কোনাগাঁও পারিবারিক কবরস্থানে দাফন হল জঙ্গি রিপনের লাশ

April 13, 2017,

ইমাদ উদ দীন॥ সিলেট কেন্দ্রীয় কারাগারে জঙ্গি দেলোয়ার হোসেন রিপনের ফাঁসি ১২ এপ্রিল বুধবার রাত ১০টা ১ মিনিটে কার্যকরের পর ১০টা ৪০ মিনিটে সামনে পেছনে কড়া পুলিশি প্রহরায় তার মরদেহবাহী অ্যাম্বুলেন্স কুলাউড়ার কোনাগাঁও গ্রামের বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা হয়। রাত সাড়ে ১২ টার দিকে মৌলভীবাজারের কুলাউড়া উপজেলার ব্রাহ্মণবাজার ইউনিয়নের কোনাগাঁও গ্রামের বাড়িতে মরদেহ পৌঁছায়। পরে রাত ১ট ৪০ মিঃ দিকে পুলিশ পহারায় কোনাগাঁও ঈদগাহ ময়দানে যানাজার নামাজের পর বাড়ির কাছে কোনাগাঁও জামে মসজিদের পাশে পারিবারিক কবরস্থানে তাকে দাফন করা হয়। যানাজার নামাজের ইমামতি করেন কোনাগাঁও জামে মসজিদের খতিব মাওলানা মো: ইব্রাহিম। রাতেই মুঠোফোনে দাফন ও কবরস্তের বিষয়টি নিশ্চিত করেন কুলাউড়া থানার ওসি শামসুদ্দোহা।
বুধবার রাত ৮টা থেকে রিপনের বাড়ির আশপাশ ২ কিলোমিটার এলাকায় কাউকে যেতে দেয়নি পুলিশ। খবর সংগ্রহ করতে আসা গণমাধ্যম কর্মীরাও ২ কিলোমিটার দূরে আটকা পড়েন পুলিশি বাধাঁয়। পরে ভোর সাড়ে ৪টার দিকে গণমাধ্যম কর্মীদের কবর ও বাড়িতে যেতে দেয় পুলিশ। জানা যায় রিপন ছিলো ৪ ভাই ১ বোনের মধ্যে সবার বড়। তার বাবা মো: ইউসুফ আলী, ছিলেন সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের অবসর প্রাপ্ত শিক্ষক আর মাতা শেলি বেগম ছিলেন গৃহিণী। কুলাউড়া থানার ওসি শামসুজ্জোহা পিপিএম জানান, সিলেট কেন্দ্রীয় কারাগারে ফাঁসির দ-প্রাপ্ত আসামি হরকাতুল জিহাদ (হুজি) অন্যতম সদস্য জঙ্গি দেলোয়ার হোসেন রিপনের রাষ্ট্রপতির নিকট প্রাণ ভিক্ষার আবেদনটি নাকচ হওয়ার পর কুলাউড়ার বাড়িতে পুলিশের নিরাপত্তা জোরদার করা হয়। বাড়িসহ আশপাশের এলাকায় বাড়ানো হয় পুলিশি নিরাপত্তা।
বুধবার ১২ এপ্রিল বিকেল থেকে রিপনের ৩৮ বিঘার বিশাল বাড়িতে ছিল সুনসান নীরবতা। ওই দিন বিকালে বাড়িতে পাওয়া যায়নি পরিবারের দায়িত্বশীল কাউকে। ওই দিন দুপুরে পরিবারের সবাই রিপনের সাথে শেষ সাক্ষাতের জন্য ছুটে যান সিলেট কেন্দ্রীয় কারাগারে। গেল ২দিন আগে থেকেই বাড়িতে নিরাপত্তাজনিত কারণে মোতায়েন ছিল পুলিশ। এখনো এলাকা জুড়ে বিরাজ করছে শুনসান নীরবতা। পুলিশি তৎপরতার কারণে ভয়ে আশপাশের কেউ বাড়ি থেকে বের হচ্ছেন না মুখও খোলছেন না। লাশ দাফনের পর রাতে তার পরিবারের সদস্যরা এবিষয়ে সংবাদ কর্মীদের সাথে কথা বলেননি। রিপনের সহপাঠীরা জানান সে ছিল শান্ত ও ভদ্র স্বভাবের। ছিলো অত্যন্ত মেধাবী। দেলোয়ার হোসেন রিপন ১৯৯৬ সালে স্থানীয় ব্রাক্ষণবাজার জালালাবাদ উচ্চ বিদ্যালয় থেকে কৃতিত্বের সাথে এসএসসি পাশ করে। সিলেট মদনমোহন বিশ্ববিদ্যালয় কলেজে উচ্চ মাধ্যমিকে ভর্তি হন। সেখানেও সে কৃতিত্বের সাথে শিক্ষাজীবন চালিয়ে যাচ্ছিল হঠাৎ করে বদলে যায় সে। সিলেট যাওয়ার পর থেকে স্থানীয় সহপাঠীদের সাথে তার দূরত্ব সৃষ্টি হয়। তাদের ধারণা তখন থেকে সে তৎকালীন জেএমবি নেতা শায়খ আব্দুর রহমান ওরফে বাংলা ভাই ও মুফতি হান্নানের কানেকশনে হয়ে উঠে দুদুর্ষ জঙ্গি।
বৃহস্পতিবার ভোর রাতে যানাজার পর স্থানীয় অনেকেই জানান, কেন ভালো ছেলেটি হঠাৎ জঙ্গি হয়ে গেল তা তাদের জানা নেই। তারা বলেন রিপন অপরাধি হওয়ায় তার শাস্তি হয়েছে। আমরা মনে করি তার এই চূড়ান্ত শাস্তির মাধ্যমে পুরো এলাকাবাসী কলঙ্কমুক্ত হয়েছে।
উল্লেখ্য, সিলেটে শাহজালাল (রহ.) এর মাজারের প্রধান ফটকে ২০০৪ সালের ২১ মে তৎকালীন ব্রিটিশ হাইকমিশনার আনোয়ার চৌধুরীর উপর গ্রেনেড হামলা হয়। হামলায় তিন জন নিহত ও আহত হন ৭০ জন। এ ঘটনার মামলায় ২০০৮ সালের ২৩ ডিসেম্বর মুফতি হান্নান, শরীফ শাহেদুল ওরফে বিপুল, দেলওয়ার ওরফে রিপনকে মৃত্যুদ- এবং মহিবুল্লাহ ওরফে মফিজুর রহমান ও আবু জান্দালকে যাবজ্জীবন দ- দেন সিলেট দ্রুত বিচার আদালত। বুধবার রাতে কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগারে আব্দুল হান্নান ও বিপুলের এবং সিলেট কেন্দ্রীয় কারাগারে রিপনের ফাঁসি কার্যকর করা হয়েছে।

সংবাদটি শেয়ার করতে নিচের “আপনার প্রিয় শেয়ার বাটনটিতে ক্লিক করুন”

মন্তব্য করুন

Social Media Auto Publish Powered By : XYZScripts.com