কুলাউড়ার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের দেড় হাজার শিক্ষকের উৎসে কর প্রদান নিয়ে জটিলতা
কুলাউড়া অফিস॥ মৌলভীবাজার আয়কর বিভাগের একটি অস্বচ্ছ নির্দেশনার কারণে কুলাউড়া উপজেলার ৫৭টি বেসরকারি কলেজ ও মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রায় দেড় হাজার শিক্ষক কর্মচারীর গত ডিসেম্বর মাসের বেতন ভাতা পাওয়া নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। এনিয়ে বিক্ষুব্ধ শিক্ষক কর্মচারীদের সাথে স্থানীয় জনতা ব্যাংক কর্তৃপক্ষের মধ্যে প্রতিনিয়ত ঝামেলার উদ্রেক হয়েছে। শিক্ষকরা আয়কর বিভাগের অমানবিক নির্দেশপত্র বাতিলের দাবি জানিয়েছেন। কুলাউড়া জনতা ব্যাংকের সামনে সমবেত হয়ে বিক্ষুব্ধ শতাধিক শিক্ষকরা ১০ জানুয়ারী মঙ্গলবার অভিযোগ করেন, সরকারের জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের নির্দেশ অনুসারে ২২ হাজার টাকা বা তদুর্ধ্ব বেতন প্রাপ্ত শিক্ষকরা গত বছরের ৩০ নভেম্বরের মধ্যে ২০১৬-১৬ অর্থবছরের বাৎসরিক রিটার্ণ ও আয়কর মৌলভীবাজার কর অফিসে জমা করেছেন। অথচ একমাস পর ডিসেম্বর ২০১৬ মাসের বেতন ব্যাংক থেকে তুলতে এলে জনতা ব্যাংক কুলাউড়া শাখার ম্যানেজার জানান, আয়করদাতা শিক্ষক কর্মচারীদের ডিসেম্বর মাসের বেতন থেকে ৬ মাসের উৎস কর (জুলাই- ডিসেম্বর’১৬) জমা না দিলে তাদের মাসিক বেতন দেয়া সম্ভব হবে না। এব্যাপারে জনতা ব্যাংক কুলাউড়া শাখার ম্যানেজার তাহমিনা বেগম জানান, মৌলভীবাজার উপকর কমিশনারের কার্যালয় থেকে আসা নির্দেশপত্র (নথি নং এম-১/সা-১৩ (মৌল:) ২০১৬-১০১৭/২১৬ তাং ২২/১১/১৬) মোতাবেক এ শাখার অধীনস্থ বেসরকারি কলেজ ও মাধ্যমিক শিক্ষক কর্মচারীদের ডিসেম্বর’১৬ মাসের বেতন থেকে ৬ মাসের উৎস কর কর্তণ করে দেয়ার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। শিক্ষকরা তাদের বেতন বিল থেকে ৬ মাসের উৎস কর বেতন স্কেল অনুসারে (১৫০০-২০০০) টাকা কর্তণ করে ব্যাংকে জমা না দিলে ব্যাংক কর্তৃপক্ষ শিক্ষকদের স্ব-স্ব হিসাব থেকে বলপূর্বক এ উৎসে কর কর্তণ করতে পারে না। তাই শিক্ষকরা উৎসে কর কর্তণ করতে পারে না। তাই শিক্ষকদের উৎসে কর কর্তণ করে নতুন বেতন বিল জমা দেয়ার জন্য আমরা জানিয়েছি। এতে শিক্ষকরা আমাদের উপর ক্ষুব্ধ উঠেছেন। সহকারি অধ্যাপক আবু হানিফ, প্রধান শিক্ষক হুমায়ুন কবির, শিক্ষক আব্দুল রশিদ অভিযোগ করেন, আমরা সরকারি নির্দেশনা অনুসারে যথাসময়ে ২০১৬-১৭ অর্থ বছরের বাৎসরিক রিটার্ন ও আয়কর জমা করে ব্যাংকে তার প্রমাণপত্র জমা তার করেছি। কিন্তু পরের মাসের (ডিসেম্বর ’১৬) বেতন থেকে পুনরায় ৬ মাসের উৎসে কর কর্তণের নির্দেশ আমাদের কাছে ‘মরার উপর খরার ঘা’ মতো মনে হচ্ছে। বেসরকারি শিক্ষক কর্মচারি কত টাকা বেতন পান। প্রতিমাসে ২২-২৫ হাজার টাকা। অথচ এ টাকার উপর কর ধার্য্য করায় আমরা আয়কর দিতে গিয়ে নানাভাবে হয়রানির শিকার হচ্ছি। কারণ একজন শিক্ষককে নূন্যতম আয়কর ৩ হাজার টাকা সাথে বাৎসরিক রিটার্ণলিখে জমা দিতে আরও ৪-৫ হাজার অতিরিক্ত টাকা খরচ করতে হচ্ছে। অথচ বড় বড় ব্যবসায়ী পেশাজীবিরা মাসে লাখ লাখ টাকা আয় করে সে অনুপাতে কর দিচ্ছেন কি? আমরা সমাজের সচেতন নাগরিক হিসেবে স্বপ্রনোদিতভাবে কর দিয়েও কেন হয়রাণির শিকার হচ্ছি? আয়কর বিভাগ আমাদের বেতন থেকে উৎসে কর আরও ৬ মাস পরে নিতে পারতেন। এতে আমাদের মত স্বল্প আয়ের লোকজনের উপর চাপটা কিছু কম হতো এবং আয়কর বিভাগ সম্পর্কে আমাদের মধ্যে ভীতি সৃষ্টি হতো না।
শিক্ষক লোকমান হোসেন বলেন, সরকারের ভাল উদ্যোগে শিক্ষকরা স্বাগত জানিয়েছে কিন্তু সেটাকে প্রশ্নবিদ্ধ করার জন্য আয়কর বিভাগে কিছু লোক নিজেদের সাফল্য দেখানোর নামে স্বল্প আয়ের শিক্ষকদের মধ্যে আয়কর ভীতি সৃষ্টির জন্য এ ধরনের বিতর্কিত সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন। শিক্ষকদের অভিযোগ সম্পর্কে মৌলভীবাজারের উপকর কমিশনার মিজানুর রহমান সরদার জানান, বেসরকারি শিক্ষক কর্মচারিদের ২০১৬-১৭ অর্থবছরে আয়কর রিটার্ণ ও বাৎসরিক আয়কর জমা দেয়ার পরও বিগত জুলাই- ডিসেম্বর ’১৬ এ ৬ মাসের উৎসে কর জমা দিতে হবে। এটা জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের নিদের্শে করা হচ্ছে। এব্যাপারে আমাদের কিছু করার ক্ষমতা নেই। তিনি সিলেট অঞ্চলের কর কমিশনারের কাছ থেকে বিস্তারিত জানার পরামর্শ দেন।
মন্তব্য করুন