কুলাউড়ার ৬ ইউনিয়নে আগামীকাল নির্বাচন
কুলাউড়া অফিস॥ সকল প্রস্তুতি শেষে আগামীকাল ৭ মে শনিবার কুলাউড়া উপজেলার ৬টি ইউনিয়নে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। ইউনিয়নগুলো হলো, কর্মধা, পৃথিমপাশা, হাজীপুর, টিলাগাঁও, ভাটেরা ও শরিফপুর। শেষ মুহুর্তের প্রচারনাকে কেন্দ্র করে সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত ভোটারদের দ্বারে দ্বারে ঘুরে ভোট প্রার্থনার পাশাপাশি দোয়া ও আশির্বাদ কামনা করেছেন প্রার্থীরা। এই ৬ ইউনিয়নে চেয়ারম্যান পদে ৩৮ জন প্রার্থী নির্বাচন করছেন। কয়েকটি ইউনিয়নে আওয়ামী লীগ বিএনপি ছাড়াও দলীয় বিদ্রোহী ও স্বতন্ত্র প্রার্থীরা ব্যাপক আলোচনায় রয়েছেন। দলীয় কোন্দল ও প্রার্থী নির্ধারণে তৃণমূলের মতামত উপেক্ষিত হওয়ায় ৩/৪টি ইউনিয়নে বেকায়দায় পড়েছেন দলীয় প্রতিকের প্রার্থীরা। দুটিতে আওয়ামী লীগ ও দুটিতে বিএনপির প্রার্থী তাদের অস্থিত্ব রক্ষার্থে প্রাণপন চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। অন্যদিকে ৩ থেকে ৪ টি ইউনিয়নে স্বতন্ত্র ও বিদ্্েরাহীরা সুবিধাজনক অবস্থানে রয়েছে। শেষতক ৬ ইউনিয়নের মধ্যে বিএনপি ও আওয়ামী লীগ ২ থেকে ৩ টিতে এবং স্বতন্ত্র ও বিদ্রোহীরা ৩ থেকে ৪ টি ইউনিয়নে জয়ের সম্ভাবনা রয়েছে।
৬ ইউনিয়নের ৫৯ টি কেন্দ্রে ১ লক্ষ ৩ হাজার ৮শত ৭৭ জন ভোটার তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করবেন।
ভাটেরা ইউনিয়নে ৭জন প্রার্থী চেয়ারম্যান পদে লড়ছেন। ধানের শীষ প্রতিক নিয়ে বর্তমান চেয়ারম্যান হাজী সিরাজ মিয়া অনেকটা নিস্ক্রীয়। তাই নৌকা প্রতিক নিয়ে সৈয়দ এ কে এম নজরুল ইসলাম, স্বতন্ত্র প্রার্থী যুক্তরাষ্ট্র ওলামা লীগের সভাপতি আলহাজ্ব মাওলানা ছয়ফুল আলম সিদ্দিকী ও জাপার আকমল হোসেন তালুকদারের মধ্যে ত্রিমুখি লড়াইয়ের সম্ভাবনা রয়েছে। এছাড়াও স্বতন্ত্র প্রার্থী আজিজ আহমদ টুটু ও কমর উদ্দিন এবং জাসদের জামাল আহমদ খাঁন মাঠে তৎপর রয়েছেন। এই ইউনিয়নে সবচেয়ে বেশি আলোচনায় স্বতন্ত্র প্রার্থী মাওলানা সাইফুল আলম সিদ্দিকী। আমেরিকা প্রবাসী এই প্রার্থী বিগত দুটি নির্বাচনে অংশ নেন। আওয়ামী লীগের দলীয় কোন্দল একাংশের সমর্থন এবাং স্থানীয় ভোটারদের পছন্দের তালিকায় তিনি এগিয়ে। তবে আওয়ামী লীগের প্রার্থী সৈয়দ একেএম নজরুল ইসলামের বিজয়ের সম্ভাবনা উড়িয়ে দেয়া যায় না। এই ইউনিয়নে আওয়ামী লীগ প্রার্থী সৈয়দ এ কে এম নজরুল ইসলাম ও স্বতন্ত্র প্রার্থী সাইফুল আলম সিদ্দিকী পরস্পরের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছেন। তাছাড়া বাকি প্রার্থীরা শুধমাত্র আওয়ামী লীগ প্রার্থী সৈয়দ একেএম নজরুল ইসলামের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছেন। সকল প্রার্থীরা অভিযোগ করেন, আওয়ামী লীগ প্রার্থী সৈয়দ একেএম নজরুল ইসলাম নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘণ করে মিছিল মিটিং ও প্রচারণা চালাচ্ছেন। স্কুলের শিক্ষার্থীদের এনে তিনি মিছিল করাচ্ছেন। বহিরাগত লোকদিয়ে হোন্ডা মিছিল করে এলাকায় আতঙ্ক ছড়াচ্ছেন। তিনি কাউকে তোয়াক্কা না করে পেশিশক্তির ব্যবহার করে মানুষকে হুমকি ধামকি দিচ্ছেন। স্বতন্ত্র প্রার্থী সাইফুল আলম সিদ্দিকী ও জাতীয় পার্টির প্রার্থী আকমল হোসেন তালুকদার অভিযোগ করেন, আওয়ামী লীগের প্রার্থী ঘোষণা দিয়েছেন তার ভোট গণনা হবে এক হাজার এক থেকে। আর সবার ভোট গণনা হবে এক থেকে। এছাড়া বহিরাগত ভাড়াটে লোক এনে তিনি কেন্দ্র দখলের পরিকল্পনা করছেন। ভাটেরা ইউনিয়নের সবক’টি কেন্দ্রে অতিরিক্ত নিরাপত্তা জোরদার করার দাবি বাকি ৭ প্রার্থীর। এই ইউনিয়নে মোট ভোটার ১৯ হাজার ৭৩২জন।
টিলাগাঁও ইউনিয়নে ৭জন প্রার্থী চেয়ারম্যান পদে লড়ছেন। তারা হলেন, সাবেক চেয়ারম্যান আব্দুল মালিক (স্বতন্ত্র), বিএনপি বিদ্রোহী সৈয়দ গোলাম রহমান আজমল ও আওয়ামী লীগের আব্দুল মালিকের মধ্যে তুমুল লড়াই হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এছাড়াও বিএনপির মশাহিদ আলী, জাপার সেলিম উদ্দিন তালুকদার, জাসদ প্রার্থী চা শ্রমিক নেতা জ্ঞান শংকর গৌড় এবং আল ইসলাহর ডাক্তার কেরামত আলী নিজের অবস্থান জানান দিতে প্রানপন চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। এই ইউনিয়নে মোট ভোটার ২০ হাজার ১২৬ জন।
কর্মধা ইউনিয়নে ৪ চেয়ারম্যান প্রার্থীর মধ্যে দুই বারের নির্বাচিত বর্তমান চেয়ারম্যান আব্দুস সহিদ বাবুল (স্বতন্ত্র) ও উপজেলা আওয়ামীলীগের সদস্য এম এ রহমান আতিকের মধ্যে তুমুল লড়াইয়ের সম্ভাবনা রয়েছে। অপর দুই প্রার্থী বিএনপি’র আব্দুস সালাম ও জাপার সোহাগ মিয়া নির্বাচনে অংশ নিলেও তাদেরকে নিয়ে ভোটারদের মধ্যে তেমন কোন আগ্রহ নেই। সেক্ষেত্রে দীর্ঘ অভিজ্ঞতা ও ব্যক্তি ইমেজকে কাজে লাগিয়ে বাবুল শেষতক টানা তৃতীয়বারের মতো চেয়ারম্যান নির্বাচিত হতে পারেন। চা শ্রমিকদের ভোট একাধারে নৌকার পালে গেলে বিজয়ের সম্ভাবনা রয়েছে আতিকেরও। এই ইউনিয়নে ২১ হাজার ৯১০ ভোটার রয়েছে।
পৃথিমপাশা ইউনিয়নে ৮ চেয়ারম্যান প্রার্থীর মধ্যে দুই বারের নির্বাচিত বর্তমান চেয়ারম্যান আব্দুল লতিফ ও গত নির্বাচনের নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বি নবাব আলী বাকর খান হাসনাইন কিছুটা এগিয়ে থাকলেও শেষমেশ ত্রিমুখি লড়াইয়ের সম্ভাবনা রয়েছে। সেক্ষেত্রে বিএনপি প্রার্থী নবাব আলী তাকী খান ও আওয়ামী লীগের আব্দুল মান্নানের মধ্যে যে কেউ মূল লড়াইয়ে আসতে পারেন। এছাড়াও আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী জুবায়ের আহমদ জুয়েল, স্বতন্ত্র প্রার্থী এম. জিমিউর রহমান চৌধুরী (ফুল মিয়া), জাপার ছয়ফুল হোসেন চৌধুরী হাসান, স্বতন্ত্র প্রার্থী আশরাফ আলী চিনু রয়েছেন ভোট যুদ্ধে। এই ইউনিয়নে মোট ভোটার ১৯ হাজার ৩৭৮ জন।
হাজীপুর ইউনিয়নে ৬জন প্রার্থী চেয়ারম্যান পদে লড়ছেন। তারা হলেন, বিএনপির প্রার্থী বর্তমান চেয়ারম্যান মাহমুদ আলী ও মোটরসাইকেল প্রতিক নিয়ে কুলাউড়া প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি আব্দুল বাছিত বাচ্চু শক্ত অবস্থানে রয়েছেন। আওয়ামীলীগের ওয়াদুদ বক্স, আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী মাহমুদ আলী ফটিক, জাপার কয়ছর মিয়া ও স্বতন্ত্র প্রার্থী নাজিম উদ্দিন জোর প্রচারনা চালিয়ে যাচ্ছেন। শেষ পর্যন্ত আওয়ামী লীগ ও আওয়ামীলীগ বিদ্রোহীর মধ্যে যে কেউ তাদের পথের কাঁটা হয়ে দাড়াতে পারেন। এই ইউনিয়নে মোট ভোটার ১৭ হাজার ৮৪৭ জন।
শরীফপুর ইউনিয়নে ৬জন প্রার্থী চেয়ারম্যান পদে লড়ছেন। আওয়ামী লীগ প্রার্থী বর্তমান চেয়ারম্যান চিনু মিয়া দলীয় বিদ্রোহী ও নিজের বিগত দিনের বিতর্কিত কর্মকান্ডের কারনে রয়েছেন অনেকটাই লাইমলাইটের বাহিরে। সেক্ষেত্রে বিএনপির একক প্রার্থী জুনাব আলী অনেকটা সুবিধাজনক অবস্থানে রয়েছেন। ব্যক্তি ইমেজকে কাজে লাগিয়ে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী খলিলুর রহমান খলিল বিএনপির প্রার্থীর সাথে চুড়ান্ত লড়াই হতে পারে বলে অভিমত সচেতন ভোটারের। এছাড়াও সাবেক মেম্বার চা শ্রমিক নেতা অনিল বারাইক, স্বতন্ত্র প্রার্থী তাজুল ইসলাম ও আব্দুল আহাদ ভোটের মাঠে চষে বেড়াচ্ছেন। এই ইউনিয়নে মোট ভোটার ১৪ হাজার ৮৪৪ জন।
মন্তব্য করুন