কুলাউড়ার প্রাথমিক শিক্ষায় এসেছে আমুল পরিবর্তন শিশু শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি বাড়াতে ‘রঙিন স্কুল’
কুলাউড়া অফিস॥ কুলাউড়া উপজেলার প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোকে সাজানো হয়েছে মনোমুগ্ধকর সাজে। শিশু মনের আকর্ষণ বাড়াতে করা হয়েছে এই ব্যবস্থা। তাতে ব্যাপক সাড়া দিয়েছে শিশুরা। একদিন যে শিশু স্কুলে এসেছে, তাকে পরের দিন আর বলতে হয় না। তাতে স্কুলের প্রতি শিশুদের আকর্ষণ বাড়ছে। স্কুলের বাহ্যিক পরিবর্তনের প্রভাব পড়েছে প্রাথমিক শিক্ষায়। বিষয়টি এখন জেলার প্রাথমিক শিক্ষায় অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। সরেজমিন কুলাউড়ার বিভিন্ন প্রাথমিক বিদ্যালয় পরিদর্শন করে দেখা যায়,
কুলাউড়ার প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোকে রঙ্গিন করে সাজানো হয়েছে। রঙ তুলির ছোঁয়ায় বিদ্যালয়গুলো যে কারো দৃষ্টি কাড়ে। অনেক স্কুলের আঙ্গিনায় স্থাপন করা হয়েছে শহীদ মিনার। চুনঘর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দেয়াল যেন রংধনুর সাতরঙে রাঙ্গানো। মাঝে মাঝে বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলামের আকা ছবি। শিক্ষার্থীরা স্কুলে প্রবেশের আগে এসব ছবির মানুষের সাথে পরিচিত হচ্ছে। আমির ছলফু সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, জগন্নাথপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিশু শ্রেণিতে প্রবেশ করলে মন জুড়িয়ে যায়। কক্ষটি সাজানো হয়েছে নানা ধরনের খেলনা আর নানা উপকরণে। প্রাক প্রাথমিক শিক্ষার জন্য শিশুদের কাছে আকর্ষণীয় করতে নেয়া হয়েছে এই উদ্যোগ। মির্জাপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আব্দুল হাসিম, রাবেয়া আদর্শ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আব্দুস সালাম, কবিরাজী রসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক পারভেজ আহমদের সাথে কথা বলে জানা যায়, শিশুদের আকর্ষণ করতেই এই উদ্যোগ নেন কুলাউড়া উপজেলা শিক্ষা অফিসার মোঃ শরিফ উল ইসলাম। বিষয়টি যে শিশু মনে এতটা সাড়া জাগাবে তা ছিলো ধারণার বাইরে।
বিদ্যালয়টি এভাবে সাজাতে মানে রঙ্গিন করতে সরকারি কোন অর্থের প্রয়োজন হয়নি। বিদ্যালয়ের শিক্ষক, পরিচালনা কমিটি আর এলাকার মানুষের সমন্বয়ে আর ইচ্ছায় এই রঙিন, সুন্দর ও মনকাড়া একটি বিদ্যালয়ে রূপ লাভ করেছে। প্রাক প্রাথমিকের শিশু শ্রেণির খেলনা আর উপকরণের জন্য রয়েছে সরকারি বরাদ্দ। জানা যায়, কুলাউড়া উপজেলার ১৯২টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মধ্যে ১৮৫টি স্কুলের রঙ্গের কাজ শেষ হয়েছে। বাকি যে স্কুলগুলা রয়েছে সেগুলোর ভবন না থাকায় করা সম্ভব হয়নি। এ ব্যাপারে কুলাউড়া উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মোঃ শরিফ উল ইসলাম জানান, যে কোন রঙ্গিন জিনিস শিশুদের আকৃষ্ট করে। একটা রঙ্গিন স্কুল হলে শিশুরা আনন্দিত হবে। বাইরে থেকে যখন স্কুলটি শিশুর কাছে আকর্ষণীয় লাগবে তখন সে স্কুলে আসতে আগ্রহী হবে। এটা করার পর শিশুরা আনন্দে তাদের মনের অনুভূতি প্রকাশ করেছে। তাছাড়া শিশু শ্রেণিতে এসে খেলনা পেয়ে শিশুদের স্কুলের প্রতি আগ্রহ বেড়েছে। তিনি আরও জানান, বিদ্যালয়কে রঙ্গিন করতে আসলে খুব বেশি টাকা ব্যয় হয় না। আমি শিক্ষকদের বিষয়টা বলার পর তারাই বাকি কাজটুকু করেছে। এতে একদিক থেকে যেমন বিদ্যালয়টি দৃষ্টিনন্দন হলো তেমনি শিশুদেরকেও আকর্ষণ করালো। বিদ্যালয়ে এখন শিশুরা আসে আনন্দ চিত্তে। বিষয়টি অন্য উপজেলাও অনুকরণ করছে। ফলে একটা সময় হয়তো পুরো জেলার স্কুলগুলো এভাবে সৌন্দর্য্যমন্ডিত হবে।
মন্তব্য করুন