কুলাউড়া হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের অনিয়মের বিরুদ্ধে মানববন্ধন
এইচ ডি রুবেল॥ কুলাউড়ায় সড়ক দূর্ঘটনায় নিহত ভাটেরা স্কুল এন্ড কলেজের অধ্যাপক আশুতোষ দেব ও আহত অফিম সহকারি ফজলুল করিম ফজিরের চিকিৎসায় অবহেলা, অনিয়মে সংশ্লিষ্ট ডাক্তার-কর্মচারীর বিচারের দাবীতে এবং কুলাউড়া হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের সীমাহীন অনিয়ম, অব্যবস্থাপনা, দূর্নীতির প্রতিবাদে কুলাউড়ায় ‘আমরা কুলাউড়াবাসী’র উদ্যোগে স্মরণকালের বৃহত্তম মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে। ১৭ আগস্ট বুধবার বেলা ১১টায় কুলাউড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সামনে মৌলভীবাজার জেলা সিপিবির সভাপতি খন্দকার লুৎফুর রহমানের সভাপতিত্বে ও উপজেলা জাসদের সভাপতি মইনুল ইসলাম শামীমের পরিচালনায় মানববন্ধনে সংহতি প্রকাশ করে বক্তব্য রাখেন মোঃ আব্দুল মতিন এমপি, জাসদের কেন্দ্রীয় কৃষি বিষয়ক সম্পাদক গিয়াস উদ্দিন আহমদ, কুলাউড়া উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক রফিকুল ইসলাম রেনু, কুলাউড়া ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ সৌম্য প্রদীপ ভট্টাচার্য্য সজল, উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান মাওলানা ফজলুল হক খান সাহেদ, কুলাউড়া ডিগ্রি কলেজের উপাধ্যক্ষ আব্দুল হান্নান, কাদিপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান হাবিবুর রহমান ছালাম, ভাটেরা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সৈয়দ এ কে এম নজরুল ইসলাম, মানবাধিকার কমিশন কুলাউড়া উপজেলা শাখার সভাপতি এনামুল ইসলাম, ভাটেরা স্কুল এন্ড কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ ইব্রাহিম তালুকদার, বাকশিস কুলাউড়া কমিটির সভাপতি বরমচাল স্কুল এন্ড কলেজের অধ্যক্ষ ফজলুল হক,
ইয়াকুব তাজুল মহিলা ডিগ্রী কলেজের প্রভাষক আমিনুর রহমান, নবীণ চন্দ্র মডেল উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোঃ আমির হোসেন, মাধ্যমিক শিক্ষক সমিতি কুলাউড়া উপজেলা শাখার সভাপতি আব্দুল খালিক, কুলাউড়া ব্যবসায়ী কল্যাণ সমিতির সভাপতি বদরুজ্জামান সজল, কুলাউড়া পৌর আল ইসলাহ’র সভাপতি মাওলানা আব্দুল ওয়াহিদ, পৌর জাসদের সাধারণ সম্পাদক শফিক মিয়া আফিয়ান, রাবেয়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আব্দুস সালাম, পরিবহণ শ্রমিক ইউনিয়নের কুলাউড়া উপজেলা শাখার সভাপতি আব্দুস সহিদ মাখন, সাপ্তাহিক হাকালুকির নির্বাহী সম্পাদক এম. আতিকুর রহমান আখই, কুলাউড়া কৃষক লীগের আহবায়ক আব্দুল কাদির, ফুটবল খেলোয়াড় কল্যাণ সমিতির সাধারণ সম্পাদক আব্দুল্লাহ আল মণি, পৌর যুবলীগের যুগ্ম আহবায়ক এহসান আহমদ টিপু, ইউনাইটেড রয়েলস্ ক্লাবের সভাপতি মাহফুজ শাকিল, উপজেলা জাসদ ছাত্রলীগের সভাপতি মোঃ জাকির হোসেন, সিপিএর সাধারণ সম্পাদক রফি আহমদ তানিম, মুক্ত স্কাউট গ্রুপের সভাপতি মুর্শেদ আলম প্রমুখ।
দু’ঘন্টাব্যাপী চলা মানববন্ধনে একাত্মতা প্রকাশ করে এসময় উপস্থিত ছিলেন দি নিউ নেশনের মৌলভীবাজার জেলা প্রতিনিধি এম. মছব্বির আলী, কুলাউড়া ব্যবসায়ী কল্যাণ সমিতির সহ-সভাপতি নুরুল ইসলাম, উপজেলা আল ইসলাহ’র সাধারণ সম্পাদক মাওলানা আবুল কালাম, পৌর আল ইসলাহ’র সাধারণ সম্পাদক শিপলু বক্স, দৈনিক প্রথম আলো প্রতিনিধি কল্যাণ প্রসূণ চম্পু, ডেইলী স্টারের মৌলভীবাজার জেলা প্রতিনিধি মিন্টু দেশোয়ারা, দৈনিক ইনকিলাব প্রতিনিধি প্রভাষক মানজুরুল হক, ইউনাইটেড রয়েল্স ক্লাবের বোর্ড চেয়ারম্যান আজাদ আহমদ, সংগঠক গোলাম মোস্তফা পাবেল, ডাঃ হেমন্ত চন্দ্র পাল, দৈনিক দিনকাল প্রতিনিধি মোক্তাদির হোসেন, দৈনিক মানবজমিন প্রতিনিধি আলাউদ্দিন কবির, দৈনিক ভোরের ডাক প্রতিনিধি নাজমুল ইসলাম, বাংলামেইলের মৌলভীবাজার জেলা প্রতিনিধি সেলিম আহমদ, দৈনিক যুগভেরী প্রতিনিধি চয়ন জামান, সাপ্তাহিক পাতাকুঁড়ির দেশ পত্রিকার কুলাউড়া ব্যুরো প্রধান এইচ ডি রুবেল, সংবাদকর্মী এম. শাহবান রশীদ চৌধুরী, ব্যবসায়ী নাজমুল বারী সোহেল ও জাবেদ মাহবুব, ইউনাইটেড রয়েল্স ক্লাবের বোর্ড সদস্য জাহেদ রহমান, সিনিয়র সহ-সভাপতি প্রভাষক মোঃ নজরুল ইসলাম, সহ-সভাপতি প্রভাষক খালেদ আহমদ, সাধারণ সম্পাদক এম আই মুর্শেদ, সহ-সাধারন সম্পাদক মিঠুন চক্রবর্তী, সাংগঠনিক সম্পাদক মোঃ কামরুল ইসলাম, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক কামরান আহমদ প্রমুখ।
মানববন্ধনে কুলাউড়া হাসপাতালের নানা অনিয়ম অব্যবস্থাপনা ও দূর্নীতির প্রতিবাদে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বরাবর স্মারকলিপি পাঠ করে শোনান আন্দোলনের অন্যতম উদ্যোক্তা ‘আমরা কুলাউড়াবাসী’র যুগ্ম আহবায়ক অধ্যাপক সিপার উদ্দিন আহমদ। আমরা কুলাউড়াবাসীর কর্তৃক আয়োজিত মানববন্ধনে একাত্মতা পোষণ করে কুলাউড়া ডিগ্রি কলেজ, ইয়াকুব তাজুল মহিলা বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ, লংলা আধুনিক ডিগ্রি কলেজ, ভাটেরা স্কুল এন্ড কলেজ, নবীন চন্দ্র মডেল উচ্চ বিদ্যালয়, কুলাউড়া ব্যবসায়ী কল্যাণ সমিতি, কুলাউড়া প্রেসক্লাব, ইউনাইটেড রয়েল্স ক্লাব, জাসদ ছাত্রলীগ কুলাউড়া, সিপিএ কুলাউড়া, কুলাউড়া পৌর তালামীয, কুলাউড়া মুক্ত স্কাউট গ্রুপ, নিরাপদ স্বাস্থ্য রক্ষা আন্দোলন, প্রথম আলো বন্ধুসভা কুলাউড়া, এপেক্স ক্লাব অব মৌলভীবাজার, আলোর যাত্রা ক্লাব কুলাউড়া, অগ্নিবীণা ক্লাব কুলাউড়া, লতিফিয়া হিলফুল ফুজুল ফাউন্ডেশন, আশেকানে ফুলতলী, ঐক্যবদ্ধ কর্মধাবাসী, সবুজ কল্যাণ যুব কল্যাণ সংস্থাসহ অসংখ্য সামাজিক ও রাজনৈতিক সংগঠন নেতৃবৃন্দ ও বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্টানের ছাত্র-ছাত্রী ও শিক্ষকবৃন্দ।
স্মারকলিপিতে ৩ আগস্ট মর্মান্তিক সড়ক দূর্ঘটনায় নিহত অধ্যাপক আশুতোষ দেব ও আহত অফিস সহকারি ফজলুল করিম ফজিরের চিকিৎসায় অবহেলার কারণে উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা (ইউএইচও) ডাঃ মিজানুর রহমান, আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) ডাঃ সাঈদ এনামসহ সংশ্লিষ্টদের দায়ী করা হয়। অভিযোগপত্রে উল্লেখ করা হয় কুলাউড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স কর্তৃপক্ষের সীমাহীন অনিয়ম অব্যবস্থাপনা ও দূর্ণীতির কারণে চিকিৎসা খাতে সরকার প্রদত্ত সুযোগ সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন এই অঞ্চলের স্বাস্থ্যসেবা প্রত্যাশীরা। হাসপাতালের অব্যবস্থাপনা এমন পর্যায়ে পৌছেছে যে, উপজেলা সদরের একটি সরকারি হাসপাতাল রোগীদেরকে যথাযথ প্রাথমিক চিকিৎসাটুকু (First Aid) দিতেও ব্যর্থ। সর্বজন কথিত আছে যে, কুলাউড়া হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে গেলেই রেফার্ড করে দেয়া হয়। পর্যাপ্ত সুযোগ সুবিধা থাকা স্বত্ত্বেও কোন দায় দায়িত্ব না নিয়ে শুধু রেফার্ড করাটা হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের রেওয়াজ হয়ে দাড়িয়েছে। তাও রেফার্ড করার পূর্বে প্রয়োজনীয় প্রাথমিক চিকিৎসাটি দিতে পারেনা। যুগযুগ ধরে অচল হয়ে পড়ে থাকা এক্স-রে ও ইসিজি মেশিন সচল হয়না। বিদ্যুৎ চলে গেলে জেনারেটর চালানো হয় না। হাসপাতালের আউটডোর, ইমারজেন্সি থেকে কোন সরকারি ঔষধ রোগীরা পায় না। এক সময় অপারেশন থিয়েটারে সিজার হলেও দীর্ঘদিন থেকে তা বন্ধ রয়েছে। প্যাথলজিক্যাল কোন পরীক্ষা হাসপাতালে হয় না। হাসপাতালের কর্মকর্তা কর্মচারীরা রোগীদের সাথে করেন অশোভন আচরণ। ভর্তিকৃত রোগীদের চিকিৎসায় বরাদ্দ সার্জিক্যাল মেটেরিয়ালস কোন দিন স্টোর থেকে বের হয় না। হাসপাতালে বিশুদ্ধ খাবার পানি নেই। টেপের জীবাণুযুক্ত পানি খেয়ে রোগীরা আরও অসুস্থ হন। হাসপাতালের সর্বত্র নোংরা পরিবেশ বিরাজমান। বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের সংকট, যারা আছেন তারা দুপুর পৌনে ১টা হতে না হতে হাসপাতাল থেকে লাপাত্তা হয়ে যান। বিশেষজ্ঞ ডাক্তারদের কেউ কেউ সিলেট বা অন্য জায়গা থেকে সপ্তাহে ২ বা ৩ দিন আসেন। তাও আবার তাড়াহুড়ো করে ট্রেন ধরতে গিয়ে কর্মদিনের অর্ধেক সময়ও হাসপাতালে থাকেন না। ডাক্তার ওয়ার্ডে রাউন্ড দেওয়ার নির্ধারিত কোন সময় নেই, যখন বা যেদিন ইচ্ছা হয় তখন রাউন্ডে যান। আয়া দিয়ে প্রেসক্রিপশন লেখানো হয়। সেকমো’র পরিবর্তে ওয়ার্ডবয়রা রোগীদের চিকিৎসা সেবা দেন। নিম্নমানের খাবার পরিবেশন করা হয় তাও আবার অপর্যাপ্ত। নানা কুটকৌশলে হাসপাতালের এম্বুলেন্সটি বিভিন্ন সময়ে অচল করে রাখা হয়। প্রাইভেট এম্বুলেন্সগুলো হাসপাতাল ক্যাম্পাসের ভেতরে থাকে। হাসপাতালের আবাসিক মেডিক্যাল অফিসার সার্বক্ষণিক হাসপাতালে থাকার কথা থাকলেও তাকে হাসপাতালে পাওয়া যায় না। উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা (ইউএইচও) ও আবাসিক মেডিক্যাল অফিসারের দায়সারা, অসংলগ্ন, অপ্রকৃতস্থ আচরণের কারণে হসপিটালের ভেতরে চরম অশান্তি, বিশৃঙ্খলা অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। সর্বোপরি ৩ আগস্টের একটি অমানবিক অসভ্য আচরণ সকল অনিয়মকে হার মানিয়েছে। ঐদিন মর্মান্তিক সড়ক দূর্ঘটনায় ভাটেরা স্কুল এন্ড কলেজের সহকারি অধ্যাপক আশুতোষ দেব ও অফিস সহকারি ফজলুল করিম ফজির আহত হয়ে কুলাউড়া হাসপাতালে নেওয়ার পর তাদেরকে বিনা চিকিৎসায় ২০ মিনিট হাসপাতালের বারান্দায় ফেলে রাখা হয়। তাদেরকে আইবি ফ্লুইডসহ তাৎক্ষনিক জরুরী চিকিৎসাতো দেয়া হয়নি উপরোন্তু তাদের ব্যান্ডেজটিও দেয়া হয়েছিল কাপড়ের উপরে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বরাবর প্রেরিত স্মারকলিপির অনুলিপি স্থানীয় সংসদ সদস্য, উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান, ইউএনও ও স্বাস্থ্য বিভাগের অন্যান্য দপ্তরে প্রদান করা হয়। প্রায় দুই ঘণ্টাব্যাপী এই মানববন্ধনে কুলাউড়ার বিভিন্ন পর্যায়ের জনপ্রতিনিধি, রাজনৈতিক-পেশাজীবি-সামাজিক-সাংস্কৃতিক-ব্যবসায়ী-সাংবাদিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দ, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রধানগণ, ছাত্রছাত্রীসহ উপজেলার বিভিন্ন স্থান থেকে সহস্রাধিক ভূক্তভোগীরা অংশ গ্রহণ করেন।
মন্তব্য করুন