কুলাউড়ায় ভুয়া ডাক্তারের ভুল চিকিৎসায় মৃত্যু পথযাত্রী শিশু মুন্না
এম. মছব্বির আলী॥ কুলাউড়া শহরের এক ভুয়া ডাক্তারের ভূল চিকিৎসায় মৃত্যুর পথযাত্রী মুন্না আহমদ (৪) নামক এক শিশু। আর একমাত্র সন্তানের এই বিপদ সংকুল অবস্থা দেখে এখন মা বাবাও পাগলপ্রায়। তাদের চোখে-মুখে নেমে এসেছে অন্ধকার। কয়েকদিনের চিকিৎসা ব্যয় বহন করতে গিয়ে পরিবারটি পথে বসেছে।
উপজেলার জয়চন্ডী ইউনিয়নের কামারকান্দি গ্রামের দরিদ্র মুস্তাকিন মিয়ার একমাত্র শিশুপুত্রের চোখের সমস্যা দেখা দিলে কুলাউড়া শহরের স্টেশন রোডে কথিত ভুয়া ডাক্তার আবুল হোসেনের কাছে নিয়ে আসেন। ডাক্তারের প্রেসক্রিপশনে তার পদবিতে লেখা বি.এ, ডি.এইচ, এম.এস, বি.এইচ.বি (ঢাকা), রেজি: নং ১৯৩৬২। মেডিক্যাল অফিসার, ফারুকী দাতব্য হোমিও চিকিৎসা কেন্দ্র, গোলাপগঞ্জ, সিলেট। চেম্বার : মা হোমিও হেলথ সেন্টার জল্লারপার রোড, মির্জাজাঙ্গাল, সিলেট।
কথিত এই ভুয়া ডাক্তার আবুল হোসেন নিজের তৈরি ঔষধের পর পর ৩ বার অতিরিক্ত ডোজ দিলে শিশু মুন্নার অবস্থা আশঙ্কাজনক পর্যায়ে পৌঁছে। অবস্থা বেগতিক দেখে ডাক্তার শিশুটিকে সিলেট ওসমানী হাসপাতালে ভর্তি করার জন্য শিশুর পিতা মোস্তাকিন মিয়াকে বলেন। ২৩ মে সিলেট ওসমানী হাসপাতালে শিশু মুন্নাকে ভর্তি করা হয় এবং ১ জুন পর্যন্ত তার চিকিৎসা চলে। চিকিৎসাকালীন পরীক্ষা নিরীক্ষার পর পরবর্তী চিকিৎসার জন্য অতিসত্বর জাতীয় চক্ষু বিজ্ঞান ইনস্টিটিউট, শেরে বাংলানগর, ঢাকা যোগাযোগ করার জন্য উপদেশ দিয়ে ছাড়পত্র দেন।
এরপর মোস্তাকিন মিয়া গুরুতর অসুস্থ শিশু ৪ জুন ইস্পাহানী ইসলামিয়া আই ইনন্সিটিউট এন্ড হাসপাতালে প্যাথলজিক্যাল পরীক্ষা নিরীক্ষার পর ৫ জুন ঢাকা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল কলেজ বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে ভর্তি করেন। সেখানে একটি মেডিক্যাল বোর্ড শিশু মুন্নার অবস্থা নিয়ন্ত্রণের বাইরে জানিয়ে তাদের ফেরৎ পাঠায়।
মুন্নার পাগল প্রায় পিতা জানান, ৫ জুনের ডাক্তারদের এই ঘোষণার পর শিশুটিকে নিয়ে চরম যন্ত্রণা আর উদ্বেগ উৎকন্ঠায় রয়েছেন। চোখের সামনে তাদের একমাত্র শিশুর মৃত্যু হবে এই যন্ত্রণা সইবার নয়। শিশুটির কষ্ট আর তাদের সহ্য হচ্ছে না। এখন আল্লার উপর ভরসা করে আছেন বলে হাউ মাউ করে কেঁদে উঠেন।
ইতোমধ্যে মুস্তাকিন মিয়া কুলাউড়া থানায় একটি লিখিত অভিযোগও দিয়েছেন। এদিকে শিমুর অবস্থা বেগতিক দেখে কথিত ভুয়া ডাক্তার আবুল হোসেন তার কুলাউড়া চেম্বারে আসাও বন্ধ করে দিয়েছেন।
১৮ জুন শনিবার ডাক্তারের মোবাইল ফোনে রোগি দেখার কথা বলে কুলাউড়া আসবেন কিনা? এ প্রশ্নের জবাবে ডাক্তার আবুল হোসেন জানান, কুলাউড়ার চেম্বারে আর তিনি বসবেন না। রোগি থাকলে সিলেট মির্জাজাঙ্গালে অথবা গোলাপগঞ্জের চেম্বারে নিয়ে যাবার পরামর্শ দেন।
এদিকে কুলাউড়া থানার অফিসার ইনচার্জ শাসুদ্দোহা পিপিএম জানান, আমি শিশুটিকে দেখেছি। এব্যাপারে অবশ্যই ব্যবস্থা নেয়া হবে।
মন্তব্য করুন