কুলাউড়ার কর্মধা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আতিকের নানা অপকর্মের কথা
কুলাউড়া অফিস॥ কুলাউড়া উপজেলার কর্মধা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এম এ রহমান আতিক। জেলা পরিষদ নির্বাচনে তিনি ছিলেন ভোটার। নির্বাচনে সময় তার কাছে ভোট চাইতে এসেছিলেন একাধিক প্রার্থী। আর তিনি সেই সুযোগকে কোনক্রমেই হাতছাড়া করেননি। নিজের ভোটটি প্রদান করার নামে একাধিক প্রার্থীর কাছ থেকে হাতিয়ে নেন কয়েক লক্ষ টাকা। শুধু আতিক নন তার মতো অনেক জনপ্রতিনিধি কাছে জেলা পরিষদের নির্বাচন নিয়ে এসেছিলো সোনার ডিম হিসেবে। তারা নিজের ভোটটি প্রদানের নামে অনেক প্রার্থীর কাছ থেকে বাগিয়ে নিয়েছেন লক্ষ লক্ষ টাকা। শুধু তিনি নন তার পরিষদসহ অন্যান্য পরিষদের ভোটারদের ভোট প্রদান করানোর দায়িত্ব নেন তিনি। কিন্তু নির্বাচনের দিনই বেরিয়ে আসে তার মুখোশ। তিনি কাকে ভোট দিয়েছেন তা নিজেও বলতে পারবেন কিনা তা নিয়ে সন্দেহ তুলছেন প্রার্থীরা। আর নির্বাচনে কাঙ্খিত ফল না পেয়ে প্রার্থীরা খুঁজছেন ওই চেয়ারম্যানকে। অনেকে মোবাইল ফোনে টাকা ফেরৎ দেয়ার জন্য সময় বেঁধে হুমকি দিচ্ছেন। আবার কেউ কেউ বাড়িতে গিয়ে হানা দিচ্ছেন। এদিকে নির্বাচনের পর দিনই কর্মধা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আতিকের এক ঘনিষ্ঠ মেম্বার গা ঢাকা দেন তার শ্বশুরবাড়ী। ওই পরিষদের প্রবীণ এক মেম্বার এক প্রার্থীর ৬ হাজার টাকার স্থলে ৫ হাজার টাকা ফেরৎ দিয়েছেন।
জেলা পরিষদের সদস্য প্রার্থী মুহিবুল ইসলাম আজাদ জানান, কর্মধার চেয়ারম্যান আতিকের সাদা পাঞ্জাবির আড়ালে অনেক অপকর্ম লুকিয়ে আছে। আতিক জেলা পরিষদ নির্বাচনে আমাকে ভোট দেওয়ার কথা বলে আমার কাছ থেকে ১০ হাজার টাকা নিয়েছে। পরে শুনলাম সে আমার মতো অনেক প্রার্থীর কাছ থেকে লক্ষ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। নির্বাচনের দিন আমি তাকে মোবাইল ফোনে আমার টাকা ফেরৎ দেয়ার জন্য চাপ প্রয়োগ করলে সে পরের দিন টাকা ফেরৎ দিবে বলেছিলো। কিন্তু আজব্দি সে আমার টাকা ফেরৎ দেয়নি।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক অপর এক প্রার্থী জানান, আতিক আমাকে ভোট দিবেন বলে আমার কাছ থেকে ২৫ হাজার টাকা নিয়েছে। তার ভাব দেখে সে আমায় ভোট দেননি নিশ্চিত হয়ে আমি তাকে টাকা ফেরৎ দেয়ার জন্য হুমকি দিয়েছি। কয়েক তারিখ করে সে এখনও টাকা ফেরৎ দেয়নি।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আরেক প্রার্থী ও ক্ষমতাশীন দলের প্রভাবশালী নেতা জানান, আতিক আমার কাছ থেকে ভোট দেয়ার নাম করে ৪০ হাজার টাকা নিয়েছিলো। আমি তাকে টাকা ফেরৎ দেয়ার হুমকি দিলে সে আমাকে স্থানীয় লোকজনকে মধ্যস্থতায় টাকা ফেরৎ দেবার সময় নিয়েছেন দেখি কি করে। এছাড়াও তিনি আরও কয়েক প্রার্থীর কাছ থেকে হাতিয়ে নিয়েছেন বড় অংকের টাকা। এছাড়া কর্মধা ইউনিয়নের সাধারণ মানুষ জানান, নির্বাচিত হওয়ার বছর যেতে না যেতে তার কর্মকান্ডে অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছেন সাধারণ মানুষ। জয়চন্ডী ইউনিয়নের কাজল (আতিকের তালতো ভাই) হত্যাকান্ডের দুই নম্বার আসামী ছিলেন আতিক। ওই মামলায় জেলও খেটেছেন। চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েই সরকারি অনুদানের টিউবওয়েল বসিয়ে দেন নিজ বাড়ীতে। এছাড়াও বিচারের নামে হাতিয়ে নিয়েছেন অনেক মানুষের কাছ থেকে বিপুল অংকের আমানত। ওই এলাকার চোরদের প্রশ্রয়দাতা হিসেবে ইতিমধ্যে তার নাম শোনা যাচ্ছে লোকমুখে। এই চোরদের কাছ থেকেও বিচারের নামে টাকা হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগ উঠেছে। ওই এলাকার বাসিন্দা কুলাউড়ায় কর্মরত এক সাংবাদিকের স্যামসাং এস-৪ দামী মোবাইল ফোন সেট চুরি হয় কিছু দিন আগে। পরে এলাকার চিহ্নিত সাইদুল চোরকে স্থানীয়রা আটক করে ইউনিয়ন পরিষদে নিয়ে আসে। পরিষদে চেয়ারম্যানসহ মেম্বাদের নিয়ে সালিশ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে ওই চোরের স্বীকারোক্তিতে সাক্ষ-প্রমানের ভিত্তিতে ওই চোরকেই চূড়ান্তভাবে সনাক্ত করা হয়। পরে তার বাবা ইন্তাজ আলী মোবাইলের দাম হিসেবে ৫ হাজার টাকা দেয়ার অঙ্গিকার করে জামিনে ছাড়িয়ে নেন। এদিকে ইন্তাজ আলী ওই টাকা চেয়ারম্যানের কাছে জমা দিলে আতিক চেয়ারম্যান ওই টাকা সাংবাদিকের হাতে পৌছাতে নানা টালবাহানা শুরু করেন। একপর্যায়ে ওই টাকা আতিক চেয়ারম্যান পকেটস্থ করে ওই সাংবাদিককে জানান ইউনিয়ন পরিষদে মাসুক মেম্বারের (৪নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য) বরাদ্দ আসলে ১টন চাল তিনি দিয়ে দিবেন। বিষয়টি শুনে ওই সাংবাদিক এ প্রস্তাবে রাজি হওয়াতো দূরের কথা রাগ করে পরিষদ থেকে বের হয়ে আসেন। পরে ঘটনাটি ওই সাংবাদিক দুইজন সাবেক সংসদ সদস্য, কুলাউড়ায় কর্মরত কয়েকজন সিনিয়র সাংবাদিক, কয়েকজন ইউপি চেয়ারম্যানদের অবহিত করেছেন।
মন্তব্য করুন