কুলাউড়ার ৭ ইউনিয়নে বিদ্রোহীদের সাথে নৌকা আর ধানের শীষের লড়াই হবে
বিশেষ প্রতিনিধি॥ কুলাউড়া উপজেলার ৭টি ইউনিয়নে ২৩ এপ্রিল শনিবার ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। এই ৭টি ইউনিয়নে ৩৩ জন চেয়ারম্যান প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। চুড়ান্ত লড়াই হবে বিদ্রোহীদের সাথে নৌকা আর ধানের শীষের লড়াই। এই ৭ ইউনিয়নে ভোটার ১ লাখ ৫ হাজার ৪১৯ জন।
কুলাউড়ায় যে ৭টি ইউনিয়নে নির্বাচন হবে সেগুলো হলো-বরমচাল, ভূকশিমইল, জয়চন্ডী, ব্রাহ্মণবাজার, কাদিপুর, কুলাউড়া সদর, ও রাউৎগাঁও। ২১ এপ্রিল বৃহস্পতিবার শেষ হয়েছে প্রচার প্রচারণা। এখন বাকি শুধু ভোট প্রদান ও গণনা। কয়েকটি ইউনিয়নে আওয়ামীলীগ বিএনপি ছাড়াও দলীয় বিদ্রোহী ও স্বতন্ত্র প্রার্থীরা আলোচনায় রয়েছেন। দলীয় কোন্দল ও প্রার্থী নির্ধারণে তৃণমূলের মতামত উপেক্ষিত হওয়ায় ৪-৫টি ইউনিয়নে বেকায়দায় পড়তে পারেন দলীয় প্রতিকের প্রার্থীরা। দুটিতে আওয়ামী লীগ ও দুটিতে বিএনপির প্রার্থী তাদের অস্থিত্ব রক্ষার্থে প্রাণপন চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। অন্যদিকে ২ থেকে ৩টি ইউনিয়নে স্বতন্ত্র ও বিদ্্েরাহীরা সুবিধাজনক অবস্থানে রয়েছে।
১নং বরমচাল ইউনিয়নে ৪ প্রার্থীর মধ্যে উপজেলা আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহ সভাপতি ও সাবেক চেয়ারম্যান আব্দুল আহবাব চৌধুরী শাহজাহান ও বিএনপি বিদ্্েরাহী বর্তমান চেয়ারম্যান ইছহাক চৌধুরী ইমরানের মধ্যে লড়াই হবে দ্বিমুখী। সম্পর্কে নানানাতির লড়াই হবে জম্পেস। বিএনপির প্রার্থী আব্দুল মোক্তাদির মুক্তার ধানের শীষের মর্যাদা কতটা রক্ষা করতে পারেন সেটাই দেখার বিষয়। তবে শেষতক আওয়ামী লীগ প্রার্থীর পথের কাটা হয়ে দাঁড়াতে পারেন বিদ্রোহী প্রার্থী ছাত্রলীগ নেতা জামাল হোসেন।
২নং ভূকশিমইল ইউনিয়নে ৩ প্রার্থীর মধ্যে উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও বর্তমান চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলাম রেণু ও বিএনপি প্রার্থী আজিজুর রহমান মনির মাস্টার দু’জনই রয়েছেন শক্ত অবস্থানে। এ ইউনিয়নে স্বতন্ত্র (জামায়াত) প্রার্থী মাওলানা আতিকুর রহমানের ভোটের পরিমান কারো জন্য আশির্বাদ ও কারো জন্য সর্বনাশ হয়ে দাঁড়াতে পারে। তবে এলাকায় গুঞ্জন রয়েছে জামায়াতের এই প্রার্থীকে নিজের সুবিধার জন্য প্রার্থী করেছেন রফিকুল ইসলাম রেনু। জামায়াত-আওয়ামী লীগের সখ্যতা সবচেয়ে বেশি আলোচিত হচ্ছে এই ইউনিয়নে। তবে শেষ চমক দেখাতে পারে ধানের শীষ। কেননা এই ইউনিয়নে আওয়ামী এন্ট্রি ভোট বেশি।
৪নং জয়চন্ডী ইউনিয়নে ৪ প্রার্থীর মধ্যে স্বতন্ত্র প্রার্থী বর্তমান চেয়ারম্যান কমরউদ্দিন আহমদ কমরু ও আওয়ামী লীগ প্রার্থী আব্দুর রব মাহাবুবের মধ্যে হবে মূল ভোটযুদ্ধ। দীর্ঘ অভিজ্ঞতা ও ব্যক্তি ইমেজকে কাজে লাগিয়ে কমরু জয়ের পথে এগিয়ে থাকলেও শেষতক চা শ্রমিকদের ভোটই জয় পরাজয় নির্ধারণ করতে ভুমিকা রাখতে পারে। এছাড়াও নিজেদের ইজ্জত রক্ষার লড়াইয়ে মাঠে চষে বেড়াচ্ছেন বিএনপি প্রার্থী হাজি রুমেল খান ও আল ইসলাহ প্রার্থী হাজি আব্দুল জলিল।
৫নং ব্রাহ্মণবাজার ইউনিয়নে ৬জন প্রার্থী রয়েছেন। এ ইউনিয়নে ত্রিমুখী লড়াইয়ের সম্ভাবনা রয়েছে। এখানে বর্তমান চেয়ারম্যান রফিক আহমদ (বিএনপি বিদ্্েরাহী), আওয়ামী লীগ মমদুদ হোসেন আওয়ামী লীগ বিদ্রোহী মুহিবুর রহমানের মধ্যে হবে মুল লড়াই। বদরুল হোসেন খান (বিএনপি) জাহাঙ্গীর হোসেন এলাইছ (স্বতন্ত্র) ও জয়নাল আবেদীন খান (জাপা) প্রাণপন চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।
৬নং কাদিপুর ইউনিয়নে ৭জন প্রার্থী তৎপরতা চালালেও বিএনপির হাবিবুর রহমান ছালাম, স্বতন্ত্র প্রার্থী আলমগীর আলম সাহান ও মানিক আহমদ রয়েছেন আলোচনার কেন্দ্র বিন্দুতে। ক্ষমতাসীন দলের প্রার্থী সেলিম আহমেদ নতুন মুখ হওয়ায় মূল লড়াইয়ে খুব একটা সুবিধা করতে পারছেন না। তাছাড়া দলীয় উল্লেখযোগ্য কোন নেতা কর্মীকে নৌকার পক্ষে প্রকাশ্যে কাজ করতে দেখা যায়নি এ ইউনিয়নে। এছাড়াও নিজেদের অবস্থান জানান দিতে মাঠে চষে বেড়াচ্ছেন মাওলানা এমদাদুল হক (খেলাফত মজলিস), জিয়াউল ইসলাম মুহিত (আল ইসলাহ) ও ছালিক আহমদ নিলয় (স্বতন্ত্র)।
৭নং সদর ইউনিয়নে ৫জন প্রার্থী ভোটের মাঠে জোর প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন। এ ইউনিয়নে চতুর্মুখী লড়াইয়ের সম্ভাবনা রয়েছে। এখানে আওয়ামীলীগের লুৎফুর রহমান চৌধুরী, বিএনপির সুফিয়ান আহমদ, স্বতন্ত্র প্রার্থী নার্গিস আক্তার বুবলি ও বিএনপি বিদ্রোহী জুবের আহমদ খান রয়েছেন আলোচনায়। বিএনপির আরেক বিদ্রোহী প্রার্থী আকমল হোসেন শুভ প্রাণপন চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।
৮নং রাউৎগাঁও ইউনিয়নে ৪জন প্রার্থী দিনরাত ভোটের মাঠে কাজ করে যাচ্ছেন। সাংগঠনিকভাবে এ ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের অবস্থান দূর্বল থাকায় সেখানে সুবিধাজনক অবস্থানে রয়েছে বিএনপি। বর্তমান চেয়ারম্যান ও বিএনপি বিদ্রোহী আব্দুল জলিল জামাল ও বিএনপি প্রার্থী, যুক্তরাজ্য প্রবাসী ও কুলাউড়া ডিগ্রি কলেজের সাবেক ভিপি আব্দুল মুহিত সোহেলের মধ্যে মূল লড়াই হবে বলে সাধারণ ভোটারদের অভিমত। সাংগঠনিক অবস্থান যাই থাকুক এখানে বিএনপির কোন্দলকে কাজে লাগিয়ে চমক দেখাতে চান আওয়ামী লীগের একক প্রার্থী আকবর আলী সোহাগ। এছাড়াও রয়েছেন খেলাফত মজলিশের প্রার্থী এনামুল হক মাহতাব।
মন্তব্য করুন