কুলাউড়ায় ইউপি নির্বাচনে দলীয় প্রার্থীদের জামানত বাজেয়াপ্ত আর স্বতন্ত্র প্রার্থীদের চমকের নেপথ্যে
কুলাউড়া অফিস॥ কুলাউড়া উপজেলায় ১৩ ইউনিয়নের মধ্যে ৬টিতে বিজয়ী হয়েছে স্বতন্ত্র প্রার্থী। দুটি বড় দলের প্রার্থীদের জামানত হারানোর ঘটনা ঘটেছে। প্রার্থী নির্বাচনে অদূরদর্শিতায় সংখ্যাগরিষ্ঠতা লাভ করেছে স্বতন্ত্র প্রার্থীরা আর জামানত হারিয়েছে দলীয় প্রার্থীরা। তবে কুলাউড়ার নির্বাচন ছিলো দেশের চলমান নির্বাচনী চিত্র ছিলো বিপরীতমুখী।
সারাদেশে ইউনিয়ন নির্বাচনী দৃশ্য ছিলো ক্ষমতাসীনদের ভোট লুট, পেশিশক্তির প্রয়োগ গুলি আর রক্ত্রে হোলিখেলার। মৌলভীবাজারের বড়লেখা ছাড়া জুড়ী, কুলাউড়া ও রাজনগরে নির্বাচন ছিলো যেন দেশের উল্টোচিত্র। প্রশ্নবিদ্ধ হয়নি প্রশাসনের ভূমিকা। তবে পরবর্তী নির্বাচন মৌলভীবাজার সদর, কমলগঞ্জ ও শ্রীমঙ্গল উপজেলায় যদি একই ধারা অব্যাহত থাকে তবে মৌলভীবাজারের প্রশাসন অবশ্য ধন্যবাদ পেতে পারে। নাকি দেশের প্রচলিত স্রোতে গাঁ ভাসায় সেটাই দেখার পালা।
কুলাউড়ার ১৩টি ইউনিয়নের মধ্যে যারা স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচিত হয়েছে তারা হলেন, ৩য় দফায় জয়চন্ডী ইউনিয়নে কমর উদ্দিন আহমদ কমরু, কুলাউড়া সদর ইউনিয়নে নার্গিস আক্তার বুবলি ও রাউৎগাঁও ইউনিয়নে আব্দুল জলিল জামাল। ৪র্থ দফা নির্বাচনে হাজীপুর ইউনিয়নে সাংবাদিক আব্দুল বাছিত বাচ্ছু, টিলাগাঁও ইউনিয়নে আব্দুল মালিক ও পৃথিমপাশা ইউনিয়নে নবাব আলী বাকর খান হাসনাইন।
এসব স্বতন্ত্র প্রার্থীর বিজয় কুলাউড়ার ভোটারদের বিচক্ষণতার পরিচয়। আর দুটি প্রধান দলের প্রার্থী নির্বাচনে অদক্ষতা। দলীয় প্রার্থী নির্বাচনে মনোনয়ন বাণিজ্যের গুজব নির্বাচনের পরে ফলাফল বিচারে একেবারে উড়িয়ে দেয়া যায় না। বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিবেদনেও বিষয়টি গুরুত্ব পেয়েছে।
৩য় দফা নির্বাচনে জামানত হারানোর তালিকায় ছিলেন জয়চন্ডী ইউনিয়নে বিএনপি প্রার্থী রুমেল খান (ভোট ৬৪০) ও কাদিপুর ইউনিয়নে আওয়ামী লীগ প্রার্থী সেলিম আহমদ (ভোট ৫২৮)। ৪র্থ দফা নির্বাচনে কর্মধা ইউনিয়নে বিএনপি প্রার্থী আব্দুস সালাম (ভোট ৪৪১), ভাটেরা ইউনিয়নে বিএনপি প্রার্থী হাজী সিরাজ মিয়া (২৪৭)।
আওয়ামী লীগ ও বিএনপি’র প্রার্থীর জমানাত বাজেয়াপ্ত হওয়ার ঘটনা সবচেয়ে বেশি আলোচিত হচ্ছে কুলাউড়ার সর্বস্তরের মানুষের মাঝে। দলীয় মনোনয়ন চুড়ান্ত করার ক্ষেত্রে কতটা অদুরদর্শিতার পরিচয় দেয়া হয়েছে, তা নিয়ে চলছে কাঁটাছেড়া বিশ্লেষন।
মনোনয়ন বাণিজ্যের সবচেয়ে বেশি অভিযোগ উঠেছে আওয়ামীলীগের বিরুদ্ধে। দলটির উপজেলা সাধারণ সম্পাদকের রফিকুল ইসলাম রেনুর বিরুদ্ধে প্রার্থী নির্বাচনে সবচেয়ে বেশি সমালোচনা হয়েছে। তিনি নিজ ইউনিয়নে সবচেয়ে বেশি সমালোচনা শিকার হয়েছেন। অখ্যাত এক বিএনপি প্রার্থী আজিজুর রহমানের কাছে ৪৬৭ ভোটে হার মানেন। অবশ্য তার এই হার কুলাউড়া, মৌলভীবাজার তথা সিলেট বিভাগ জুড়েই ছিলো আলোচনায়।
টাকার কাছে আওয়ামীলীগেরই জামানত বাজেয়াপ্ত হয় কাদিপুর ইউনিয়নে। হাজীপুর ইউনিয়নে বিতর্কিত ওদুদ বক্সকে মনোনয়ন দেয়ায়। সেখানে দলের একাধিকবারের নির্বাচিত ও নিবেদিতপ্রাণ ব্যক্তি মবশ্বির আলীকে মনোনয়ন না দেয়ায়। বিতর্কিত ওদদু বক্স ৩৫৩১ ভোট পেয়ে ৩য় হয়েছেন। শরীফপুরের প্রার্থী চিনু মিয়া বিগত ৫ বছর ছিলেন নানা অপকর্মে সমালোচিত। সেই বিতর্কিত ব্যক্তি শেষ পর্যন্ত ২৭৬০ ভোট পেয়ে ৩য় হন। বিদ্রোহী খলিলুর রহমান ৩৪৮৮ ভোট পেয়ে উপেক্ষার জবাব দেন। টিলাগাঁও ইউনিয়নে সাবেক চেয়ারম্যান আব্দুল মালিক ২৮০৮ ভোট বেশি পেয়ে জবাব দেন তাকে উপেক্ষা করার।
আওয়ামীলীগের এই ভরাডুবির কারন ব্যাখ্যা করতে গিয়ে কুলাউড়া উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক এ কে এম সফি আহমদ সলমান সাংবাদিকদের বলেন, এই ভরাডুবির পেছনে একমাত্র কারন উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারন সম্পাদক রফিকুল ইসলাম রেনুর মনোনয়ন বাণিজ্য। তিনি যোগ্য ও দলের হন্য ত্যাগী ও নিবেদিত কর্মীদের মনোনয়ন না দিয়ে টাকার কাছে বিক্রি হয়ে গিয়ে অযোগ্য তাঁর পছন্দের লোকদের মনোনয়ন দেয়ায় আমাদের এই লজ্জায় পড়তে হয়েছে।
বিএনপির আলোচনায় জামানত বাজেয়াপ্তের তালিকায় ৩ চেয়ারম্যান প্রার্থী। দলটির মনোনয়ন বাণিজ্যের তীর কেন্দ্রিয় নেতা অ্যাডভোকেট আবেদ রাজার বিরুদ্ধে।
তাছাড়া কর্মধা ইউনিয়নে ২বারের চেয়ারম্যান আব্দুস সহিদ বাবুলের পরাজয় ছিলো নির্বাচনী মাঠে সবচেয়ে আলোচিত বিষয়। জয়চন্ডী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান কমর উদ্দিন আহমদ কমরু ধানের শীষ প্রতিক না নিয়ে বিজয়ী হন। কর্মধা ইউনিয়নের আব্দুস সহিদ বাবুলও একই পদাঙ্ক অনুসরণ করে ভরাডুবির শিকার হন। নির্বাচনী মাঠে গোটা দেশের বিপরীত চিত্র ছিলো কুলাউড়ায়। এতটা নিরপেক্ষ ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন নিকট অতীতে হয়নি।
মন্তব্য করুন