কুলাউড়ায় বধ্যভূমিসহ স্মৃতিসৌধের জায়গার লিজ দিলো জেলা পরিষদ!
এম. মছব্বির আলী॥ কুলাউড়া উপজেলার রবিরবাজারে মহান মুক্তিযুদ্ধের ২১জন শহীদের স্মৃতি রক্ষার্থে বধ্যভূমিতে নির্মিত স্মৃতিসৌধের জায়গা লিজ দিয়েছে জেলা পরিষদ। জেলা পরিষদের আকস্মিক এ সিদ্ধান্তে নিন্দার ঝড় উঠেছে মুক্তিযোদ্ধা, সুশীলসমাজ ও সংস্কৃতিকর্মীসহ সর্বত্রই। ইতোমধ্যে রবিরবাজারের নানা ইতিহাস আর ঐতিহ্যের স্বাক্ষী এ স্থানটির লিজ বাতিলের জন্য প্রতিবাদ সভা ও জেলা পরিষদের প্রশাসকের কাছে লিখিত অভিযোগ করেছেন স্থানীয়রা।
সরেজমিনে জানা গেছে, ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় রবিরবাজারের টিলাগাঁও সড়কের পাশে পাকিস্থানী হানাদার বাহিনীরা পৃথিমপাশা ইউনিয়নের ২১ জন ব্যক্তিকে ধরে এনে নির্মম ভাবে হত্যা করে। পরবর্তীতে দেশ স্বাধীন হলে ২০০৫-০৬ অর্থবছরে মৌলভীবাজার জেলা পরিষদের মালিকানাধীন এ বধ্যভূমিতে পৃথিমপাশা ইউনিয়ন পরিষদের উদ্যোগে ও জেলা পরিষদের অর্থায়নে স্মৃতিসৌধ নির্মান কাজ শুরু হয়। কিন্তু কাজ শেষ না করেই পালিয়ে যায় সংশ্লিষ্ঠ ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। পরবর্তীতে স্থানীয়রাসহ পাশ্ববর্তী ৬ ইউনিয়নের মানুষ স্মৃতিসৌধটি আধুনিকায়নের দাবী তুললেও কোন কাজ হয়নি। এদিকে এসুযোগকে কাজে লাগিয়ে স্থানীয় কতিপয় কিছু সুবিধাভোগিরা জায়গাটুকুর বৃহৎ অংশের কতৃত্ব নিতে মরিয়া হয়ে ওঠে। দীর্ঘদিন থেকে স্থানীয় রবিরবাজার-টিলাগাঁও রোডের অটো (সিএনজি) চালকরা জোর করে স্মৃতিসৌধ প্রাঙ্গনকে তাদের স্ট্যান্ড হিসেবে করছেন। স্থানীয় সুশীল সমাজ স্মৃতিসৌধ প্রাঙ্গন থেকে অবৈধ সিএনজি স্ট্যান্ড উচ্ছেদ করতে অনেক আন্দোলন করলেও প্রাশসন ছিল নিরব ভূমিকায়। সর্বশেষ সপ্তাহে ওই সিএনজি চালক সমিতি এবং স্থানীয় কিছু প্রভাবশালী নেতারা জেলা পরিষদের কিছু অসাধু কর্মকর্তাদের যোগসাজশে সিএনজি স্ট্যান্ডের জন্য স্মৃতিসৌধ প্রাঙ্গনের ৩ শতক জায়গা ও দোকান নির্মানের জন্য আরও প্রায় ২ শতক জায়গা লিজ নেন। জায়গাটুকু লিজ নিয়ে এরইমধ্যে সিএনজি চালকরা তাদের অফিস নির্মান করেন ও মার্কেট নির্মানের জন্য ইট বালু এনে জমা রেখেছেন। এদিকে স্মৃতিসৌধের জায়গাটুকু লিজ দেয়ার খবর শুনে এলাকার মুক্তিযোদ্ধাসহ সচেতন সমাজের মানুষ দল-মত নির্বিশেষে লিজ বাতিলের জন্য ১০ আগস্ট বুধবার রাতে এক প্রতিবাদ সভা করেছেন। প্রতিবাদসভায় বক্তব্য দেন উপজেলা চেয়ারম্যান (ভারপ্রাপ্ত) নেহার বেগমসহ এলাকার বিভিন্ন শ্রেণীপেশার মানুষ। এদিকে ১১ আগস্ট বৃহস্পতিবার সকালে এলাকার সচেতনমহল জেলা পরিষদ প্রশাসকের কাছে লিখিত আবেদন করে শহীদদের স্মৃতি রক্ষার স্বার্থে লিজ বাতিলের দাবী জানান। স্থানীয় ইউপি সদস্য মাসুদ রানা আব্বাছ জানান, ২-৩ মাস পূর্বে স্থানীয় এমপি বীরমুক্তিযোদ্ধা আব্দুল মতিন স্মৃতিসৌধ প্রাঙ্গনের মাঠ ভরাটের জন্য ৮টন চাল বরাদ্ধ দেন। তাঁর বরাদ্ধ দিয়ে মাঠ ভরাট কাজও করা হয়েছে।
পৃথিমপাশা ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা আবদুল গফুর বলেন, এস্থানে পাকিস্থানী হানাদাররা আমার পরিবারের চারজন সদস্যসহ ২১ জনকে নির্মমভাবে হত্যা করেছিল। আমরাতো অনেক কষ্ট করে মুক্তিযুদ্ধ করেছিলাম, অন্ততপক্ষে আত্মসš§ান নিয়ে বেঁচে থাকতে। কিন্তু কি পেলাম? স্বাধীন দেশে মুক্তিযুদ্ধের নেতৃত্বদানকারী দল ক্ষমতায় থাকা স্বত্বেও স্মৃতিসৌধের জায়গাটি লিজ দিয়ে দিলো জেলা পরিষদ। কুলাউড়া উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার সুশীল চন্দ্র দে জানান, এ বিষয়টা খুবই নিন্দনীয়। আমি একজন মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে আশা কররো জেলা পরিষদ লিজটি বাতিল করবে।
মৌলভীবাজার জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী প্রকৌশলী বিধায়ক রায় চৌধুরী জানান, জেলা পরিষদের ওই জায়গা দীর্ঘদিন থেকে কিছু অসাধুরা ভোগ দখল করছে। তাই পরিষদ লিজের সিন্ধান্ত নেয়।
মন্তব্য করুন