কুলাউড়ার হিঙ্গাজিয়া উচ্চ বিদ্যালয়- ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে বিদ্যালয়ের অর্থ হরিলুটের ঘটনা আভ্যন্তরিণ তদন্তে প্রমানিত

November 23, 2016,

স্টাফ রিপোর্টার॥ কুলাউড়া উপজেলার হিঙ্গাজিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক আতাউর রহমানের বিরুদ্ধে অর্থ হরিলুটের ঘটনা আভ্যন্তরিণ তদন্তে প্রমানিত হয়েছে। মাত্র ১৯ মাসের দায়িত্বকালীন সময়ে বিদ্যালয় ৬ লক্ষ টাকা দেনাগ্রস্থ এবং ওই সময়ে তিনি ৫ লক্ষ টাকা প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে আত্মসাৎ করেন।
হিঙ্গাজিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শরদিন্দু ভট্রাচার্য্য ২০১৫ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে ক্যান্সার আক্রান্ত হন। প্রধান শিক্ষক ঢাকায় হাসপাতালে চিকিৎসাধীন থাকা অবস্থায় মার্চ মাসে সহকারি প্রধান শিক্ষক আতাউর রহমান প্রভাব খাটিয়ে বিদ্যালয়ের হিসাব পরিচালনার দায়িত্ব নেন। দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকে নামে বেনামে, ভাউচার বিহীন ও ভুয়া ভাউচারে শুরু হয় বিদ্যালয়ের তহবিলে আগ্রাসন। বর্তমানে বিদ্যালয়ের শিক্ষক কর্মচারীদের ১২ মাসের বেতন ভাতা, প্রভিডেন্ট ফান্ড, ২ বছরের বিদ্যুৎ বিল, প্রশ্নপত্র মুদ্রণ খরচ, পরীক্ষার কাগজের বিলসহ বিদ্যালয়ের দেনা প্রায় ৬ লক্ষ টাকা।
এমতাস্থায় বিদ্যালয়ের সিনিয়র শিক্ষক রনবাবু মিংহের নেতৃত্বে ৫ সদস্যের তদন্ত কমিটি দ্বারা বিদ্যালয় তহবিলের ২০১৬ সালে জুলাই মাস পর্যন্ত ১৫ মাসের তদন্ত (অডিট) করানো হয়। তদন্ত (অডিট) কমিটির অন্যান্য সদস্যরা হলেন হাজী আব্দুল আজিজ, আব্দুল মোক্তাদির, মো. আব্দুল হান্নান ও মো. আকমল আলী।
ভাপরপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক আতাউর রহমানের দায়িত্বকালীন সময়ে তিনি প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে ৫ লক্ষ টাকা আত্মসাৎ করেন। এছাড়া বিদ্যালয়ের মৎস্য খামারটি ৩০ হাজার টাকায় নিলামে দিয়ে সমস্ত টাকা আত্মসাৎ করেন। এছাড়া আগস্ট, সেপ্টেম্বর ও অক্টোবর মাসসহ ত্রৈমাসিক অডিট করানোর জন্য কমিটির সভায় সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হলেও সেই সিদ্ধান্ত তিনি রেজ্যুলেশনভুক্ত করেননি এবং অডিটও করাননি। এই ৩ মাসে তিনি ব্যাংকে জমা ২ লাখ সাড়ে ১৭ হাজার টাকা উত্তোলন করে আত্মসাৎ করেন। ২০১৬ সালের মার্চ মাসে প্রধান শিক্ষক শরদিন্দু ভট্রাচার্য্য অবসর গ্রহণের পর এভাবেই ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক আতাউর রহমানের আত্মসাৎকৃত টাকার পরিমান ৬-৭ লাখ টাকা হবে।
আভ্যন্তরিণ তদন্ত কমিটি ১৩ পাতার একটি তদন্ত রিপোর্ট গত ২২ সেপ্টেম্বর বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি বরাবরে দাখিল করেন। সেই তদন্ত প্রতিবেদনটি ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের মাধ্যমে দাখিল করেন।
বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক নিয়োগ প্রক্রিয়াধীন। ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক নিজে এবং তার পরিবারের প্রতিটি সদস্য এলাকায় প্রভাব বিস্তার করে প্রধান শিক্ষকের পদ দখলের পাঁয়তারা করছেন। মাত্র ১৮-১৯ মাসে যিনি বিদ্যালয় তহবিলের বারোটা বাজিয়েছেন তিনি প্রধান শিক্ষক হলে বিদ্যালয়ের অস্থিত্ব হুমকির মুখে পড়বে বলে জানান এলাকাবাসী।
অভিযুক্ত ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক আতাউর রহমানের সাথে এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তিনি সংবাদ প্রকাশ না করতে অনুরোধ করেন। তিনি বিদ্যালয়ে গিয়ে ঘটনা তদন্ত করে দেখতে বলেন। তবে তার বিরুদ্ধে অভ্যন্তরিণ তদন্ত কমিটি যে রিপোর্ট দিয়েছে তা ভুয়া। অর্থ আত্মসাৎ বড় ধরনের কিছু নয়। তবে তার কাছে প্রশ্নপত্র ছাপানো বাবত ৩১ হাজার ও অন্যান্য খাতে ৩০ হাজার টাকা বিদ্যালয়ের পাওনা আছে বলে স্বীকার করেন।
এব্যাপারে বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটি সভাপতি ও ব্রাহ্মণব্রাজার ইউনিয়নের মেম্বার ফজলুর রহমান জানান, আমরা অডিট কমিটি করে দিছি। সেই রিপোর্টও আমাদের কাছে এসেছে। বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভায় রিপোর্ট ব্যাপক আলোচনা হয়েছে। অডিট রিপোর্টে অনেক ভুয়া বিল ভাউচার ধরা পড়েছে। কমিটির আগামী মিটিংয়ে এ বিষয়ে চুড়ান্ত সিদ্ধান্ত হবে।

সংবাদটি শেয়ার করতে নিচের “আপনার প্রিয় শেয়ার বাটনটিতে ক্লিক করুন”

মন্তব্য করুন

Social Media Auto Publish Powered By : XYZScripts.com