কুলাউড়া-জুড়ীর ৬ লাখ মানুষের চিকিৎসায় ৫ জন ডাক্তার!
এইচ ডি রুবেল॥ ৫০ শয্যা বিশিষ্ট কুলাউড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে তীব্র ডাক্তার সংকটের কারণে কুলাউড়া ও জুড়ীর প্রায় ৬ লাখ রোগী চিকিৎসা সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। বিশেষজ্ঞ ডাক্তারসহ ৩২ টি পদের মধ্যে এতোদিন ২২ জন ডাক্তার রোগীদের সেবা দিয়ে আসলেও ১৫/২০ দিন থেকে মাত্র ৫ জন ডাক্তার দুই উপজেলার হাজার হাজার রোগীর সেবা নিশ্চিত করতে গিয়ে হিমশিম খেতে হচ্ছে। গতকাল দুপুর ১২টা থেকে ১ টা পর্যন্ত ১ ঘন্টা কুলাউড়া স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স পরিদর্শনকালে দেখা যায়, আউট ডোরে রোগীদের প্রচন্ড ভীড়। প্রতিদিন সকাল থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত ৭ শতাধিক রোগী আউট ডোরে চিকিৎসা নিতে আসেন। দুপুর ১টা পর্যন্ত দু’শতাধিক রোগীরা আউটডোরে চিকিৎসা নিয়েছেন বলে নিশ্চিত করেন প্রাক্তন মেডিকেল অফিসার ডাঃ মহিউদ্দিন আলমগীর। এছাড়াও লাইনে আরও ২শ’ জনের ওপরে রোগীরা দাড়িয়ে থাকতে দেখা গেছে এবং আউটডোরে মেডিকেল অফিসার ডাঃ মহিউদ্দিন আলমগীর, আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডাঃ সাঈদ এনাম, ডাঃ ফারহানা হক, ডাঃ পরিমল চিকিৎসা দিচ্ছেন। ছুটিতে আছেন ১ জন। ২য় তলার অন্যান্য ডাক্তারের চেম্বার যথাক্রমে চক্ষু বিভাগ, দন্ত বিভাগ, কার্ডিওলোজি বিভাগ, নাক, কান ও গলা রোগ বিভাগ ফাকা পড়ে আছে ডাক্তারের অভাবে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ৫০ শয্যা বিশিষ্ট কুলাউড়া স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটিতে ৩২ জন ডাক্তারের পদ রয়েছে। তম্মেধ্যে বিশেষজ্ঞসহ মোট ২২ জন ডাক্তার এতোদিন কর্তব্যরত ছিলেন। এরমধ্যে ৪ জন গিয়েছেন ট্রেনিং-এ, ৫ জন ডেপুটেশনে, ৩ জন কনসালটেন্টসহ বাকিরা কর্মস্থলে অনুপস্থিত রয়েছেন।
এছাড়াও হাসপাতালে ৩ মাস থেকে পানি সংকট চলছে। পাইপ লাইন মেরামত শেষ না করে ৬ লক্ষ টাকার বিল তুলে নিয়ে চলে গেছে ঠিকাদার। পানি সমস্যা সমাধানের জন্য ৬ লক্ষ টাকা সরকারের ব্যয় হয়েছে সত্যি কিন্তু সমস্যা সমস্যার জায়গায়ই থেকে গেলো হিসাবে আপসোস করেন স্বয়ং উপজেলা স্বাস্থ্য পঃ পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ মিজানুর রহমান। তিনি বলেন, আমার বিলে কোন সুপারিশ স্বাক্ষর ছাড়াই কাজ না করে ঠিকাদারকে কিভাবে বিল দেওয়া হলো তার কোন উত্তর পাচ্ছিনা। তিনি বলেন, হাসপাতালে চরম অব্যবস্থাপনা বিরাজ করছে। হাসপাতালে বিদ্যুতের ভোল্টেজ সমস্যা। বারবার বলার পরেও কুলাউড়ার পিডিবি কর্তৃপক্ষ গুরুত্ব দিচ্ছেননা। প্রতিদিন পিডিবির প্রকৌশলী এসে সমাধান করবেন বললেও মাস থেকে তিনি আর আসছেননা। ফলে হাসপাতালের ফ্যান চলছেনা। লাইট নিভছে, জ¦লছে। অনেক লাইট নষ্ট হয়ে গেছে ইতিমধ্যে। রোগীরা অবর্ননীয় দূর্ভোগে পড়ছেন বিদ্যুতের সমস্যার জন্য। এছাড়াও হাসপাতালের ডাক্তার কোয়ার্টারের ওপরে দিয়ে টানা হয়েছে বিদ্যুতের লাইন। ১৫/২০ দিন পূর্বে আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডাঃ মহি উদ্দিন আলমগীর এর বাসার ওপরে বিব্দ্যুৎ স্পৃষ্ট হয়ে তাঁর মামা গুরুতর আহত হয়েছেন। এ বিষয়ে পিডিবি কর্তৃপক্ষকে বলার পরও কোয়ার্টারের ওপরের লাইন সরানো হয়নি এখনও।
এব্যাপারে পিডিবির কুলাউড়ার নির্বাহী প্রকৌশলী দুলাল আহমদ চৌধুরী বলেন, হাসপাতালের বিদ্যুতের আভ্যন্তরিন সমস্যা হলে এটা তাদের হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের বিষয়। আর মূল লাইনের সমস্যা হলে আমি আজই লোক পাঠিয়ে সমাধান করব। এব্যাপারে উপজেলা স্বাস্থ্য পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ মিজানুর রহমান জানান, হাসপাতালের ডাক্তার সংকট চরম আকার ধারন করেছে। মাত্র ৫ জন ডাক্তার দিয়ে কুলাউড়া ও জুড়ীর ৬ লাখ অধিবাসীর চিকিৎসা প্রদান করতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। বিষয়টি উর্ধতন কর্তৃপক্ষকে লিখিতভাবে অবহিত করা হয়েছে। কিন্তু ডাক্তার বাড়ানো হচ্ছেনা উল্টো যারা ছিলেন তারা অন্যত্র চলে যাচ্ছেন। কাজেই রোগীদেরকে ৫ জন ডাক্তার সার্ভিস দিয়ে যেতে হিমশিম খেতে হচ্ছে।
এ ব্যাপারে মৌলভীবাজারের সিভিল সার্জন ডাঃ সত্য কাম চক্রবর্তী জানান, হাসপাতালে ডাক্তার সংকটের বিষয়ে স্থানীয় এমপি মহোদয়ের উদ্যোগী হতে হবে। তিনি সুপারিশসহ স্বাস্থ্য মন্ত্রনালয়ের মহাপরিচালক বরাবরে পাঠালে ডাক্তার সংকটের নিরসন হবে বলে আমি মনে করি। এরপরেও আমরা বিষয়টি উর্ধতন কর্তৃপক্ষকে অফিসিয়ালী জানাবো।
এদিকে কুলাউড়া স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ডাক্তার সংকট, অনিয়ম অব্যবস্থাপনা এবং নানা সমস্যা নিয়ে কুলাউড়ার সচেতন সমাজ যাচ্ছেন আন্দোলনে। ইতোমধ্যে কয়েকবার প্রস্তুতি সভা করা হয়েছে এবং ১৭ আগষ্ট বুধবার শহরে মানব বন্ধন এবং স্মারকলিপি প্রদানের কর্মসূচী ঘোষনা করা হয়েছে।
মন্তব্য করুন