কুলাউড়ার রাজু ঢাবির ব্যবসা অনুষদ ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি হলেন
এম. মছব্বির আলী॥ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবসা অনুষদ ছাত্রলীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটিতে সহ-সভাপতি হিসেবে স্থান পেয়েছেন কুলাউড়ার চা শ্রমিকপুত্র রাজু দেশোয়ারা।
৫ নভেম্বর শুক্রবার পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা করা হলে এ তথ্য জানা যায়। দৃষ্টিহীন এক চোঁখ আর চরম দারিদ্রতাকে জয় করা রাজু মৌলভীবাজার জেলার কুলাউড়া উপজেলার শমসেরনগর গ্রামের চা শ্রমিক মুক্তিযোদ্ধা শ্রীজনম দেশোয়ারার ছেলে।
এসএসসিতে রাজুর ফলাফল ছিল জিপিএ ৫ এবং এইচএসসিতে ৪.৬০। নটরডেম থেকে উচ্চমাধ্যমিক শেষ করে দেশের সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ব্যবসা প্রশাসনে নিজ যোগ্যতায় ভর্তি হন রাজু। বর্তমানে তৃতীয় বর্ষে পড়া রাজু প্রথম বর্ষে প্রথম শ্রেণীতে উত্তীর্ণ হয়েছিলেন।
তিনি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে বৃত্তিপ্রাপ্ত স্নাতক ও স্নাতকোত্তর পর্যায়ে অধ্যয়নরত বিভিন্ন ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর শিক্ষার্থীর বৃত্তি প্রদান অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রীর উপস্থিতিতে বক্তব্য রাখেন। এতে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী রাজুকে ব্যক্তিগত ভাবে পাশে থাকার আশ্বাস দেন।
ইতোমধ্যে রাজু প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে মালয়েশিয়া সফর করে এসেছেন। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রাজুকে স্নেহ করেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিবেটিং সোসাইটিতেও প্রতিনিধিত্ব করছেন রাজু। এই সংগঠনের বর্তমান যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক তিনি। এছাড়াও যুক্ত আছেন বিভিন্ন সামাজিক-সাংস্কৃতিক কর্মকান্ডে। স্বপ্নটা অনেক বড় তার।
এক চোঁখের আলোতেই দেশসেবার স্বপ্ন দেখা রাজু দেশোয়ারা স্কুল-কলেজের গ-ি পেরিয়ে পড়ছেন দেশের সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। দেখছেন দেশসেবার স্বপ্ন। রাজু জানান, তার মুক্তিযোদ্ধা বাবা এখনও কুলাউড়ার শমসেরনগর গ্রামের ছোট একটি চা বাগানে দৈনিক ৮৫ টাকা মজুরিতে কাজ করেন। চার ভাইবোনের মধ্যে সবার ছোট রাজু একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের সহায়তায় কুপি বাতির আলোয় পড়ে স্কুলের গ-ি পার হন। এরপর ‘কাজের বিনিময়ে শিক্ষা’ কর্মসূচির আওতায় ঢাকার নটরডেম কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পাস করেন। নটরডেম কলেজে বাগান পরিচর্যা করে তিনি লেখাপাড়ার খরচ চালিয়েছেন। ব্যবসায় প্রশাসনের তৃতীয় বর্ষের ছাত্র রাজু এখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ডিবেটিং সোসাইটিতে জগন্নাথ হলের প্রতিনিধি ছিলেন। রাজু জানালেন, বাবার মতো তার বড় ভাইও চা শ্রমিক। “অন্যের বই আর নোট ধার করে এবং মেজো ভাইয়ের পাঠানো মাসিক এক হাজার টাকায় আমার পড়ালেখা চলছে। কিন্তু ভাইয়ের পক্ষে আমার পড়ালেখার খরচ বহন করা বেশ কষ্টকর হয়ে পড়ছে,” বলেন প্রথম বর্ষে প্রথম শ্রেণিতে উত্তীর্ণ রাজু। স্রোতের বিপরীতে এগিয়ে যাওয়া রাজু তারপরও দৃঢ় মনোবল নিয়ে শোনান আশার কথা। “জন্মের পর বিদ্যুৎ, সেনিটেশন, চিকিৎসার কোনো সুযোগ-সুবিধা না পেলেও আমি কোনদিন পিছিয়ে পড়তে চাইনি। আমি বা চোঁখে দেখতে পাই না। তবুও আমি আমার এক চোঁখের আলোয় একজন আলোকিত মানুষ হতে চাই। দেশের জন্য কাজ করতে চাই।”
সহ-সভাপতি মনোনীত হওয়ায় কৃতজ্ঞতা জানান বাংলাদেশ ছাত্রলীগ কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি সাইফুর রহমান সোহাগ ও সাধারণ সম্পাদক এস এম জাকির হোসাইনকে। বাংলাদেশ ছাত্রলীগ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সভাপতি আবিদ আল হাসান ও সাধারন সম্পাদক মোতাহার হোসেন প্রিন্সকে ও ধন্যবাদ জানিয়েছেন রাজু।
মন্তব্য করুন