কুলাউড়ায় মেয়ে অপহরণের ঘটনার জের ধরে স্বজনদের নির্যাতনেই মায়ের আত্মহনন
হাবিবুর রহমান ফজলু॥ কুলাউড়া উপজেলায় বহুল আলোচিত কিশোরী রুমেনা অপহরণের ঘটনায় স্বজনদের নির্যাতনে অতিষ্ট হয়েই গৃহবধূ সায়রা বেগম,আত্মহনন করেন। অপহৃত কিশোরীকে উদ্ধারের পাশাপাশি ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে পুলিশ বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে নিহত সায়রার স্বামী মাসুক মিয়া, ছেলে তসিদ আলী ও অপহরণকারী মসিক মিয়াকে আটক করেছে। ১৮ এপ্রিল সোমবার আটককৃতদের আদালতের মাধ্যমে জেলহাজতে প্রেরণ করেছে পুলিশ। এ ঘটনায় কুলাউড়া থানায় পৃথক দুটি মামলা হয়েছে।
পুলিশ ও মামলার এজাহার সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার কর্মধা ইউনিয়নের মুরইছড়া বস্তি গ্রামের বাসিন্দা মনু মিয়ার ছেলে মসিক সম্প্রতি প্রতিবেশী মাসুক মিয়ার মেয়ে রুমেনাকে একাধিকবার প্রেমের প্রস্তাব দেন। রুমেনা সে প্রস্তাব প্রত্যাখান করেন। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে ১৫ এপ্রিল শুক্রবার দিবাগত রাত আড়াইটার দিকে মসিকসহ ৮-১০ জন দুর্বৃত্তরা ঘরের দরজা ভেঙে রুমেনাকে অপহরণ করে। ঘটনা জানতে পেরে পাশের ঘরে থাকা সায়রার স্বামী মাসুক মিয়া ও তাঁর বড় ছেলে তসিদ ছুটে এসে গালিগালাজ করেন। একপর্যায়ে মাসুক মিয়া ধারালো দা দিয়ে সায়রার হাতের কবজিতে একটি কোপও দেয়। এতে অতিষ্ট হয়ে সায়রা ঘরে থাকা কীটনাশক পান করেন। আশঙ্কাজনক অবস্থায় কুলাউড়া হাসাপাতালে নেয়ার পথে সায়রা বেগমের মৃত্যু হয়। ১৭ এপ্রিল রোববার কর্মধা ইউনিয়নের বুধপাশা গ্রামের একটি বাড়িতে থেকে রুমেনাকে উদ্ধার ও মসিককে আটক করা হয়।
এ ব্যাপারে নিহত সায়রার মা আমিনা বিবি বাদী হয়ে ওই দিন রোববার রাত নয়টার দিকে রুমানাকে অপহরণের অভিযোগে মসিককে আসামি করে একটি এবং সায়রার ওপর নির্যাতন চালিয়ে আত্মহত্যার প্ররোচনার অভিযোগে মাসুক ও তসিদকে আসামি করে আরেকটি মামলা করেন। মাসুক পাঁচ-ছয় বছর আগে দ্বিতীয় বিয়ে করেন। এরপর থেকে সায়রার সঙ্গে তাঁর সম্পর্কের অবনতি ঘটে বলে মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়।
কুলাউড়া থানার অফিসার ইনচার্জ শামসুদ্দোহা সোমবার জানান, ঘটনার পর মাসুক অপহরণে বাঁধা দেয়ায় দুর্বৃত্তরা তাঁর স্ত্রীকে মারধর করে মুখে বিষ ঢেলে হত্যা করে বলে প্রচার চালান। পরে তদন্তে ও আসামিদের জিজ্ঞাসাবাদে প্রকৃত তথ্য বেরিয়ে আসে। অপহরণকারী মসিক বখাটে প্রকৃতির। বাবা-মায়ের ওপর নির্যাতনের অভিযোগে তার বিরুদ্ধে থানায় একটি মামলা রয়েছে। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে মসিক অপহরণ এবং মাসুক ও তসিদ সায়রাকে নির্যাতনের বিষয়টি পুলিশের কাছে স্বীকার করেছেন। অভিযুক্ত ৩জন ব্যক্তিকেই আমিনা বিবির করা মামলায় গ্রেফতার দেখিয়ে আদালতের মাধ্যমে মৌলভীবাজার হাজতে পাঠানো হয়েছে। প্রয়োজনীয় শারিরীক পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য রুমেনাকে মৌলভীবাজারের সদর হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।
মন্তব্য করুন