাশ করিয়েছেন। ওই সংবাদটি দৃষ্টিগোচর হয় বিএনপি নেতা ফখরুল ইসলামের। তিনি ওই সংবাদের প্রতিবাদ জানিয়ে বলেন, আমার পরিবারের সবাই বিএনপির রাজনীতির সাথে জড়িত। এলাকায় অত্যন্ত সুনামের সাথে ব্যবসা পরিচালনা করে আসছি৷ প্রতিবছর সরকারকে কর দিয়ে যাচ্ছি।  এখন ইউনিয়নের সাত নম্বর ওয়ার্ড যুবলীগের সভাপতি আজমল আলী শাহ সেন্টু আমাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলেছেন, আমরা নাকি জাল দলিল সৃষ্টি ও নামজারি করে এক একর ৭৬ শতাংশ জমি জবরদখল করেছি। আদালতের রায়ে নাকি ওই জমি ফিরে পেয়েছেন জমির প্রকৃত মালিক এবং তিনি নাকি ওই জমিতে যেতে পারছেন না। প্রকৃত অর্থে, ওই জমিটি আমরা খরিদা সূত্রে মালিক। কুলাউড়ার বরমচাল ইউনিয়নের সিঙ্গুর মৌজায় বিভিন্ন দাগে সাইল, বাড়ি, চারা ও পুকুর শ্রেণীর ১.১৩ একর ভূমি খরিদা সূত্রে মালিক আমরা তিন ভাই। বর্তমানে আমরা ওই জমিতে বসবাস করছি এবং জমি আমাদের দখলে রয়েছে। ১৯৯৯ সালে এসএ রেকর্ডীয় মালিক মনিন্দ্র চন্দ্র সিকদারের ছেলে মনোজ্যোতি শিকদারের কাছ থেকে ক্রয় করে মালিক হন আমার পিতা হাজী আব্দুর রহমান। পরবর্তীতে ২০১৭ সালে এক একর সাড়ে তের শতক ভূমি ক্রয় করে মালিক হই আমরা তিন ভাই নজরুল ইসলাম, বদরুল ইসলাম ও ফখরুল ইসলাম। ওই জমি পরবর্তীতে নামজারী সম্পন্ন করে প্রতিবছর জমির খাজনাও পরিশোধ করে আসছি। কিন্তু বরমচাল ইউনিয়নের খাদিমপাড়া গ্রামের বাসিন্দা ইছমাইল আলীর শাহ’র ছেলে আজমল আলী শাহ ওই জমি তার নিজের দাবি করে বিভিন্ন ষড়যন্ত্র করে যাচ্ছেন। বর্তমানে ওই জমি নিয়ে বিজ্ঞ আদালতে মামলা চলমান রয়েছে।

তিনি আরো বলেন, বরমচাল ইউনিয়নের ৭ নম্বর ওয়ার্ড যুবলীগের সভাপতি আজমল আল শাহ সেন্টু বিগত আওয়ামীলীগ সরকারের সময় তার আত্মীয় উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি রফিকুল ইসলাম রেনুর (বর্তমানে পলাতক) ক্ষমতার প্রভাব খাটিয়ে টিপসই ধারা দানপত্র জাল দলিল সৃজন করে ওই জমি নিজের দাবি করেন। তিনি বিভিন্ন সময় আমাদের হয়রানি করার জন্য প্রাণনাশের হমকি ও জবরদখলের অভিযোগ এনে থানায় আমাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ দেন। অথচও ২০২৪ সালের ২১ আগস্ট কুলাউড়া থানার তৎকালীন এসআই মো. মনির হোসেন তদন্ত করে আমাদের পক্ষে একটি প্রতিবেদন জমা দেন। সেই প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, আজমল আলী শাহ সেন্টু আওয়ামী পরিবারের লোক হন। বিরোধপূর্ণ ভূমি নিয়ে দুইপক্ষের মধ্যে আদালতে মামলা রয়েছে। আমি বাদী হয়ে আজমল আলী শাহের বিরুদ্ধে বিজ্ঞ অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মৌলভীবাজার (মামলা নং-৫১/২৪) দায়ের করি। ওই মামলার পর ২০২৪ সালের ১৮ নভেম্বর অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে জেলা ম্যাজিস্ট্রেট বুলবুল আহমদে স্বাক্ষরিত আদেশ পর্যালোচনা করে দেখা যায়, সহকারী কমিশনার (ভূমি) এর দাখিলকৃত প্রতিবেদনে দেখা যায়, নালিশা ভূমি ১ম পক্ষ ফখরুল ইসলাম গংয়ের ভোগদখলে রয়েছে এবং ২য় পক্ষ আজমল আলী শাহ সেন্টু গংয়ের মালিকানা ও দখলের কোন পায়তারা নেই। সার্বিক বিবেচনায়, ১ম পক্ষকে বর্ণিত স্বত্ব আপীল মোকদ্দমায় ২য় পক্ষের বিরুদ্ধে নিবারন মূলক আদেশ প্রার্থনার পরামর্শ দেওয়া হলো এবং স্বত্ব আপীল মোকদ্দমা চলাকালীন নালিশা ভূমিতে শান্তি-শৃঙ্খলা বজায় রাখার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য কুলাউড়া থানার ওসিকে বলা হলো এবং মামলা নিষ্পত্তি করা হয়। ওই আদেশের পর আমার প্রতিপক্ষ আজমল আলী শাহ সেন্টু ভয়ভীতি, অপহরণ ও প্রাণনাশের অভিযোগ করেন আমাদের বিরুদ্ধে। সরেজমিন তদন্তে ওইসকল অভিযোগের কোন ধরণের সত্যতা পাওয়া যায়নি মর্মে আদালতে প্রতিবেদন জমা দেন এসআই মনির হোসেন।

অনুসন্ধান করে জানা গেছে, ২০২২ সালের ১৪ মার্চ বরমচাল ইউনিয়নের ৭ নম্বর ওয়ার্ড যুবলীগের ত্রি-বার্ষিক সম্মেলনে সভাপতি নির্বাচিত হন আজমল আলী শাহ সেন্টু। তিনি বিগত ২০২৪ সালের নির্বাচনে আওয়ামীলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক, নৌকার প্রার্থী শফিউল আলম চৌধুরী নাদেলের নির্বাচনী প্রচারণায় ভূমিকা রাখেন। এমনকি বিভিন্ন সময়ে নিজের প্রভাব ধরে রাখার জন্য আওয়ামীলীগের জেলা, উপজেলা কমিটির শীর্ষ নেতাদের সাথে ছবি তুলেন। বিগত ফ্যাসিস্ট সরকারের আমলে যুবলীগের রাজনীতি করে এলাকায় ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছেন আজমল আলী শাহ সেন্টু। বিগত ৫ আগস্টের পট পরিবর্তন হলে যুবলীগ নেতা আজমল আলী শাহ সেন্টু নিজের লেবাস পরিবর্তন করে নিজেকে বিএনপির রাজনীতির সাথে জড়িত আছেন বলে বিভিন্ন মহলে প্রচার করছেন। তিনি বরমচাল ইউনিয়নের ৮ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির কমিটিতে ফখরুল ইসলাম যাতে সভাপতি হিসেবে স্থান না পান সেজন্য এসব অপপ্রচার ও ষড়যন্ত্র চালিয়ে যাচ্ছেন বলে অভিযোগ ফখরুল ইসলামের।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বরমচাল ইউনিয়নের ৭ নম্বর ওয়ার্ড যুবলীগের সভাপতি আজমল আলী শাহ সেন্টু জানান, আমার বিরুদ্ধে স্থানীয় একটি মহল ষড়যন্ত্র করছে। ওই বিরোধপূর্ণ জমির মালিক আমি। জমি নিয়ে আদালতে মামলা চলমান আছে।

সংবাদটি শেয়ার করতে নিচের “আপনার প্রিয় শেয়ার বাটনটিতে ক্লিক করুন”

মন্তব্য করুন

Social Media Auto Publish Powered By : XYZScripts.com