কুলাউড়ায় স্বামী হত্যা পরিকল্পনার ঘটনায় স্ত্রী ও শ্যালক আটক
কুলাউড়া অফিস॥ কুলাউড়া উপজেলা সদরে চেতনানাশক দ্রব্য মিশিয়ে স্বামীও সৎ মেয়েকে হত্যার পরিকল্পনা করেন গৃহবধু ফাতেমা বেগম (৩৫)। ওই গৃহবধু ও তার ভাই নিজাম উদ্দিন (২৮)কে পুলিশ আটক করে ২ সেপ্টেম্বর শুক্রবার জেল হাজতে প্রেরণ করেছে। এঘটনায় কুলাউড়া শহরে ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে।
কুলাউড়া পৌরসভার ৪নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা ফরিদ উদ্দিন আহমদ (৬০) ও তার মেয়ে কুলাউড়া বালিকা বিদ্যালয়ের ৯ম শ্রেণির ছাত্রী উম্মে হাবিবা সুচি (১৫) কে ২৩ আগস্ট মঙ্গলবার রাতের খাবারের সাথে চেতনানাশক দ্রব্য মিশিয়ে হত্যা চেষ্টা করা হয়। পরদিন সকালে ঘটনাকে ভিন্নখাতে প্রবাহিত করতে ডাকাতির নাটক সাজানো হয়। ফরিদ উদ্দিনের ভাই আরিফ উদ্দিন বিষয়টি বুঝতে ভাই ও ভাতিজীকে কুলাউড়া হাসপাতালে ভর্তি করেন। কিন্তু তাদের অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় সিলেট ওসমানি হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়।
ঘটনার ২দিন পর ২৫ আগস্ট বৃহস্পতিবার আরিফ উদ্দিন অসুস্থ ভাই ও ভাতিজীকে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রেখে ফিরে এসে ভাবি ফাতেমা বেগমকে সন্দেহজনক আসামী করে কুলাউড়া থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করেন। অভিযোগে আরিফ উদ্দিন উল্লেখ করেন, ফরিদ উদ্দিনের বাসাসহ ৬ শতক জমি স্ত্রী ফাতেমা বেগমের নামে লিখে দেয়ার জন্য ভাই ভাবির মধ্যে দ্বন্দ্ব চলছিলো, এমনকি ঝগড়াঝাটি হতো। যা আত্মীয় স্বজনসহ পার্শ্ববর্তী লোকজন জানতো। এরই জের ধরে ফাতেমা বেগম চেতনানাশক দ্রব্য খাবারের সাথে মিশিয়ে স্বামী ও সৎ মেয়ে সুচিকে হত্যা চেষ্টা চালান। সেই সুযোগে নগদ টাকা স্বর্নালংকারসহ বাসার ৩ লক্ষাধিক টাকার মালামাল ডাকাতির নামে অন্যত্র সরিয়ে নেন।
এদিকে থানায় অভিযোগ দায়েরের পর পুলিশ ঘটনার তদন্ত শুরু করে। ২৩ আগস্ট থেকে ৩১ আগস্ট পর্যন্ত হাসপাতালে চিকিৎসাধীন থেকে ১ সেপ্টেম্বর বৃহস্পতিবার ফরিদ উদ্দিন আহমদ বাসায় ফিরে স্ত্রী ফাতেমা বেগমকে তালাক দেন। এর আগ পর্যন্ত ফাতেমা বেগম স্বামীর বাসায় অবস্থান করছিলেন। রাতে পুলিশ অভিযান চালিয়ে ফাতেমা বেগম ও তার ভাই নিজাম উদ্দিনকে আটক করে। জানা যায়, পৌরসভার ৪ নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা ফরিদ উদ্দিন জীবন বীমার একজন অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা। ফাতেমা বেগম তার ৩য় স্ত্রী। সামিয়া (৮) নামে ফাতেমা বেগমের ঘরে ফরিদ উদ্দিনের ঔরসজাত আরেকটি মেয়ে রয়েছে। অভিযুক্ত ফাতেমা বেগমেরও এর আগে দুটি বিয়ে হয়। ফরিদ উদ্দিন তার ৩য় স্বামী। ফাতেমা বেগম বাসাটি নিজ কব্জায় নিয়ে ইতিপূর্বেও স্বামী ফরিদ উদ্দিনের উপর নির্যাতন চালাতেন বলে স্থানীয় লোকজন জানান। একাধিকবার ফরিদ উদ্দিন ও তার ২য় স্ত্রীর মেয়ে সুচি’র ওপর ফাতেমা বেগম তার ভাইদের সহযোগিতায় নির্যাতন চালাতেন।
এদিকে অপ্রাপ্ত বয়স্ক সুচি’র উপর নির্যাতনের ঘটনায় নারী ও শিশু নির্যাতন আইনে আরেকটি অভিযোগ দায়ের করা হবে বলে ফরিদ উদ্দিনের পরিবারের পক্ষ থেকে নিশ্চিত করা হয়।
এদিকে স্কুল ছাত্রী সুচি’র উপর হামলার প্রতিবাদে ৩০ আগস্ট মঙ্গলবার কুলাউড়া বালিকা বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করে।
এ ব্যাপারে থানায় দায়েরকৃত মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই সঞ্জয় চক্রবর্তী জানান, আসামী ফাতেমা বেগম একেকবার একেক রকম জবানবন্দী দিচ্ছেন। কখনও নিজেকে অসুস্থ দাবি করছেন। তবে আসামীদের রিমান্ড চাওয়া হবে।
মন্তব্য করুন